কক্সবাজারের সাধারণ জনতার সাথে ভিডিও কনফারেন্সে কথা বললেন প্রধানমন্ত্রী

unnamed-copy

নিজস্ব প্রতিবেদক:

কক্সবাজারের সাধারণ জনতার সাথে ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলেছেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার কক্সবাজারস্থ বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন স্টেডিয়ামে এ কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়। সকাল ১০টার আগে থেকে বিভিন্ন স্থান থেকে আসতে শুরু করে সাধারণ জনতা। ১০টা ২০ মিনিটের মধ্যে কনফারেন্সের নির্ধারিত প্যান্ডেল কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। এরপর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা, সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান, কক্সবাজার ০২ আসনের এমপি আশেক উল্লাহ রফিক ও কক্সবাজার ০৩ আসনের এমপি সাইমুম সরওয়ার কমল শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন।

এর আগে পবিত্র কুরআন থেকে তেলাওয়াত করেন কক্সবাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের পেশ ইমাম মুফতি সোলাইমান কাসেমি। এরপর বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ থেকে পাঠ করা হয়।

অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও একটি গবেষণাধর্মী জাহাজ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। এরপরই শুরু হয় চট্টগ্রাম বিভাগের মানুষের সাথে ভিডিও কনফারেন্স।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন হলেও স্বাধীনতা বিরোধীরা দেশের উন্নয়ন কখনো চায়নি। তাই পরাধীনতা বুকে ধারণ করতেই পরাজিত শক্তি বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যা করেছে। এর ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে তৎপর বিএনপি ও তাদের দোসররা। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া সংগঠন আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় আসে তখনই দেশের উন্নয়ন তরান্বিত হয়। আমরা বুঝি, স্বশিক্ষিত যুব সমাজই সমৃদ্ধ ও উন্নত বাংলাদেশ গড়তে সক্ষম। তাই চিকিৎসা বিদ্যাসহ সব ধরণের শিক্ষা প্রসারে সরকার অগ্রনী ভূমিকা রাখছে।’

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুর দেখানো পথে বর্তমান সরকার সমুদ্রসীমানা জয় করে সমুদ্র সম্পদকে কাজে লাগাতে চায়। এ জন্য কক্সবাজারে গড়ে তোলা হচ্ছে সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউট। পরবর্তীতে করা হবে সী এ্যাকোরিয়াম। চলমান ধারায় ২০২১ সালে দেশ একটি মধ্য আয়ের এবং ২০৪১ সালে বাংলাদেশ হবে একটি উন্নত দেশ।  দেশের প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখতে প্রধানমন্ত্রী জলাধার সংরক্ষণ এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও  আবাসনের চারপাশে বৃক্ষরোপণ করে সবুজায়ন ধরে রাখতে সবার প্রতি অনুরোধ জানান।

দেশ পরিচালনায় সরকারের নেয়া বিভিন্ন সময়ে পরিকল্পনা ও সংগঠিত নানা অনাকাঙ্খিত ঘটনায় তৃণমূল মানুষের ভাবনা সম্পর্কে জানার ধারাবাহিক আয়োজনে শনিবার কক্সবাজার জেলার সাধারণ মানুষের সাথে ‘ভিডিও কনফারেন্সে’ কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তি নয়, সভা স্থলে উপস্থিত নানা পেশাজীবি প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছানুসারে তার সাথে কথা বলেন।

তবে ভিডিও কনফারেন্সের সঞ্চালক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক কবির-বিন-আনোয়ার জানান, কক্সবাজারে ৫৮ টি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সরকার। তার মধ্যে ২০ প্রকল্পের কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। চলমান রয়েছে ৩৮টি প্রকল্প। তৎমধ্যে-মহেশখালীতে একাধিক বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্প, এলএমজি টার্মিনাল স্থাপণ, কক্সবাজারকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নিতকরণ ও খুরুশকুলে জলবায়ূ উদ্বাস্তুদের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্প অন্যতম।

ভিডিও কনফারেন্সে কুমিল্লা ও চট্টগ্রামের পর প্রধানমন্ত্রী সংযোগ নেন কক্সবাজারের সাথে। প্রথমেই তিনি একজন শুটকি উৎপাদনকারীর কথা শুনেন। শুটকি উৎপাদনকারী আতিক উল্লাহ কক্সবাজার তথা দেশের অন্যতম শুটকী মহাল ‘নাজিরার টেক’ নিয়ে কথা বলেন। এরপর তিনি বিমানবন্দর সম্প্রসারণের কারণে জলবায়ু উদ্বাস্তুদের আবাসস্থল সমিতিপাড়া ও কুতুবদিয়া পাড়া নাজিরারটেক এলাকার মানুষকে সরকার খুরুশকুলে পুনর্বাসিত করছেন এজন্য প্রধানমন্ত্রীকে সাধুবাদ। পাশাপাশি খুরুকুলের পুনর্বাসিত ওই এলাকায়ও একটি শুটকি মহাল গড়ে তোলার দাবী জানান।

কনফারেন্সে লবণচাষী হাবিব উল্লাহ প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ জানিয়ে বলেন, মাঠ পর্যায়ে লবণের কেজি ১০ টাকা দাম নির্ধারণ ও চৌফলদন্ডীতে একটি ‘বঙ্গবন্ধু লবণ গবেষণাগার’ স্থাপন করতে হবে। এরপর তিনি কক্সবাজার-চট্টগ্রামের উপকূল ঘিরে ৭০ হাজার একর মাঠে লবণ উৎপাদন উল্লেখ করে আলাদা লবণ বোর্ড গঠনের দাবি জানান।

তবে তিনি লবণবোর্ড ও কক্সবাজারের অন্যান্য সমস্যার ব্যাপারে নির্দিষ্ট করে কোন ঘোষণা দেননি। তবে উপস্থাপিত সকল সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়ে ভিডিও কনফারেন্স সমাপ্ত করেন।

কনফারেন্সে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ’র চেয়ারম্যান লে. কর্ণেল (অব.) ফোরকান আহম্মদ, জেলা পরিষদ প্রশাসক মোস্তাক আহমদ চৌধুরী, জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি এ্যাড. আহমদ হোসেন, সাধারণ সম্পাদক সালাহ উদ্দিন আহমেদ, জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন, পুলিশ সুপার শ্যামল কান্তি নাথ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) কাজি আবদুর রহমান, জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক অনুপ বড়ুয়া অপু, পিডিবি নির্বাহী প্রকৌশলী মুস্তাফিজুর রহমান, সওজ’র নির্বাহি প্রকৌশলী রানাপ্রিয় বড়ুয়া, এলজিইডি’র নির্বাহি প্রকৌশলী মনিরুল আলম ছিদ্দিকী, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহি প্রকৌশলী সমীর কুমার রজক দাশ, গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী নুরুল আমিন মিয়াসহ জেলা প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা রাজনৈতিক, সামাজিক নেতৃবৃন্দ, ধর্মীয় গুরু এবং বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার ৫ সহস্রাধিক লোক অংশ নেন।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন