পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে ব্যাপকভাবে রাষ্ট্রবিরোধী ও সাম্প্রদায়িক অপপ্রচার চালানো হচ্ছে সামাজিক গণমাধ্যমে
পার্বত্য চট্টগ্রাম সংশ্লিষ্ট অভিজ্ঞমহলের মতে, অচিরেই এ প্রবণতা রোধ করতে না পারলে পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ী সম্প্রদায়ের আগামী প্রজন্ম গড়ে উঠবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রতি আনুগত্যহীন ও প্রচণ্ড সাম্প্রদায়িক মনোভাবাপন্ন হয়ে
পার্বত্যনিউজ রিপোর্ট :
হঠাৎ করেই ওয়েবসাইট, ব্লগ ও সামাজিক গণমাধ্যমগুলোতে পাহাড়ী সন্ত্রাসীদের বাংলাদেশ, বাঙালী, সেনাবাহিনী ও সরকার বিরোধী, বিদ্বেষমূলক, হিংসাপরায়ণ, সাম্প্রদায়িক ও রাষ্ট্রবিরোধী প্রচারণা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে পার্বত্য চট্টগ্রামে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ও সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টির ঝুঁকি সৃষ্টি হয়েছে। এতে করে পার্বত্যবাসী বিশেষ করে পাহাড়ী জনগোষ্ঠীর মধ্যে বাংলাদেশ, বাঙালী ও সরকার বিরোধী মনোভাব সৃষ্টি হচ্ছে বলে অভিজ্ঞমহলের মত।
এর সর্বশেষ প্রমাণ গত ২১ ফেব্রুয়ারি মাটিরাঙ্গায় অপহৃত এক বাঙালী যুবকের লাশ উদ্ধারের পর দুপুর থেকে একাধিক ফেসবুক আইডি ব্যবহার করে একটি অস্পষ্ট পুরাতন ছবি, সেনাবাহিনী ও বাঙালিদের জড়িয়ে নাম সর্বস্ব কিছু নিউজ পোর্টালে প্রকাশিত সংবাদের লিংক শেয়ার করা হয়। সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক এসব ছবি ও নিউজের লিংকগুলো এক আইডি থেকে অন্য আইডিতে ছড়িয়ে পড়ে। এভাবে একজনের ওয়াল থেকে অন্যজনের ওয়াল, ফেসবুক পেইজ ও গ্রুপে ভাসতে থাকে এসব ছবি ও সংবাদগুলো।
এছাড়া, অন্য এক ফেসবুক আইডি থেকে ঘটনার স্থান, সময় গোপন রেখে উস্কানিমূলক একটি স্ট্যাটাস দেয়। ওই আইডির উস্কানিমূলক স্ট্যাটাসটি অন্যান্য ব্যবহারকারীরা লাইক ও শেয়ার দিয়ে ছড়ানোর চেষ্টা করে। এতে করে পার্বত্যাঞ্চলে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। তাদের উস্কানিতে প্রলুবদ্ধ হয়ে অনেক সাধারণ পাহাড়ীও এসব পোস্ট শেয়ার করে কিংবা নিজেদের ওয়ালে নানা অসত্য ঘটনা লিখে পরিস্থিতি ঘোলা করার চেষ্টা করে।
ওই সকল স্ট্যাটাসে বাঙালী ও সেনাবাহিনী পাহাড়ীদের গাড়ি থেকে নামিয়ে মারধোর করছে, গুলি করছে, কুপিয়ে জখম করছে দাবি করে পাহাড়ীদের সতর্ক ও ঐক্যবদ্ধ হতে আহ্বান জানানো হয়। এমনকি পাহাড়ীদের আহত হওয়ার পুরাতন ছবি পোস্ট করে তাদের হাসপাতালে নেয়া হচ্ছে, রক্ত প্রয়োজন ইত্যাদি প্রচারণা চালানো হয়। রক্তের জন্য মোবাইল নম্বরও দেয়া হয়।
প্রশ্ন হচ্ছে, যেখানে কেউ আহতই হয়নি এমনকি কোন পাহাড়ীর উপর হামলার ঘটনাও ঘটেনি সেখানে খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালের আনার খবর মূলত সম্প্রদায়িক্ দাঙ্গা লাগানোর অপকৌশল ভিন্ন অন্য কিছু ছিল না বলে সংশ্লিষ্টদের মত।
এসব প্রচারণায় খাগড়াছড়িতে ও মাটিরাঙ্গায় পাহাড়ী-বাঙালী প্রবল উত্তেজনা সৃষ্টি হয় ও সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগার উপক্রম হয়- যা সেনাবাহিনী, প্রশাসন ও পুলিশের সতর্কাবস্থানের কারণে এড়ানো সম্ভব হয়।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ী সন্ত্রাসীদের পরিচালিত প্রায় অর্ধ শতাধিক পেইজ ও গ্রুপ রয়েছে ফেসবুকে। এসকল পেইজ, গ্রুপ ও আইডি থেকে প্রতিনিয়ত পার্বত্য চট্টগ্রামে বাংলাদেশ, সরকার, বাঙালী, প্রশাসন ও সেনাবাহিনী বিরোধী হিংসাত্মক, বিদ্বেষমূলক, সাম্প্রদায়িকতার পক্ষে এবং সৌহার্দ্য, সহাবস্থান, শান্তি ও সম্প্রীতি বিরোধী প্রচারণা চালানো হয়। এসকল প্রচারণা প্রায়শঃ বাংলাদেশের অখণ্ডতা, সংবিধান ও রাষ্ট্র্দ্রোহী উপাদান থাকে। এছাড়াও সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের বিরোধিতা করে তা প্রতিহত করার পক্ষে প্রচারণা চালানো হয় এসব পেইজ থেকে।
অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, এসব প্রচারণায় বিভিন্ন বিদেশী শক্তিকে বাংলাদেশে হস্তক্ষেপ, দাতা সংস্থাগুলোকে বাংলাদেশে সাহায্য বন্ধ করার জন্য আহ্বান জানিয়ে প্রচারণা চালিয়ে, গণস্বাক্ষর ও গণ পিটিশন সংগ্রহ করে পাশ্চাত্য রাষ্ট্রসমূহ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহে আবেদন করা হয়। বাংলাদেশ ভেঙে স্বাধীন জুম্মল্যান্ড গঠনের পক্ষে জনমতও গঠন করা হয় এসকল প্রচারণায়। এছাড়াও ইসলাম ও মুসলমান বিরোধী নানা আপত্তিকর মন্তব্য ও ছবি পোস্ট করা হয়ে থাকে।
মূলতঃ পার্বত্য চট্টগ্রামের আঞ্চলিক দলগুলো ও তাদের সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর সাথে জড়িত নেতাকর্মী ও সন্ত্রাসীরা এই প্রচারণার সাথে জড়িত। এর সাথে পাহাড়ে অশান্তি সৃষ্টিতে ইন্ধনদানকারী বেশকিছু এনজিও কর্মীদের সংশ্লিষ্টতাও রয়েছে বলে জানা গেছে।
পাহাড়ের সচেতন মহলের মতে, পাহাড়ের সাধারণ ও নিরীহ পাহাড়ীরা এ সকল প্রচারণা সাথে জড়িত না থাকলেও তারাই এর প্রধান শিকার ও টার্গেটে পরিণত হচ্ছে। এর ফলে সাধারণ ও শান্তি প্রিয় পাহাড়ীদের মধ্যে, বিশেষ করে উঠতি পাহাড়ী তরুণ, যুবক ও ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে বাংলাদেশ, বাঙালী, সরকার ও প্রশাসন বিদ্বেষী মনোভাব সৃষ্টি হচ্ছে। নানা ধরনের মিথ্যা তথ্য ও আবেগী প্রচারণার ফাঁদে পড়ে পাহাড়ের সাধারণ তরুণ ও যুবকদের মনেও বাংলাদেশের প্রতি আনুগত্যের পরিবর্তে তথাকথিত স্বাধীন জুম্মল্যান্ডের প্রতি আনুগত্য সৃষ্টির চেষ্টা করা হচ্ছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম সংশ্লিষ্ট অভিজ্ঞমহলের মতে, অচিরেই এ প্রবণতা রোধ করতে না পারলে পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ী সম্প্রদায়ের আগামী প্রজন্ম গড়ে উঠবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রতি আনুগত্যহীন ও প্রচণ্ড সাম্প্রদায়িক মনোভাবাপন্ন হয়ে।
তাদের মতে, সরকার সামাজিক গণমাধ্যমে ব্যাপক মনিটরিং করলেও বিচ্ছিন্নতাবাদী ও সম্প্রদায়িক মনোভাবাপন্ন পাহাড়ীদের এহেন সংবিধান ও রাষ্ট্রবিরোধী, সাম্প্রদায়িক, বিদ্বেষ ও উষ্কানীমূলক প্রচারণা বন্ধ করার ব্যাপারে তেমন উদ্যোগ পরিলক্ষিত হয় না। কিন্তু রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব, অখণ্ডতা, আনুগত্য, পার্বত্য চট্টগ্রামে সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি, সহাবস্থান, শান্তি ও আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে এ ধরনের হেট ট্রেইট ক্যাম্পেইন অচিরেই বন্ধ করা জরুরী।
মাটিরাঙ্গার ঘটনায় খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ ওয়াহিদুজ্জামান জানান, পার্বত্য চট্টগ্রামের সম্প্রীতির বন্ধন বিনষ্ট করতে একটি স্বার্থান্বেষী মহল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা অপপ্রচার ও উস্কানি ছড়িয়েছিল। উস্কানিদাতাদের খুঁজে বের করতে মাঠে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে বলেও জানান তিনি।
জেলা পুলিশ সুপার মো. মজিদ আলী জানান, মাটিরাঙাসহ অন্যান্য ঘটনায় উস্কানিদাতাদের আইনের আওতায় আনতে পুলিশ কাজ করছে। সংশ্লিষ্ট থানাগুলোর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তাদের শনাক্ত করতে মাঠে কাজ করছে প্রশাসন।