আল্লাহ শেখ হাসিনা ও ইউএনওরে বেশিদিন বাঁচাই রাইক্কো

fec-image

উখিয়া সদরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের উল্টোদিক মালভিটা পাড়া রাস্তার মূখে বৃহস্পতিবার(২ এপ্রিল) বিকেল সাড়ে ৫ টার দিকে উখিয়া ইউএনওর গাড়ি থামে।আশপাশে বেশ কিছু লোকজন ছিলো, সবাই মোবাইল কোর্টের ভয়ে পালাতে থাকে।

কিন্তু না ইউএনও অদূরে দাঁড়িয়ে থাকা এক বৃদ্ধকে কাছে ডেকে নিলেন। কি করে জানতে চাইলে বৃদ্ধ জানালো বয়স হয়েছে কাজ কর্ম করতে পারিনা।এখানে বসে কাঠের লাকড়ি বিক্রি করে কোন রকমে চলে। গাড়ির পেছনের দরজা খুলে অসহায় বৃদ্ধ আমির হামজা (৬৩) কে চাল, ডাল, তেল ও আলু ভর্তি একটি ত্রাণের ব্যাগ দিয়ে চলে গেলেন।

ইউএনও চলে যাওয়ার পর পালিয়ে থাকা লোকজন জড়ো হয়ে জানতে চাইলে বৃদ্ধ আমির হামজা খুশীতে অশ্রুসজল চোখে যা বললো,’আল্লাহ তুমি বড় দয়াবান, পাকিস্তান আমলোত্তু বহুত সরকার দেখ্কি, অনেক ইউএনও, এমপি, চেয়ারম্যান, মেম্বর দেখকি কিন্তু দেশরল্লাই-দেশর মাইনসরে এন্ডিল্লা ভালবাসেদে প্রধানমন্ত্রী ও ইউএনও খুব হম দেখকি (দেখেছি)।

বৃদ্ধ আরো বলেন,’দুনিয়াত ডর ব্যারাম চলে। অনেকদিন অর আয় রোজগার নাই, চইলতে হষ্ট অর, হন মেম্বর, চেয়ারম্যান একমুট চইলো ন দে। আঁরার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আঁরার ঘরে ঘরে, রাস্তা ঘাডে যাই ইউএনও সাবরে দি হবর লর, আঁরা বেশি দোয়া গরির। অবাজি এইল্ল্যা (এরকম) ইউএনও যদি আঁরা (সারা) দেশত থাইলে (থাকলে) দেশ আরও বউত উন্নতি (এগিয়ে) অইতো।

সম্প্রতি করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নিকারুজ্জামান চৌধুরীকে নিয়েই এমন মন্তব্য বৃদ্ধ কাঠুরিয়া আমির হামজার।

শুধু বৃদ্ধ কাঠুরিয়া নন, চলমান করোনা পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টিতে, বিদেশফেরত ব্যক্তিদের হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করা, স্থানীয় আড়াই লাখ মানুষের পাশাপাশি উখিয়ায় আশ্রয় নেয়া প্রায় ৯ লাখ মিয়ানমার নাগরিক রোহিঙ্গাদের নানা সমস্যা সমাধান।

এছাড়াও শতাধিক দেশী বিদেশী এনজিওগুলোর সাথে স্থানীয়দের সমম্বয় সাধন, দ্রব্যমূল্যের কৃত্রিম সংকট রোধে নানা সামাজিক ও রাজনৈতিক সংকটে ইউএনওর যুগান্তকারী বিভিন্ন উদ্যোগ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও দারুণভাবে প্রশংসিত হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মার্চের শুরু থেকে বিদেশ থেকে আসা ব্যক্তির সংখ্য প্রায় দু’শত। এসব মানুষের হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করতে প্রতিটি মানুষের ঘরে ঘরে গেছেন ইউএনও নিকারুজ্জামান। সরকারি নির্দেশনা না মানায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানাও করেছেন বেশ কয়েক জনকে। অনেককে করেছেন সর্তক।

এছাড়াও করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচাতে তার রাত-দিন তৎপরতা সচেতন মহলে ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছে। উখিয়া উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় যুগ্নসম্পাদক অধ্যাপক নুরুল আমিন সিকদার বলেন, দেশের এমন দুর্যোগময় মুহূর্তে সত্যিই তার ভুমিকা প্রশংসনীয়।

দেশের জন্য-দশের জন্য এ ধরনের নিবেদিতপ্রাণ ইউএনও সব উপজেলায় থাকলে দেশের মানুষ উপকৃত হত। পাশাপাশি দেশ আরও অনেক দূর এগিয়ে যেত বলে আমি মনে করি।

আওয়ামী লীগ নেতা মাহবুব আলম মাহাবুব বলেন, সমাজের নানা অনিয়ম, অসঙ্গতি নিয়ে বিভিন্নজন ইউএনওকে উদ্দেশ্য করে ফেইসবুকে লেখা-লেখি করেন। তিনি এগুলো যথাযথ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেন। এতে সাধারণ মানুষ সরকারের কর্মকাণ্ডের প্রতি সন্তুষ্ট।

তিনি বলেন, ইউএনও নিকারুজ্জামান চট্টগ্রাম জেলার বাসিন্দা। তিনি মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। তিনি একা পাড়া গ্রামে ঘুরে অসহায় মানুষের খোঁজ নেন ও স্থানীয় আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলেন। স্বভাবতই উখিয়ার মানুষেরা তার উপর আস্থাশীল।

বৃহস্পতিবার (২ এপ্রিল) ইউএনও মো. নিকারুজ্জামান চৌধুরী তার অফিসিয়াল ফেসবুকে লিখেছেন, “আপনার সম্মানের প্রতি আমরা শ্রদ্ধাশীল। বর্তমান করোনাভাইরাস প্রতিরোধ পরিস্থিতিতে আপনি কর্মহীন হয়ে পড়েছেন, আপনার বাসায় খাবার সংকট থাকলে এবং সবার সামনে আপনি খাদ্য সহায়তা নিতে বিব্রত বোধ করলে অনুগ্রহ করে নিম্নোক্ত ফোন নম্বরে যোগাযোগ করুন।পরিচয় গোপন রেখে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সহায়তা আপনার বাসায় পৌঁছে দিবো। “

ইউএনও মোঃ নিকারুজ্জামান চৌধুরী এ ব্যাপারে বলেন, সমাজের যারা মধ্যবিত্ত অথচ অভাবে, লাজ লজ্জায় কারো কাছে প্রকাশ্যে হাত পাততেও পারছেন না। কারণ অনেকে কিছু দিতে গিয়ে ছবি ও ভিডিও করেন।এতে এ শ্রেণীর মানুষ গুলো কষ্ট পান।

এ শ্রেণীতে অনেক শিক্ষক, আলেম, সমাজের সম্মানিত লোকজন ও রয়েছেন। এ ধরনের লোকজনের সম্মান অক্ষুণ্ণ রেখে প্রধানমন্ত্রীর প্রচেষ্টা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে বলে উখিয়া ইউএনও জানান।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: ইউএনও, উখিয়া, করোনাভাইরাস
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন