পার্বত্য তিন জেলায় ‘নৌকার’ মনোনয়ন চুড়ান্ত : পুরনোতেই থাকলেন শেখ হাসিনা

পার্বত্যনিউজ রিপোর্ট:

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে পার্বত্য তিন জেলায় আওয়ামীলীগের দলীয় মনোনয়ন প্রাপ্তির লড়াইয়ে নিজেদের বিজয়ী করে আবারো দলীয় মনোনয়ন ভাগিয়ে নিলেন পুরনোরাই। আওয়ামীলীগ দলীয় সুত্রে তাদেরকে মনোনয়ন প্রদানের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। ফলে রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়িতের ‘নৌকার’ মাঝি বদল হচ্ছে না। পুরনোতেই থেকে গেলেন দলীয় প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ দলের হাইকমান্ড। ফলে অপরাপর মনোনয়ন প্রত্যাশীদের আবারো আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার জন্য।

জানা গেছে, দলীয় প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে দেশের ১২১টি সংসদীয় আসনের প্রার্থী চুড়ান্ত করে দলীয় মনোনয়ন প্রদান সংক্রান্ত চিঠিতে স্বাক্ষর প্রদান করেছেন। এর মধ্যে তিন পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান সংসদীয় আসনও রয়েছে। খুব বড়ধরণের কোনো ঘটনা ছাড়া এ তালিকা পরিবর্তনের কোনো সম্ভাবনা নেই। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ একটি সুত্রে জানা গেছে, মনোনয়ন দাখিলে ইসি কর্তৃক বেঁধে দেয়া তফসিলে সময় স্বল্পতার কারণে এ বছর দলের সংসদীয় বোর্ডে কোন মনোনয়ন প্রত্যাশীকে না ডাকার সিদ্ধান্ত রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগের নিজস্ব জরিপ, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার মাঠ জরিপের উপর ভিত্তি করে এ মনোনয়ন চুড়ান্ত করা হয়েছে। এজন্য সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাথে মতবিনিময়কালে যে বা যারাই মনোনয়ন পাবে তাদের পক্ষে সকলকে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন। আর তাই দলের দায়িত্ব প্রাপ্তদের সাথে কথা বলেই দলীয় প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী মনোনয়ন প্রাপ্তদের তালিকা চুড়ান্ত করছেন।

এদিকে আওয়ামীলীগের হাইকমান্ডের এমন সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে আবারো ২৯৯নং রাঙ্গামাটিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী দীপঙ্কর তালুকদার, ৩০০নং বান্দরবানে কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বীর বাহাদুর এবং ২৯৮নং খাগড়াছড়িতে পার্বত্য চট্টগ্রাম আ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু ও ভারত প্রত্যাগত শরনার্থী বিষয়ক টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান যতীন্দ্র লাল ত্রিপুরা দলীয় প্রার্থী হিসেবে আভির্ভুত হচ্ছেন।

জানা গেছে, দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ শেষেই রাঙ্গামাটিতে ‘দাদা’ খ্যাত দীপঙ্কর তালুকদার একক প্রার্থী হিসেবে নিজের অবস্থান ধরে রাখতে সক্ষম হলেও অন্য পার্বত্য চট্টগ্রামের অন্য দুই সংসদীয় আসনে ছিল পুরনোদের বিরুদ্ধে একাধিক প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী। আর তখনই নিজের মনোনয়ন প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেন রাঙ্গামাটি আওয়ামীলীগে দাদা খ্যাত দীপঙ্কর তালুকদার। বান্দরবান সংসদীয় আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়েন চারবারের সংসদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বীর বাহাদুর। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বীর বাহাদুরের মুখোমুখি হন জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি প্রসন্ন কান্তি তঞ্চঙ্গ্যা। দুজনের পক্ষেই দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা হয়। ফলে নিজ দলের সভাপতির চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েন বান্দরবানের এ নেতা। বীর বাহাদুরের বিরুদ্ধে জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি প্রসন্ন কান্তি তঞ্চঙ্গ্যা‘র দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের বিষয়টি জেলা আওয়ামী শিবিরে তোলপাড় সৃষ্টি করে। শেষ পর্যন্ত দলীয় প্রধানের স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে টানা চারবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য বীর বাহাদুর পঞ্চমবারের মতো নিজের পক্ষে দলীয় মনোনয়ন জয় করে নিতে সক্ষম হলেন।

অন্যদিকে খাগড়াছড়িতে দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু ও ভারত প্রত্যাগত শরণার্থী বিষয়ক টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান যতীন্দ্র লাল ত্রিপুরাসহ জেলা আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী আট শীর্ষ নেতা। খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা ও জেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নব বিক্রম কিশোর ত্রিপরার বড় ভাই রণবিক্রম ত্রিপুরা’র মতো প্রভাবশালী প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদেরকে পেছনে ফেলে নিজের মনোনয়ন নিশ্চিত করলেন যতীন্দ্র লাল ত্রিপুরা।

গত ১১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রীর খাগড়াছড়ি সফরের সময় জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরার পক্ষে ব্যাপক প্রচারণার পাশাপাশি বর্তমান সাংসদ যতীন্দ্র লাল ত্রিপুরার খাগড়াছড়িতে অনুপুস্থিতির কারণে অনেকের কাছে কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরার মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়টি অনেকেই নিশ্চিত ধরে নিলেও শেষ পর্যন্ত সবকিছুকে মিথ্যা প্রমাণিত করে দ্বিতীয়বারের মতো দলীয় মনোনয়ন ভাগিয়ে নিলেন তৃণমুল নেতাকর্মীদের কাছে জনবিচ্ছিন্ন হিসেবে পরিচিত পার্বত্য চট্টগ্রাম আ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু ও ভারত প্রত্যাগত শরনার্থী বিষয়ক টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান যতীন্দ্র লাল ত্রিপুরা।

পার্বত্য তিন জেলা রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি সংসদীয় আসনে শেষ পর্যন্ত দলীয় মনোনয়ন জয় করে নিলেন দলের বর্তমান তিন সংসদ সদস্য যথাক্রমে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রী দীপঙ্কর তালুকদার, কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বীর বাহাদুর এবং যতীন্দ্র লাল ত্রিপুরা। তাদের হাতে আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই হয়তো পৌছে যাবে দলীয় মনোয়ন প্রাপ্তির চিঠি। সব জল্পনা কল্পনা ছাপিয়ে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা আবারো তাদের হাতেই তুলে দেবেন দলীয় প্রতীক ‘নৌকা’। তবে তারা আওয়ামীলীগ দলীয় প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনী মাঠে তারা একক প্রার্থী হিসেবে থাকবেন নাকি নিজ দলের বিদ্রোহী কোন প্রার্থীর মুখোমুখি হবেন তা জানার জন্য দলীয় নেতাকর্মীসহ সাধারন জনগণকে অপেক্ষা করতে হবে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ২ ডিসেম্বর পর্যন্ত। তবে নির্বাচনে প্রধান বিরোধী দল অংশ না নিলে আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের কাউকে কাউকে নিজ দলের সতন্ত্র প্রার্থীদের যে মোকাবেলা করতে হবে এ আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যায় না।

 

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: আওয়ামী লীগ, নির্বাচন, নৌকা
Facebook Comment

2 Replies to “পার্বত্য তিন জেলায় ‘নৌকার’ মনোনয়ন চুড়ান্ত : পুরনোতেই থাকলেন শেখ হাসিনা”

  1. Jotndralal Tripura jodi nirbacane jai tobe 100 % nisccit diye bolte pari Khagrachari te Aomilig here jabe karon Khagrachari te tini take vot dewar moto kono kaj koreni.Tar cheye Kujendralal tripura tar cheye paharider kache onek nirbhor joggo pratti.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন