ধূলোর অন্ধকারে খাগড়াছড়ি-পানছড়ির ১৭ কিলোমিটার সড়ক

 24-P

শাহজাহান কবির সাজু, পানছড়ি :

খাগড়াছড়ি জেলা সদর থেকে পানছড়ি উপজেলার দুরত্ব প্রায় ২৭ কিলোমিটার। এ ২৭ কিলোমিটার রাস্তার মধ্যে ১৭ কিলোমিটার রাস্তা দীর্ঘ বছর যাবৎ বহাল তবিয়ত আছে। ঠিকাদারের গাফিলতি, যোগাযোগমন্ত্রী, গহর রিজভী, দীপংকর তালুকদার, জতীন্দ্র লাল ত্রিপুরা ও কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরার মত বাঘা বাঘা নেতারাও বর্ষা মৌসুমে কুয়ো সমান গর্ত দিয়ে বারংবার সফর করেছিলেন এবং করুণ দশা নিজ চোখে দেখেছিলেন। বর্তমানে সেই কুয়োর ময়লা-আবর্জনা শুকিয়ে এখন ধুলোয় পরিণত। তাই প্রত্যন্ত পানছড়ির বাষট্টি হাজার ভুক্তভোগী মানুষরা নেতাদের দোষ না দিয়ে দোষছেন তাদের চার আঙ্গুলী কপালটাকেই। অথচ এ রাস্তা দিয়ে প্রশাসনিক কর্মকর্তা ছাড়াও সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ বাহিনী, এপিবিএন, ব্যাটালিয়ন আনসার, হিল আনসার ও নরমাল আনসারসহ বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা প্রতিনিয়ত চলাচল করে আসছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, খাগড়াছড়ির চেঙ্গী স্কোয়ার থেকে ১২ নম্বর পর্যস্ত কোন রকমে জোড়া তালি ও নিম্ন মানের সামগ্রী দিয়ে রাস্তাটি যানবাহন চলাচলের উপযোগী করলেও এক মাস না যেতেই রাস্তার  ভিটুমিন উঠে ছোট ছোট গর্তের সৃষ্টি হয়। বাকী ১৭ কিলোমিটার রাস্তায় বর্ষায় বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়ে কুয়োয় পরিণত হয়েছিল। কুয়ো সমান গর্তের মধ্যে দিয়ে বড় যানবাহন কোন রকম চলাচল করলেও ছোট ছোট যানগুলো চলাচল করেছিল কোন রকমে। তাছাড়া বড় যান চললেও ৪০ মিনিটের পথ সময় নিচ্ছে ২ ঘন্টা।

সড়ক ও জনপথ খাগড়াছড়ি সূত্রে জানা যায়, গত ২০১০-১১ অর্থ বছরে খাগড়াছড়ি-পানছড়ি সড়কের উন্নয়নের জন্য ৪ কোটি ৪৪ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। ২০১১ সালের এপ্রিল মাসে কাজটি করার দায়িত্ব পান খাগড়াছড়ির ঠিকাদার এস অনন্ত বিকাশ ত্রিপুরা। তিনি ৮.২০ কিলোমিটার রাস্তা সংস্কার করে বাকী ১৭ কিলোমিটার রাস্তায় হাত দেওয়া হয়নি। ঈদের আগে জেলা প্রশাসকের সহযোগিতায় যান চলাচলের জন্য কোনরকম জোড়া তালি দিয়ে উপযোগী করা তোলা হলেও বর্তমানে অবস্থা আরো বেগতিক। রাস্তার কাপেটিং না থাকায় মাটি ও ধুলোর উপর দিয়েই চলছে যানবাহন। তাই ধুলোয় সামনে পিছনে কি আছে তা বুঝা মুশকিল হয়ে প্রতিনিয়ত দূর্ঘটনায় পতিত হচ্ছে বিভিন্ন যানবাহন। দূর্ঘটনা ঘটিয়ে অনেক গাড়ী পার পেয়ে যাচ্ছে কারণ ধূলোর অন্ধকারে গাড়ীর নাম, নাম্বার দেখা না যাওয়ার কারণে।

তাছাড়া রাস্তার বিষাক্ত ধুলোয় স্কুল পড়ুয়া কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীরা আক্রান্ত হচ্ছে বিভিন্ন ধুলোবাহিত রোগে। যার ফলে এবারের জেএসসি ও পিএসসি পরীক্ষায় অত্র এলাকায় অনেকেই অনুপস্থিত ছিল বলে বিশ্বস্থ সূত্রে জানা যায়। অত্র সড়কের কয়েকজন গাড়ী চালকের সাথে আলাপ কালে জানা যায়, তারা শুধু অভাবের তাড়নায় জীবনের ঝুকি নিয়ে এ রাস্তা দিয়ে গাড়ী চালাচ্ছেন। পানছড়ির সাথে খাগড়াছড়ির বিকল্প কোন যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হয় যাত্রী সাধারণকেও। সড়কের এই নাজুক ও বেহাল দশা দেখে  ভূক্তভোগীরা চরম ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করে বলছেন পার্বত্য জেলা পরিষদ আর সড়ক ও জনপথের রশি টানাটানি খেলার শেষ বাঁশি কখন বাজবে ?

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

One Reply to “ধূলোর অন্ধকারে খাগড়াছড়ি-পানছড়ির ১৭ কিলোমিটার সড়ক”

  1. খুবই গুরুত্বপুর্ন সংবাদ । সরকারের সহযোগীতা কামনা করছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন