অধ্যক্ষের বিতর্কিত আচরণে রামু পাবলিক স্কুলের ৮ শিক্ষকের ইস্তফা

সোয়েব সাঈদ:

স্কুল প্রধান তার সহকর্মী শিক্ষকদের দায়িত্ব পালনে হেরফের হলেই বলে উঠেন ‘কুত্তার বাচ্চা, শুকুরের বাচ্চা, নবাবের বেটা। ‘চলে যাও’ তোমার মত শিক্ষক চলে গেলে চেয়ার খালি থাকবেনা। কখনো শিক্ষকদের দেন চোরের অপবাদ। অভিভাবকের সামনেই এক শিক্ষককে কানে ধরিয়ে রেখেছিলেন। কোচিং করানোয় কেটে রাখেন বেতনের ১ হাজার টাকা। টেস্ট পরীক্ষার খাতা হারিয়ে যাওয়ায় শিক্ষকদের কাছ থেকে নিয়েছেন আর্থিক ক্ষতিপূরণ। ‘কাটার’ মরিচা ধরায় শাসিয়েছেন এক শিক্ষককে। শিক্ষার্থীদের বেতন বুঝিয়ে দেয়ার সময় টাকার ভাজ এলোমেলো হওয়ায় ছুড়ে মারেন হিসাবরক্ষকের মুখে। কথায় কথায় চলে শিক্ষকদের বংশ নিয়েও গালিগালাজ। কোন শিক্ষক এসবের প্রতিবাদ জানালেই জাহেদুল হক বলে উঠেন, আমি খুব খারাপ মানুষ। প্রয়োজনে আমি ঘটনা ঘটিয়ে ফেলবো।

রামু পাবলিক কে.জি এন্ড হাই স্কুলের স্বঘোষিত অধ্যক্ষ জাহেদুল হকের বিরুদ্ধে এমন অহরহ অনৈতিক ও অশালিন ভাষা ব্যবহারের অভিযোগে চাকুরি থেকে ইস্তফা দিয়েছেন কর্মরত সব শিক্ষক। ফলে কয়েকদিন ধরে পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ থাকায় আড়াই শতাধিক শিক্ষার্থী চরম বেকায়দায় পড়েছে। উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন এসব শিক্ষার্থীর অভিভাবকেরা।

ইস্তফা দেয়া শিক্ষকরা জানিয়েছেন, বিতর্কিত অধ্যক্ষ জাহেদুল হকের এমন অসংলগ্ন আচরণের শিকার হয়ে স্কুলটি প্রতিষ্ঠার ৮ বছরে প্রায় ১৫০ জন শিক্ষক বিতাড়িত হয়েছেন।

বিদ্যালয়ের বিতর্কিত এ অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য গত সোমবার রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দেন শিক্ষকরা। লিখিত আবেদনে শিক্ষকরা নিরাপত্তাহীনতারও আশংকা করেছেন। অভিযোগপত্রে ৮জন শিক্ষক স্বাক্ষর করেছেন। এরা হলেন, রিয়াজ উদ্দিন, হোসাইন মোঃ ফরহাদ, আশীষ কান্তি দাশ, রেফাইতুল মান্নান, টিপু বড়ুয়া, সুমাইয়া আফরিন, অনুপ্রভা দাশ, শারমিন সায়হান রীমা।

শিক্ষার্থীর কাছ থেকে অতিরিক্ত ভর্তি ফিস ও বেতন আদায়সহ প্রাথমিক শিক্ষার নীতিমালা না মেনে সামাজিক প্রতিষ্ঠানকে একক আধিপত্যের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা সহ শিক্ষকদের বিভিন্নভাবে হুমকি দেয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে বিদ্যালয়ের এ অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে।

শিক্ষকরা জানান, বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষের অনৈতিক ও অশালিন আচরণের কারণে ক্ষুদ্ধ শিক্ষকরা গত ৩ সেপ্টেম্বর বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে অধ্যক্ষ জাহেদুল ইসলাম জাহেদ শিক্ষকদের সব সিদ্ধান্ত মেনে নেয়ার অঙ্গীকার করলে যথানিয়মে প্রাতিষ্ঠাতিক কার্যক্রম শুরু করেন। ওই বৈঠকের একদিন যেতে না যেতে অধ্যক্ষ নিজেই উল্টো শিক্ষকদের শর্ত দেয়া শুরু করেন। প্রত্যেকটি ক্লাসের দুর্বল ছাত্র-ছাত্রীদের পরীক্ষার উত্তর পত্রে ৯০ এর উপরে নম্বর দিনে হবে, একজন শিক্ষককে ১৫ মিনিটের মধ্যে ৩ টি শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের ডায়েরি লেখা শেষ করতে হবে বলে শিক্ষকদের আদেশ দেন।

ইতোপূর্বে ওই বিদ্যালয়ে কর্মরত এক শিক্ষক জানান, শ্রেণী পাঠদানের সৌজন্য কপি খুঁজে না পাওয়ার কারণে ঐ শিক্ষকদের সাথে অশালীন আচরণ করেছেন। ১০ মিনিটের মধ্যে বই খুঁজে দিতে না পারলে বিদ্যালয় থেকে চলে যেতে হবে, আমি খুব খারাপ মানুষ আমি ঘটনা ঘটিয়ে ফেলবো।

নাম প্রকাশের অনিচ্ছুুক কয়েকজন অভিভাবক জানান, বিদ্যালয় একটি সামাজিক প্রতিষ্ঠান। কিন্তু অধ্যক্ষ নিজে মালিক দাবি করে বিদ্যালয়কে একক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছেন। একজন শিক্ষক নিয়োগের পর শিক্ষার্থীর সাথে ওই শিক্ষকের সম্পর্ক সৃষ্টি হতে না হতেই বিদ্যালয়ের শিক্ষক পরিবর্তন করতেন। ঘন ঘন শিক্ষক পরিবর্তনের কারণে শিক্ষার পাঠদান কার্যক্রম ব্যহত হয়। শিশু শিক্ষার্থীর ভর্তি ফিস ১ হাজার ৬০০ টাকা, মাসিক বেতন ৪০০টাকা করে নেয়া হচ্ছে। রামুর কোন কেজি স্কুলে এভাবে বেশী টাকা নেয়া হয়না। স্বেচ্ছাচারিতামুলক আচরণে তিনি বিদ্যালয়টিকে পরিচালিত করেন।

অভিভাবকরা আরো বলেন, বিদ্যালয়ের ক্ষতি হোক আমরা চাইনা। প্রাথমিক শিক্ষার নীতিমালায় বিদ্যালয়টি পরিচালনা করার জন্যে প্রশাসনের প্রতিও জোর দাবি জানান অভিভাবকরা।

রামু পাবলিক কে.জি এন্ড হাই স্কুলের অধ্যক্ষ জাহেদুল ইসলাম জাহেদ শিক্ষকদের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘সামনে পরীক্ষা। অভিভাবকরা পাঠদানে গাফিলতি হচ্ছে বলে অভিযোগ করায়, আমি ভালভাবে পাঠদান কার্যক্রম চালাতে বলেছিলাম শিক্ষকদের। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে শিক্ষকরা একযোগে বিদ্যালয় থেকে চলে যায়। তাতে দু’দিন বিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও সাময়িক শিক্ষক নিয়োগ করে মঙ্গলবার থেকে পাঠদান কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। আমি কখনো শিক্ষকদের প্রতি খারাপ আচারণ করিনি, গালিগালাজও করিনি। অনাকাংখিতভাবে শিক্ষকরা বিদ্যালয়ে আসছেন না। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম ভূট্টো সহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সহায়তায় সৃষ্ট জটিলতা সমাধানের চেষ্টা চলছে।’

রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাসুদ হোসেন জানান, শিক্ষকরা অভিযোগ দিয়েছেন। বিদ্যালয় পরিদর্শনে গিয়ে উভয় পক্ষের সাথে আলাপ করে সৃষ্ট পরিস্থিতির সমাধান করা হবে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন