`করোনা’ এড়াতে গ্রামাঞ্চলে জনসমাগম বন্ধ করছেনা উৎসুক জনতা 

fec-image

বিশ্বব্যাপি ছড়ানো করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) থেকে নিজেদের বাঁচাতে এখনো সচেতনতা ও সাবধানতা অবলম্বন করেনি গ্রামাঞ্চলের বেশিরভাগ মানুষ। করোনার ভয়াবহতা নিয়ে কোনো উদ্বেগ দেখা যাচ্ছেনা তাদের মাঝে।

দেশের গ্রামাঞ্চলে বসবাস করা লোকজন অধিকাংশ অশিক্ষিত হলেও শিক্ষিত যে একেবারেই নেই তা কিন্তু নয়। দেখা গেছে অশিক্ষিত-শিক্ষিত কেউই সচেতনতা গড়ে তুলছেনা নিজের মধ্যে।

বিশ্ববাসী করোনা আতংকে থাকলেও উৎসুক বাঙালী যেন ভয় ডরহীন। করোনার প্রভাব সম্পর্কে তাদের নূন্যতম জ্ঞান নেই বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

যেখানে আক্রান্ত চীন, ইরাক, স্পেন, কানাডা, ইতালির সহ জার্মানের মতো প্রযুক্তির দেশ করোনা এড়াতে হিমশিম খাচ্ছে সেখানে বাঙালী করোনাকে নিয়ে তাচ্ছিল্য বা ট্রল করছে। কেউ কেউ বলছে করোনাকে ভয় করেনা, তারা নাকি করোনার মতো ভাইরাসকে মোকাবিলা ও এমনকি পরাজিত করার শক্তি রাখে।

আদৌ কি সম্ভব করোনা থেকে রেহাই পাওয়া? সুইজারল্যান্ডের মতো দেশ করোনার প্রতিষেধক তৈরি করতে পারেনি অথচ বিশ্বজুড়ে চিকিৎসা ক্ষেত্রে তাদের অবদান ছিল অনস্বীকার্য। আজ তারাও নিরুপায়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এই ভাইরাসকে মহামারী আখ্যায়িত করেছে। জাতিসংঘের মহাসচিব বলেছেন এই মহামারীতে মিলিয়ন মিলিয়ন মানুষ মারা যেতে পারে। ইতালির প্রধানমন্ত্রী বলেছেন আমাদের সব চেষ্টা করে ফেলেছি কিছুই বাকি নেই।

করোনার থেকে বাঁচতে পারছেনা মানুষ। দিনে শতশত মানুষের মরণ হচ্ছে এবং মৃত্যুশয্যায় লক্ষ লক্ষ।

ইতিপূর্বে বিশ্বের অনেক দেশ লকডাউন করা হয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের নির্দেশনায় দেশের প্রায় সব প্রতিষ্ঠান লকডাউন করা হয়েছে। বন্ধ স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়। বন্ধ করা হয়েছে সরকারি  প্রতিষ্ঠানগুলোও। ইতিমধ্যে আমাদের দেশে করোনা ছড়িয়ে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৩৯ এর চেয়ে বেশি। সারাদেশে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছে ৪ জন।

স্বল্প সময়ে এতকিছু ঘটে যাওয়ার পরেও বাঙালী সচেতন হচ্ছেনা। অনেকেই মানছেনা কোয়ারান্টাইন। আবার কোয়ারান্টাইনে থাকা লোককে দেখতে আমজনতার ভীড়। বিদেশ থেকে এসেই বিয়ের পিড়িতে বসছে প্রবাসী। অনেকেই কোয়ারান্টাইন থেকে গোপনে পালাচ্ছে। কারো কারো কোয়ারান্টাইনকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখাতে গিয়ে গুনতে হয়েছে জরিমানার টাকা।

আরও কত কি! যদি এরকম চলতে থাকে তাহলে এদেশের মানুষের ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার হতে হবে বল মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এখনো করোনা নাগাইলের বাইরে যায়নি। এখনো সচেতনতার জোর দিয়ে করোনা প্রতিরোধ করা সম্ভব হতে পারে।

করোনা নিয়ে বাংলাদেশের সামনের দিনগুলোর ব্যাপারে নোবেলজয়ী মোহাম্মদ ইউনূস সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তাঁর ভেরিফাইড আইডি থেকে একটি সচেতনতামূলক বার্তা দেন। সেখানে তিনি বলেছেন,”করোনা রোগের বিস্তারের গতি দেখলে যে কোনো মানুষ থ হয়ে যাবে।” বাংলাদেশের হয়েই তিনি বলেন, “প্রতি মহুর্তে যেন আমরা সুযোগ হারিয়ে ফেলছি। এখনো বিষয়টা বুঝে উঠতে পারলে আমাদের সামনে যেরকমের যুদ্ধ আমরা সেরকমের প্রস্তুতি নিতে পারতাম। যুদ্ধটার চেহারাটা যেন আমরা কেউ দেশের মানুষের কাছে তুলে ধরতে পারছি না। চেহারাটা পরিষ্কার বুঝতে পারলে সহজে সিদ্ধান্ত নিতে পারতাম যে— জীবনের উপরেই যখন হামলা, জীবন বাজী রেখেই এখন লড়াইতে নামবো।”

সম্প্রতি আলোচিত বক্তা মিজানুর রহমান আজহারীও তাঁর ভেরিফাইড আইডি থেকে একটি সচেতনতামূলক শিক্ষনীয় পোস্ট শেয়ার করেছেন। তিনি সকলের ভালোর জন্য বলেন,”এখনি সচেতন না হলে সামনে ভয়াবহ অবস্থা অপেক্ষা করছে।”

তিনি তাঁর স্ট্যাটাসের এক পর্যায়ে বলেন,”আমরা প্রায় তিন মাসের মত একটা লম্বা সময় পেয়েছি। এ দীর্ঘ সময়ে অন্যান্য আক্রান্ত দেশগুলো থেকে যদি আমরা শিক্ষা না নেই এবং সংকট উত্তরণে তাদের অভিজ্ঞতা যদি কাজে না লাগাই তাহলে আল্লাহ নিজে এসে কিছু করে দিয়ে যাবেন না। এটাই আল্লাহর নিয়ম বা সুন্নাহ। বাঁচতে হলে আমাদেরকেই সাবধানে থাকতে হবে। কুরআন বলছে:
“আল্লাহ তায়ালা ততক্ষণ কোন জাতির অবস্থার পরিবর্তন ঘটান না, যতক্ষণ না তারা নিজেরা তাদের অবস্থার পরিবর্তনের চেষ্টা করে”। (সূরা আল রা’দ, আয়াত: ১১)

আমি ব্যাক্তিগতভাবে গত আটদিন যাবত স্বেচ্ছায় পুরোপুরি ভাবে বাসায় অবস্থান করছি। এর মধ্যে একবারের জন্যেও বাইরে বের হইনি। সব সালাত ঘরে জামাতে আদায় করেছি। বর্তমান সময়ে এর চেয়ে ভালো কাজ আর হতে পারে না। তাই সবাইকে বলছি, প্লিজ প্লিজ সবাই ঘরে থাকুন। এটাই এখন সবচেয়ে বড় মহৌষধ।”

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: করোনা
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন