টেকনাফে স্ত্রী”র বেতনের টাকা হাতিয়ে নিতে মারধর করলো স্বামী
সিরাজগঞ্জের বাসিন্দা চট্টগ্রাম হালিশহরে বসবাসকারী ৩৫ বছর বয়সী এই ডক্টর এক সন্তানের জনক। তিনি বিবিএ পাশ করা প্রথম স্ত্রী রেখে ২৬ বছর বয়সী এক নার্সকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে বিয়ে করেন।
২০২৩ সালের ১২ মে এক মৌলভীর মাধ্যমে ইসলামী শরিয়া অনুযায়ী বিয়ে পড়ে ডক্টরস কোয়ার্টার আসিফ আলভীর বাসায় তুলেন।
গত ১৬ জুলাই ১৫ লাখ টাকার দেনমোহর নির্ধারণ করে কক্সবাজার শহরে গিয়ে নোটারী ও কাজি অফিসে গিয়ে কাবিননামা সম্পাদন করেন।
এর মধ্যে নার্স হিসেবে স্কলারশিপ নিয়ে বিদেশ যাওয়ার পথ রোধ করে এবং হাসপাতালের চাকরিও শেষ হয়ে যায়। তারপর একটি এনজিও তে চাকরি নেন স্ত্রী মুন (ছদ্ধনাম)। বিয়ের কারণে স্বামী চাকরি করতে দেন নি। জুলাই মাসে ওই চাকরি ছাড়তে বাধ্য হন।
তারা স্বামী স্ত্রী হিসেবে টেকনফ হাসপাতালের ডক্টরস কোয়ার্টার অবস্থানকালিন সময়ে তর্কাতর্কি শুরু হয় স্ত্রীর বেতনের টাকা ভোগ করা নিয়ে। চিকিৎসক স্বামী চায় স্ত্রীর বেতনের টাকা নিজে ভোগ করতে। নার্স স্ত্রী চায় তার অর্জিত টাকা নিজে রাখতে।
এ প্রসঙ্গে স্ত্রী মুন আকতার বলেন,” তার মা ক্যান্সার আক্রান্ত। চিকিৎসার জন্য মায়ের কাছে টাকা পাঠানো লাগে। তা নিয়ে বারবার ঝগড়া করে চিকিৎসক স্বামী। তাছাড়া বিয়ের পরে জানানো হয় তার আরো এক স্ত্রী ও সন্তান রয়েছে। অথচ সম্পর্ক তৈরি করার সময় তিনি অবিবাহিত বলে জানিয়ে ছিলেন। এবং সেই ভাবেই কাবিননামা সম্পাদক করেন।
গত ৩১ জুলাই টেকনাফ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের হাসপাতালের ডক্টরস কোয়াটারে সকালে স্ত্রীকে মারধর করে রুমে তালা লাগিয়ে সটকে পড়ে আসিফ আলভী। চারদিন পর ৩ আগস্ট বিকেলে তালা ভেঙ্গে তাকে রুম থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তখনও স্বামী হাসপাতালের বাহিরে থেকে মেসেজ বা বিভিন্ন মাধ্যমে স্ত্রীকে চিকিৎসার খবর তো দূরের কথা টিকেট কেটে একালা ছাড়ার পরামর্শ দেন। এমন পরিস্থিতে মুন আকতার ৮ আগস্ট হাসপাতাল থেকে রিলিজ সিলিপ নিয়ে ঢাকায় এক আন্টির বাড়িতে চলে যান। হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) তিন হাজার টাকা গাড়ি ভাড়ার ব্যবস্থা করে দেন।
এ ঘটনায় মুন আকতার বাদী হয়ে টেকনাফ মডেল থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন।
তিনি জানান, চাকুরীর সুবাধে অভিযুক্ত চিকিৎসক ডাঃ আসিফ আলভীর সাথে তার পরিচয় হয়। পরিচয়ের এক পর্যায়ে টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত ডাঃ আসিফ আলভীর সাথে ইসলামী শরীয়াহ মোতাবেক ১৫ লাখ টাকা দেনমোহর ধার্য্য করে চলতি বছর ১৬ জুলায় সরকারী নেকাহ্ রেজিষ্ট্রার কার্যালয় কক্সবাজারে কাবিন মূলে তাদের বিবাহ সম্পন্ন হয়। (যার রেজিং নং- ১৫২/২৩, ভলিয়ম নং- ০২/২৩, পৃষ্টা নং-৫২/২৩।)
বিবাহের পর তার স্বামী বিভিন্ন সময় চাহিদা মত টাকা চায়তো তার কাছে। এরপরেও বিভিন্ন সময় তার বাবার বাড়ি থেকে যৌতুকের টাকা আনার জন্য চাপ দেয়। যৌতুকের টাকা আনতে অস্বীকৃতি জানালে ডাক্তার স্বামী তাকে পিটিয়ে হত্যার চেষ্টা করে এবং তার সাথে সংসার করবেনা, প্রাণে হত্যা এবং তালাক দিয়ে দেবে বলে হুমকি দেয় । এরই ধারাবাহিকতায় গত ৩১ জুলাই সকাল সাড়ে ৬ টার দিকে তাকে শারীরিক, মানসিক নির্যাতন সহ শ্বাসরোধ করে হত্যার চেষ্টা করে, তখন অজ্ঞান হয়ে পড়েন । জ্ঞান ফেরার পর দেখে বাসা তালাবদ্ধ এবং স্বামী ডা. আসিফ আলভি বাসায় নেই এবং সকল প্রকার যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়।
একপর্যায়ে গত ৩ আগস্টে হোয়াটসআপে কল দিয়ে স্ত্রী মিথিলাকে ডক্টরস কোয়াটারের বাসা ছেড়ে অন্যত্রে চলে যাওয়ার জন্য বলে। পরে অসুস্থ অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে চিকিৎসা দেয়া হয়।
একটি নির্ভরশীল সূত্রমতে স্ত্রীকে হত্যা চেষ্টা ও নির্যাতনের পর থেকেই ডাক্তার স্বামী কর্মস্থল থেকে অনেকদিন অনুপস্থিত ছিল । এ সময় হাসপাতাল কতৃপক্ষ থেকে ডা. আসিফ আলভীকে কর্মস্থলে উপস্থিত হয়ে বিষয়টি সুরাহার জন্য বলা হলে তিনি প্রয়োজনে চাকরি ছাড়বেন তারপরও স্ত্রী টেকনাফ ত্যাগ না করা পর্যন্ত আসবেন না।
পরবর্তীতে স্ত্রীকে হাসপাতাল কতৃপক্ষ ও ডা. আসিফ আলভীর সহকারী আয়াস রুম থেকে প্রয়োজনীয় কাপড় চোপড় বের করে দেয়।যাতে টেকনাফ ত্যাগ করেন মুন। তবে ডাক্তার আসিফ আলভীর সহকারী আয়াস তার বস ও বসের স্ত্রীর কাবিননামার প্রথম স্বাক্ষী হলেও কেন দুজনের মধ্যে ঝগড়াঝাটি হলো তার বিষয়ে অবগত নন বলে জানান।
এ বিষয়ে ডা. আসিফ আলভী দ্বিতীয় স্ত্রীকে বেতন বা যৌতুকের জন্য মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন,” বিভিন্ন কারণে আমি ডিভোর্স লেটার পাঠিয়েছি। প্রাপ্য দেনমোহর পরিশোধ করার জন্য প্রস্তুত আছি। এই সংসার আর করবো না।”
নিজকে অবিবাহিত বলে বিয়ে করবেন আর তালাক দিবেন এমন অনৈতিক কাজ কেন করছেন এমন প্রশ্নে তিনি জানান ” দ্বিতীয় স্ত্রীকে কাছে পাওয়ার কৌশল হিসেবে এমন তথ্য কাবিননামায় লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। “
টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মোহাম্মদ জুবায়ের সৈয়দ বলেন,” বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ”
এ প্রসঙ্গে টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবুল কাশেম বলেন, অনেকেই অনেকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে পারে। প্রতিবেদকের সঙ্গে সাক্ষাতে কথা বলবে বলে আর কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।