এক বছরে রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহসহ ক্যাম্পে আরো ২৭ খুন

fec-image

কক্সবাজারের আশ্রয় ক্যাম্পে রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যার এক বছর পূর্ণ হলো বৃহস্পতিবার (২৯ সেপ্টেম্বর)। হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি বিশ্বব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করে। এর পরপরই ক্যাম্পে সিক্স-মার্ডার, অগ্নিকাণ্ডে নিহতের ঘটনায় ‘আরসার অস্তিত্ব’ নিয়ে কথা ওঠে। তখন থেকে ক্যাম্পে নিরাপত্তা জোরদারের পাশাপাশি বিভিন্ন ব্লকে অভিযান শুরু করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তবু রোহিঙ্গা নেতা ও স্বেচ্ছাসেবকদের হত্যার ঘটনা কমেনি। মুহিবুল্লাহ হত্যার পর গত এক বছরে ক্যাম্পে মাঝিসহ খুন হন ২৭ রোহিঙ্গা। এসব ঘটনায় চরম নিরাপত্তাহীনতায় দিন পার করছেন রোহিঙ্গা নেতারা।

কুতুপালংয়ের রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নেতা মোহাম্মদ রফিক বলেন, ‘মাস্টার মুহিবুল্লাহ হত্যার এক বছর হয়েছে। বিষয়টি পুরো বিশ্ব আলোড়ন সৃষ্টি করলেও ক্যাম্পে রোহিঙ্গা মাঝিদের (নেতা) হত্যা বন্ধ হয়নি। এতে আমরা যারা মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার বিষয়ে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী নিয়ে কাজ করি, তারা খুবই বিপদে আছি। তবে এটাও সত্য, এপিবিএন পুলিশ সদস্যরা আমাদের জন্য আন্তরিকভাবে কাজ করছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘ক্যাম্পে হত্যা, অপহরণ, চাঁদাবাজিই শুধু নয়, বিভিন্ন অপরাধ চক্রে যুক্ত হতে রোহিঙ্গাদের বাধ্য করা হয়। এসবের কারণে ক্যাম্পের মানুষজন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।’

গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর লম্বাশিয়া ক্যাম্পের এআরএসপিএইচ কার্যালয়ে সভাপতি মুহিবুল্লাহ হত্যাকাণ্ড এবং বালুখালীর ১৮ নম্বর শিবিরের দারুল উলুম নাদওয়াতুল ওলামা আল-ইসলামিয়াহ নামের মাদ্রাসায় আরসাবিরোধী মাদ্রাসা শিক্ষক মৌলভি আকিজসহ ছয় জন খুন হওয়ার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলো তৎপরতা বাড়ায়। এতে ক্যাম্পে সন্ত্রাসীরা কোণঠাসা হয়ে পড়ে। তবে গত অক্টোবর থেকে ক্যাম্পে চালু হওয়ার স্বেচ্ছাপাহারা ব্যবস্থাকে অকার্যকর করতে সংশ্লিষ্ট রোহিঙ্গা নেতা ও স্বেচ্ছাসেবীদের টার্গেট করে হামলার ঘটনা ঘটছে। এতে বেশ কয়েকজন প্রাণ হারিয়েছেন।

পুলিশ ও এপিবিএন সূত্র জানায়, ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরের শেষ থেকে ২০২২ সালে ২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের ক্যাম্পগুলোতে ২০টি ঘটনায় ২৭ জন নিহত হন। এরমধ্যে কুতুপালং ক্যাম্পে একসঙ্গে সিক্স-মার্ডারের ঘটনা আলোচিত ছিল।

তবে গত চার মাসে ক্যাম্পে ১৫ রোহিঙ্গা হত্যার শিকার হয়েছেন। এরমধ্য মাঝি ও স্বেচ্ছাসেবকরা ছিলেন। সর্বশেষ ২২ সেপ্টেম্বর মোহাম্মদ এরশাদ (২২) নামে ক্যাম্পের এক স্বেচ্ছাসেবক খুন হন। ২১ সেপ্টেম্বর খুন হন মোহাম্মদ জাফর (৩৫) নামের এক নেতা (মাঝি)। ১৮ সেপ্টেম্বর প্রাণ হারান আরেক স্বেচ্ছাসেবক মোহাম্মদ ইলিয়াস (৩৫)। ৯ আগস্ট দুই রোহিঙ্গা নেতা, ৮ আগস্ট টেকনাফের নয়াপাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের এক স্বেচ্ছাসেবক খুন হন। ১ আগস্ট একই ক্যাম্পে সন্ত্রাসীদের গুলিতে আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এক নেতা মারা যান। ১ আগস্ট উখিয়ার মধুরছড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে রোহিঙ্গা স্বেচ্ছাসেবক, গত ২২ জুন কথিত আরসা নেতা মোহাম্মদ শাহ এবং ১৫ জুন একই গ্রুপের সদস্য মো. সেলিম (৩০) সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন।

এছাড়া ১৬ জুন রাতে উখিয়া ক্যাম্পে স্বেচ্ছাসেবক, ১০ জুন কুতুপালংয়ে চার নম্বর ক্যাম্পের আরেক স্বেচ্ছাসেবক, ৯ জুন এক রোহিঙ্গা নেতা, জুনের শুরুতে ও মে মাসে খুন হন রোহিঙ্গা নেতা সানা উল্লাহ (৪০) ও সোনা আলী (৪৬)। এসব ঘটনায় ১২টি মামলায় ২৩ জন আসামি গ্রেফতার হয়েছেন।

রোহিঙ্গা নেতারা বলছেন, মিয়ানমারের মুসলিম সন্ত্রাসবাদী আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) এবং মাদক ও মানবপাচারে জড়িত গোষ্ঠীগুলোর বিপক্ষে সদা সোচ্চার তারা।

‘আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস’ (এআরএসপিএইচ)-এর নেতা সৈয়দ মাহামুদ বলেন, ‘আমরা যারা প্রত্যাবাসনের পক্ষে এবং মাদক ও মানবপাচারসহ রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন অপরাধ ঠেকাতে কাজ করছি, তারা সবাই প্রতিমুহূর্তে প্রাণ হারানোর ভয়ে আছি।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ৮-আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) সহকারী পুলিশ সুপার (অপস) মো. ফারুক আহমেদ বলেন, ‘ক্যাম্পে মাঝি (রোহিঙ্গা নেতা) ও স্বেচ্ছাসেবীদের কারণে অপরাধীদের কর্মকাণ্ড বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ কারণে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে হামলা চালাচ্ছে। অনেক মাঝি শুধু অপরাধীদের অবস্থানের তথ্য দেওয়ার কারণেও আক্রান্ত হয়েছেন। এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িত কেউ ছাড় পাবে না।’

ক্যাম্প এলাকায় টহল এবং নজরদারি বাড়ানো হয়েছে দাবি করে তিনি আরও বলেন, এপিবিএনের আওতাধীন ক্যাম্পগুলোতে প্রতি রাতে প্রায় চার হাজার স্বেচ্ছাসেবী রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছেন। এতে ক্যাম্পের অপরাধীরা অনেকটা কোণঠাসা হয়ে পড়েছে বলে দাবি করেন তিনি।

সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: খুন, রোহিঙ্গা
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন