আজ রাঙামাটি রাজবন বিহারে ২৪তম কঠিন চীবর দানোৎসব শুরু

Rangamati Funoti pic,01

স্টাফ রিপোর্টার :

আজ বৃহস্পতিবার সুতা কাটার মধ্য দিয়ে শুরু হবে রাঙামাটি রাজবন বিহারে দু’দিনব্যাপী ৪২তম কঠিন চীবর দানোৎসব। এটা পার্বত্যাঞ্চলে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব। উৎসটিকে ঘিরে মুখর হয়ে উঠেছে পাহাড়ি জনপদ রাঙামাটি। এ উপলক্ষে রাজবন বিহারে ব্যাপক আয়োজন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে বিপুল পুণ্যার্থীর ঢল নাম শুরু হয়েছে রাঙামাটি রাজবন বিহারে। দুই দিনব্যাপী কঠিন চীবর দানোৎসবে মেলা, ধর্মীয় কীর্তন, নাটক, চরকায় সুতা কাটা, বেইন বুনন, শোভাযাত্রাসহ বর্ণাঢ্য কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে।

রাঙামাটি রাজবন বিহার উপাসক-উপসিকা পরিষদের সিনিয়র সহ-সভাপতি গৌতম দেওয়ান জানান, রাঙামাটি রাজবন বিহারে আয়োজিত বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের কঠিন চীবর দানোৎসবে অগণিত ভক্ত ও পূণ্যার্থীর ঢল নামছে। আজ দূপুরে চরকায় সুতাকাটা উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে ২ দিনের উৎসব শুরু হবে। আগামীকাল শুক্রবার ২৪ ঘন্টার মধ্যে তৈরি করা চীবর উৎসর্গের মধ্য দিয়ে শেষ হবে বৌদ্ধদের এ মহাদানযজ্ঞ কঠিন চীবর দানোৎসব। একমাত্র বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের রাজবন বিহার ছাড়া বিশ্বের কোথাও বিশাখা প্রবর্তিত হাজার বছরের নিয়মে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের এ মহাদানযজ্ঞ সম্পাদিত হয় না।

Rangamati kolpotoru pic01

উল্লেখ্য, আজ থেকে আড়াই হাজার বছর আগে মহামতি গৌতম বুদ্ধের জীবদ্দশায় তার প্রধান সেবিকা মহাপূণ্যবতী বিশাখা ২৪ ঘন্টার মধ্যে তুলা থেকে সুতা কেটে রং করণ, বয়ন ও সেলাই শেষে চীবর (বিশেষ পরিধেয় বস্ত্র) দানকার্য সম্পাদন করেন। ২৪ ঘন্টার মধ্যে মহাদানযজ্ঞ সম্পাদন করার কারণে বৌদ্ধরা এই ধর্মীয় উৎসবকে ‘দানোত্তম কঠিন চীবর দান’ বলে। রাঙামাটি রাজবন বিহারে এ মহাদানযজ্ঞ সর্বপ্রথম অনুষ্ঠিত হয় ১৯৭৭ সালে।

তারও আগে ১৯৭৪ সালে বৌদ্ধ আর্যপুরুষ শ্রাবক বুদ্ধ মহাসাধক শ্রীমৎ সাধনানন্দ মহাস্থবির বনভান্তের এক স্বর্গীয় অনুভূতি থেকে রাঙামাটি জেলার লংগদু উপজেলার তিনটিলা বৌদ্ধ বিহারে বিশাখার ঐতিহ্যবাহী নিয়মে এ ধর্মীয় অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। সেই থেকে প্রত্যেক বছর রাঙামাটি রাজবন বিহারসহ পার্বত্য তিন জেলার রাজবন বিহারের শাখাসমূহে বিশাখা প্রবর্তিত নিয়মে কঠিন চীবর দানোৎসব সম্পাদন করা হয়ে থাকে।

প্রতি বছর কঠিন চীবর দানোৎসবকে ঘিরে রাঙামাটি রাজবন বিহারে লাখো মানুষের পদাভারে মুখরিত হয় পাহাড়ি জনপদ। এবারও এ ধর্মীয় উৎসবকে ঘিরে রাঙামাটিতে বিরাজ করছে সাজ সাজ রব। বইছে উৎসবের আমেজ। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে পঞ্চশীল গ্রহণ, ৩ টায় বেইন ঘরের অনুষ্ঠান উদ্বোধন, চরকায় সুতাকাটা, রাতে সুতা লাঙানো, সিদ্ধ ও রংকরণ, বেইন বোনা এবং আগামীকাল শুক্রবার ভিক্ষুসংঘের প্রাতঃরাশ, বুদ্ধ পূজা ও সংঘদান, ভিক্ষুসংঘের পিন্ডদান, চীবর ও বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা, কঠিন চীবর উৎসর্গ, সর্বজন পূজ্য বনভান্তের সদ্ধর্ম দেশনা, সার্বজনিন প্রদীপ পূজাসহ বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন