৮ অভ্যাসে দীর্ঘায়ু বাড়তে পারে ২৪ বছর: গবেষণা

fec-image

গবেষণায় বলা হয়েছে, ৪০ বছর বয়সেও যদি এসব স্বাস্থ্যকর অভ্যাসে অভ্যস্ত হওয়া যায় তাতেও জীবনের সঙ্গে বাড়তি ২৪ বছর যোগ করা সম্ভব। ৫০ বছর বয়সে শুরু করলে ২১ বছর আর ৬০ বছর বয়সে শুরু করলে ১৮ বছর পর্যন্ত জীবন দীর্ঘায়িত করা সম্ভব।

যুক্তরাষ্ট্রে করা একটি গবেষণায় দেখা গেছে, স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার জন্য ৮টি অভ্যাস মেনে চললে জীবন অন্তত ২৪ বছর দীর্ঘায়িত করা সম্ভব। গবেষণাটি এখনো প্রকাশিত হয়নি। তবে যুক্তরাষ্ট্রের একটি অনুষ্ঠানে গবেষণাটির কিছু উল্লেখযোগ্য বিষয় উপস্থাপন করা হয়েছে।

গবেষণায় বলা হয়েছে, ৪০ বছর বয়সেও যদি এসব স্বাস্থ্যকর অভ্যাসে অভ্যস্ত হওয়া যায়, তাতেও জীবনের সঙ্গে বাড়তি ২৪ বছর যোগ করা সম্ভব। ৫০ বছর বয়সে শুরু করলে ২১ বছর আর ৬০ বছর বয়সে শুরু করলে ১৮ বছর পর্যন্ত জীবন দীর্ঘায়িত করা সম্ভব।

ভিএ বোস্টন হেলথকেয়ার সিস্টেমের মিলিয়ন ভেটেরান প্রোগ্রামের স্বাস্থ্য বিজ্ঞান বিশেষজ্ঞ এবং গবেষণাটির প্রধান লেখক জুয়ান-মাই নুয়েন বলেন, ‘স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার জন্য ২০ বছর সময়ের মধ্যে এই পরিবর্তনগুলো আনতে হবে। এগুলো ধীরে ধীরেও করা যায়, আবার সবগুলো একসঙ্গেও করা যায়।’

সেই জাদুকরী অভ্যাসগুলো কী কী? এর কোনোটিই কিন্তু একেবারে নতুন নয়। নিয়মিত ব্যায়াম করা, স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া, চাপ বা উদ্বেগ (স্ট্রেস) কমানো, ভালো ঘুম, ইতিবাচক সামাজিক সম্পর্ক রক্ষা করা, ধূমপান না করা, অতিরিক্ত পানাহার না করা এবং মাদকে আসক্ত না হওয়া।

৪০-৯৯ বছর বয়সী ৭ লাখ ২০ হাজার সামরিক বাহিনীর অভিজ্ঞতাসম্পন্ন মানুষের ওপর এই গবেষণাটি করা হয়েছে। এতে দেখা গেছে, কোনো পুরুষ যদি এই ৮টি অভ্যাসের অন্তত ১টি ৪০ বছর বয়স থেকে মেনে চলা শুরু করেন, তাহলেও তিনি বাড়তি ৪.৫ বছর বাঁচেন। ৩টি অভ্যাস রপ্ত করতে পারলে এটি বেড়ে ৮.৬ বছর পর্যন্ত হতে পারে।

নারীদের ক্ষেত্রেও প্রায় একই ফলাফল পাওয়া গেছে। যদিও পুরুষের তুলনায় নারীদের কিছুটা তারতম্য রয়েছে। অন্তত ১টি স্বাস্থ্যকর অভ্যাস মেনে চললে নারীদের জীবন বাড়ে ৩.৫ বছর, ২টি মেনে চললে বাড়ে ৮ বছর আর ৩টি মেনে চললে বাড়ে ১২.৬ বছর।

অভ্যাসগুলো কী কী :

মানুষের দীর্ঘায়ুতে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখে, এমন ৮টি জীবনাচরণের ক্রম করা হয়েছে গবেষণাটিতে।

১. তালিকার প্রথমেই আছে ব্যায়াম। বিশেষজ্ঞদের মতে, সুস্বাস্থ্যের জন্য ব্যায়াম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নুয়েন বলেন, যারা ব্যায়াম করেন না, তাদের তুলনায় যারা ব্যায়াম করেন তাদের যেকোনো কারণে মৃত্যুঝুঁকি ৪৬ শতাংশ পর্যন্ত কম থাকে।

অন্যান্য গবেষণায় ফলাফলের সঙ্গেও এর মিল রয়েছে। বিভিন্ন গবেষণায় বলা হয়েছে, সুস্বাস্থ্যের জন্য খুব কঠিন খেলা বা ব্যায়াম করার প্রয়োজন নেই। বরং কঠিন ব্যায়াম শরীরের ক্ষতিও করতে পারে।

২. দীর্ঘ জীবনের জন্য দ্বিতীয় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে মাদকাসক্ত না হওয়া। গবেষণায় দেখা গেছে, মাদকসক্ত না হলে মৃত্যুঝুঁকি কমে ৩৮ শতাংশ। বর্তমান প্রেক্ষাপটে এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি ব্যাপার। বিশ্বের অনেক দেশেই, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে এটি জনস্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকি তৈরি করেছে।

৩. গবেষণাটিতে দেখা গেছে, কখনো তামাক গ্রহণ না করলে মৃত্যুঝুঁকি কমে ২৯ শতাংশ। যিনি আগে ধূমপান করতেন, তার জন্য এই মৃত্যুঝুঁকির হার প্রযোজ্য নয়। বিশেষজ্ঞরা অবশ্য বলেছেন, জীবনের যেকোনো পর্যায়ে ধূমপান ছাড়লেই এর ইতিবাচক ফলাফল পাওয়া যায়।

৪. দুশ্চিন্তা বা উদ্বেগ নিয়ন্ত্রণ তালিকার চতুর্থ অবস্থানে আছে। গবেষণায় দেখা গেছে, দুশ্চিন্তা বা উদ্বেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে মৃত্যুঝুঁকি কমে ২২ শতাংশ। মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর দুশ্চিন্তার মারাত্মক প্রভাব রয়েছে।

৫. গবেষণায় দেখা গেছে, উদ্ভিদ-ভিত্তিক খাবার গ্রহণ করলে দীর্ঘজীবন পাওয়ার সম্ভাবনা ২১ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। নুয়েন বলেন, তবে এর অর্থ এই নয় যে আপনাকে পুরোপুরি নিরামিষভোজী হতে হবে। স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করাটাই মুখ্য।

৬. অ্যালকোহলযুক্ত পানীয় পরিহার করা আরেকটি স্বাস্থ্যকর অভ্যাস। দিনে ৪টির বেশি অ্যালকোহলযুক্ত পানীয় পান না করলে মৃত্যুঝুঁকি ১৯ শতাংশ পর্যন্ত কমে বলে গবেষণায় দেখা গেছে।

৭. গবেষণায় দেখা গেছে, রাতে ৭ থেকে ৯ ঘণ্টা পর্যন্ত পর্যাপ্ত ও ভালো ঘুম ১৮ শতাংশ মৃত্যুঝুঁকি কমায়। বহু গবেষণাতেই অপর্যাপ্ত ঘুমের সঙ্গে স্বাস্থ্যহানির সম্পর্কের প্রমাণ পাওয়া গেছে। অপর্যাপ্ত ঘুমের ফলে অনেক সময় অল্প বয়সে মৃত্যুর মতো ঘটনাও ঘটতে পারে।

৮. ইতিবাচক সামাজিক সম্পর্ক দীর্ঘজীবন পাওয়ার সম্ভাবনা ৫ শতাংশ পর্যন্ত বাড়াতে পারে। যদিও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একাকীত্ব ও বিচ্ছিন্ন অবস্থা বিশেষ করে বয়ষ্ক জনগোষ্ঠির মধ্যে খুবই উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে।

নুয়েন বলেন, ‘৫ শতাংশকে হয়তো কম মনে হতে পারে, কিন্তু প্রতিটি ছোট ছোট পদক্ষেপই উপকারী।’

তথ্যসূত্র: সিএনএন

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন