আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের হস্তক্ষেপ কামনা করলো জেএসএস

জনসংহতি সমিতি

প্রেস বিজ্ঞপ্তি:

জনসংহতি সমিতির সদস্যদের বিরুদ্ধে বান্দরবান ও রাঙ্গামাটি জেলার স্থানীয় আওয়ামীলীগ ও প্রশাসনের ষড়যন্ত্র, দমন-পীড়ন ও রাজনৈতিক হয়রাণির প্রতিবাদে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের হস্তক্ষেপ কামনা করলো জেএসএস কেন্দ্রীয় কমিটি। ৭ জুলাই  কেন্দ্রীয় কিমিটির তরফ থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা বলা হয়। বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়েছে,

“ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন-২০১৬ এর তফসিল ঘোষণার পর থেকে বান্দরবান ও রাঙ্গামাটি জেলার স্থানীয় আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দ পুলিশ ও নিরাপত্তাবাহিনীসহ স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় জনসংহতি সমিতির সদস্যদের বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র, দমন-পীড়ন ও রাজনৈতিক হয়রানি চালিয়ে আসছে। নির্বাচন-উত্তর সময়ে আওয়ামীলীগ ও প্রশাসনের সেই হীন তৎপরতা আরো জোরদার হয়েছে।

সাম্প্রতিক কালে কোন ঘটনা ঘটলেই তাতে জনসংহতি সমিতির নেতৃত্বকে জড়িত করে মিথ্যা মামলা দায়ের, গ্রেফতার, হয়রানি করা হচ্ছে। জনসভা, সংবাদ ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্থানীয় আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দ জনসংহতি সমিতিকে নিশ্চিহ্নকরণ ও সমিতির সদস্যদের জীবনহানি ও সম্পত্তি ধ্বংসের প্রকাশ্য ঘোষণা দিয়ে চলেছে। গত মার্চ থেকে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন-২০১৬ এর তফসিল ঘোষণার পর থেকে আজ অবধি আওয়ামীলীগের প্রত্যক্ষ মদদে জনসংহতি সমিতি ও সমিতির সহযোগী সংগঠনের ২ জন সদস্যকে হত্যা, ১৬ জনকে আটক, ৩০ জনকে আহত, কমপক্ষে ৫০ জনের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের এবং অন্তত শতাধিক সদস্যকে এলাকাছাড়া করা হয়েছে”।

বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, “রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলাধীন ইউনিয়নগুলোর (ইউপি) নির্বাচন ঘোষণার পরপরই ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ রাঙ্গামাটি জেলাধীন বিভিন্ন ইউনিয়নে ‘সন্ত্রাসীদের হুমকির কারণে’ আওয়ামীলীগের অনেক প্রার্থী মনোনয়ন জমা দিতে না পারার ষড়যন্ত্রমূলক ও ভিত্তিহীন অজুহাত তুলে ধরে। পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করা ও রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলাধীন ইউপি নির্বাচনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার হীন উদ্দেশ্যে পার্বত্য চট্টগ্রামে চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাস বন্ধ এবং অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের অজুহাতে স্থানীয় আওয়ামী লীগ গত ২৪ মার্চ ২০১৬ রাঙামাটি শহরে এক তথাকথিত সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশের আয়োজন করে। ফলে মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ দিন (২৭ এপ্রিল) অতিক্রান্ত হওয়ার পর গত ২৯ এপ্রিল ২০১৬ রাঙামাটি জেলার ৪৯টি ইউপির নির্বাচন স্থগিত করা হয়।

বস্তুত পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন না করায় আওয়ামী লীগ তৃণমূল পর্যায়ে জনসমর্থন হারিয়েছে বলে অনেকের অভিমত রয়েছে। তাদের নেতা-কর্মীরা সেটা বুঝতে পেরে দলীয় নৌকা প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সাহস না করার কারণে দলীয় প্রতীক (নৌকা মার্কা) নিয়ে অনেকে নির্বাচন করতে আগ্রহী ছিলেন না।

২১ মার্চ ২০১৬ ভোরে বান্দরবানের রুমা উপজেলার দুর্গম গালেংগ্যা ইউনিয়ন পরিষদের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান পদ প্রার্থী ও জনসংহতি সমিতির সদস্য শান্তি ত্রিপুরাকে (৩৫) তার রামদুপাড়া গ্রাম থেকে অপহরণ করে আদিকা পাড়ার কাছে জঙ্গলে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। দুর্বৃত্তরা তার বাড়িতেও আগুন লাগিয়ে দেয়। শান্তি ত্রিপুরাকে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে বিবেচনা করে আওয়ামীলীগের মদদে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে বলে জানা যায়’’।

 বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, “২৩ এপ্রিল ২০১৬ তারিখে তৃতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের অংশ হিসেবে তৃতীয় ধাপে অনুষ্ঠিত বান্দরবান জেলায় ২৫টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে পূর্ব-পরিকল্পনা অনুসারে শত শত নকল ব্যালট পেপার ছাপিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগ তাদের কর্মী ও সমর্থকদের সরবরাহ করে এবং ভোট প্রদানের সময় তারা সেসব নকল ব্যালট পেপারও ব্যালট বাক্সে ঢুকিয়ে দিয়ে ব্যাপকভাবে ভোট জালিয়াতির আশ্রয় নেয়।

গত ২৫ এপ্রিল ২০১৬ বান্দরবান জেলার লামা উপজেলাধীন গজালিয়া বাজারে আওয়ামীলীগের লেলিয়ে দেয়া ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা জনসংহতি সমিতি ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সদস্য এবং গজালিয়া ইউনিয়নের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী চচিংমং মারমার পোলিং এজেন্টের উপর হামলা করে। এতে জনসংহতি সমিতির একজন ও পিসিপির দুইজন মোট তিনজন সদস্য গুরুতরভাবে আহত হয়’’।

 করণীয় হিসাবে বিবৃতিতে বলা হয়েছে,  জনসংহতি সমিতি ও এর সহযোগী সংগঠনের সদস্যদের বিরুদ্ধে স্থানীয় আওয়ামীলীগ ও প্রশাসনের ষড়যন্ত্র, ফ্যাসীবাদী দমন-পীড়ন ও রাজনৈতিক হয়রানির মূল উদ্দেশ্যই হলো বর্তমান সরকার কর্তৃক পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন না করায় ক্ষমতাসীন দলের প্রতি জনমানুষের ক্ষোভ এবং অসন্তোষকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করা। এভাবে সরকারি মহলের ফ্যাসীবাদী তৎপরতা চলতে থাকলে পরিস্থিতি আরো জটিল থেকে জটিলতর হতে বাধ্য। তার ফলে যে কোন অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতির জন্য প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এবং বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগের জেলা সভপতি ক্যশৈহ্লা সহ আওয়ামীলীগের স্থানীয় নেতৃত্ব ও প্রশাসনই দায়ী থাকবে, যা কখনোই কাম্য হতে পারে না। তাই অচিরেই জনসংহতি সমিতি ও এর সহযোগী সংগঠনের সদস্যদের বিরুদ্ধে এধরনের ষড়যন্ত্র, ফ্যাসীবাদী দমন-পীড়ন ও রাজনৈতিক হয়রানি বন্ধ করা হোক এবং তাদের বিরুদ্ধে আনীত সাজানো ও ভিত্তিহীন মামলা অনতিবিলম্বে প্রত্যাহার হোক। মংপু মারমাকে অপহরণের ঘটনাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার না করে তাকে উদ্ধারের সম্মিলিত উদ্যোগ গ্রহণ করা হোক।

পরিশেষে প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং সহ বান্দরবান পার্বত্য জেলা আওয়ামীলীগের নেতৃত্ব কর্তৃক বান্দরবানে যে সংকটজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছে তা যথাযথ ও দ্রুত নিরসনের লক্ষ্যে জনসংহতি সমিতি আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সদয় হস্তক্ষেপ কামনা করছে”।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন