মানিকছড়িতে ঝামেলা ছাড়াই গরু বাজারজাত করতে পেরে স্বস্তিতে খামারিরা
বৈশ্বিক মহামারি করোনাকালীন সময়ে গো-খামারের ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার স্বপ্ন নিয়ে খাগড়াছড়ি জেলার মানিকছড়ি উপজেলায় ছোট-বড় প্রায় ৩৬টি গো-খামারে প্রায় শত কোটি টাকা পুঁজি বিনিয়োগ করেছিল খামারিরা।
কিন্তু হঠাৎ করে গো-খাদ্যের বাজার মূল্য আকাশচুম্বী হওয়ায় আসন্ন কোরবানি ঘিরে গরু মোটাতাজা করণে ব্যয় বেড়ে যায়। ফলে ন্যায্যমূল্য গরু বিক্রি নিয়ে যে সংশয় ও হতাশা ছিলো খামারিদের মধ্যে তা অবশেষে গরু বাজারজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে। কোন ঝামেলা ছাড়াই কম-বেশি লাভেই গরু বিক্রি করতে পেরে স্বস্তি প্রকাশ করেছে এই সব খামারিরা।
ঈদুল আজহার চাঁদ উঠার পর উপজেলার মানিকছড়ি ও তিনটহরী বাজারে দুইটি করে চারটি বড় কোরবানির পশুর হাট বসে। এতে শুরুতে সমতলের পাইকারেরা আশানুরূপভাবে গরুর দাম না বলাই শংকিত হয়ে পড়ে স্থানীয় খামারিরা। কিন্তু শেষ মুর্হূতে গত ২ জুলাই মানিকছড়ি ও ৬ জুলাই তিনটহরী বাজারে প্রচুর পরিমাণে গরু উঠে। ছোট এবং মাঝারি গরু বেশ ভালো দামেই বিক্রি করতে পেরেছে খামারিবা। বড় গরু বিক্রিতে বেপারীরা আশানুরূপ দাম না বলাই কম লাভেই বিক্রি করেছেন তারা।
উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. সূচয়ণ চৌধুরী বলেন, করোনা পূর্ববর্তী সময়ে উপজেলায় বড় ও মাঝাবি গো-খামার ছিল প্রায় অর্ধশত। করোনার ধকলে অনেকে পুঁজি হারিয়ে তা ৩০ থেকে ৩২ নেমে এসেছে! এরই মাঝে বাজারে গো-খাদ্যের মূল্য আকাশচুম্বী হওয়ায় কোরবানিব গরু মোটাতাজায় বেশি অর্থ ব্যয় করতে গিয়ে পুঁজি ফিরে পাওয়া নিয়ে সংশয় ও হতাশায় পড়েছিল খামারিরা।
তুলাবিল এগ্রো ফার্মের স্বত্বাধিকারী ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মো. আবদুল কাদের বলেন, সব সংশয় ও হতাশা কাটিয়ে আমি ৩০টি গরুর মধ্যে ২৭টি ভালো দামেই বিক্রি করতে পেরেছি। যে ৩টি রয়েছে সেগুলো নেওয়ার জন্য বেপারীরা যোগাযোগ করছে। বিক্রি করতে না পারলেও আগামী বছরের জন্য প্রস্তুত করবো।
মহামুনির একজন সফল উদ্যোক্তা মো. ফরিদ মিয়া বলেন, আমার পারিবারিক ছোট একটি খামারে বড় ও ছোট মিলিয়ে ১০ থেকে ১২টি গরু লালন পালন করেছিলাম। ছোট- মাঝারিগুলো বিক্রি করে স্বস্তি পেয়েছি। বড় দুইটি ২ লাখ ৬০ হাজার টাকা বিক্রি করেছি। এতে লাভ কম হয়েছে, তবে লোকসান হয়নি।
তিনটহরী গুচ্ছগ্রামের মাঝারি খামারি মো. জুয়েল জানান, আমার খামারে মাঝার সাইজের ২৩টি ষাঁড় ও বাছুর সম্পূর্ণ নির্ভেজাল খাবারে মোটাতাজা করেছি। শেষ সময়ে এসে মোটামুটি কম লাভে হলেও গরু বাজারজাত সম্ভব হয়েছে।
উপজেলার সবচেয়ে বড় একে এগ্রো ফার্মের ম্যানাজার মো.ইমরান হোসেন বলেন, আমাদের ফার্মে কোরবানি উপলক্ষে প্রাকৃতিক খাবার সাইলেজ, সবুজ ঘাস ও সামান্য পরিমাণে ভূষিতে গরু মোটাতাজা করা হয়। ফলে এসব গরুর মাংস সুস্বাদু। যার ফলে চট্টগ্রাম শহরের গ্রাহকেরা অনলাইনে অর্ডার করে গরু কিনে নেয়। এবারও তাই হয়েছে। লাইফ ওয়েটে ৪৮০ কেজিতে এখন পর্যন্ত ৯৫% গরু বিক্রি হয়ে গেছে। শুক্রবার ও শনিবারের মধ্যে আশা করি বেঁচা শেষ হবে ।
এ বছর উপজেলার সবচেয়ে বড় গরু বাজার তিনটহরী গরু বাজার সম্পর্কে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, গত ৬ জুলাই এক বাজারে শতকরা গড়ে আড়াই টাকা হাসিল হিসেবে সাড়ে ৬ লাখ টাকা হাসিল আদায় হয়েছে।