খাগড়াছড়িতে মুরগির মাংস বিক্রির ব্যতিক্রমী হাট

fec-image

খাগড়াছড়িতে পাহাড়ি জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত বাজারগুলোতে কাটা মুরগি মাংসের ব্যতিক্রমী শতাধিক হাট। এ হাট থেকে ক্রেতারা কিনতে পারেন ১’শ গ্রাম থেকে শুরু করে যার যতটুকু প্রয়োজন ততোটুকুই কাটা মুরগির মাংস এবং বিভিন্ন অংশ। পাহাড়িরে মুরগির মাংসের হাটে বিক্রেতারা পাহাড়ি ও পাহাড়িরাই এ হাটের অন্যতম ক্রেতারা।

কর্মজীবী নারী-পুরুষ থেকে গৃহিণী ও ব্যস্ততম জীবনে সময় বাঁচাতে সবাই ছুটছেন রেডিমেট এ মুরগির মাংসের হাটে। বিভিন্ন সমাজিক অনুষ্ঠানেও এ হাটের মাংস সরবরাহ হয়ে থাকে। তবে এ হাটের কারণে সব চেয়ে বেশি সুবিধা পাচ্ছেন অসচ্ছল মানুষ। যাদের পক্ষে এক সাথে একটি মুরগি কেনার সামর্থ্য নেই তারাও মুরগির মাংস খাওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। এই কাঁটা মুরগির মাংসের কারণে যেমনি সব ধরনের মানুষ তাদের চাহিদা মেটাতে পারে। তেমনি সকলের সময় বাঁচে অনেক বেশি।

মুরগী কোনো কিছু না করে বাড়িতে নিয়ে ধুয়ে রান্না করতে পারেন। এতে করে নিজেদের অনেক সময় বেঁচে যায়। ফলে কাঁটা মুরগির মাংস। ফলে কাটা মুরগির মাংসের এ হাট বেশ জনপ্রিয়তাও পেয়েছে। যার ফলে এই কাঁটা মুরগির চাহিদা পাহাড়ে দিন দিন বেড়েই চলছে। তবে স্বাস্থ্য বিভাগ মুরগি জবাই ও বেচাকেনার ক্ষেত্রে পরিচ্ছন্নতা ও সময় নিশ্চিত করার তাগিদ দিয়েছেন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, খাগড়াছড়ির বিভিন্ন হাট-বাজারে প্রতিদিন বিভিন্ন কাঁটা মুরগি-হাঁসের মাংস বিক্রি হয় ৪ থেকে ৫ হাজার কেজি। এছাড়াও প্রতিদিন জেলার বিভিন্ন ছোট বড় বাজারে সকাল -বিকেল বিক্রি চলে এই কাঁটা মুরগির মাংস। এতে করে ব্যবসায়ীরা যেমন আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে তেমনি চাকরিজীবী মানুষের সময় বেঁচে যাচ্ছে। তেমনি আর্থিক সংকটে থাকা হতদরিদ্র মানুষের মুরগির মাংসের চাহিদা মেটাতে সক্ষম হচ্ছে।

প্রতিটি মুরগির জন্য আলাদা মূল্য নির্ধারণ করে রেখেছে বিক্রেতারা। পাবেন হাঁসের কাটা মাংস। পুরো মুরগির যে অংশ থেকে পছন্দ হয় সেটাই কিনে নিতে পারেন ক্রেতারা। যে যাই কিনুক ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী পিছ করে দেন বিক্রেতারা। বিশেষ করে পাহাড়ের কর্মজীবী মানুষের জন্য এই কাঁটা মুরগি খুব সুবিধাজনক।

বাজারগুলোতে বয়লার মুরগী কেটে বিক্রি করছে ৩৫০ টাকায় কেজি। দেশি মুরগী বিক্রি হচ্ছে ৬৫০ টাকায়। হাঁসের মাংস বিক্রি হচ্ছে কেজি ৭শ টাকা। বিক্রেতারা জানান, একটা ১ কেজি ওজনের মুরগী কাটার পর তার চামড়া, পশম ও পেটের ভেতরের নাড়িভুঁড়ি ফেলে দিলে মূল মাংস ৬০০ গ্রামে দাঁড়ায়। যে কারণে দামের পার্থক্য দেখা যায়।

খাগড়াছড়ির মধুপুর বাজারে মুরগী কিনতে আসা অলক চাকমা জানান,বর্তমান বাজারে সবকিছুর দাম অনেক বেশি। আমাদের সংসার চালাতে খুব হিমশিম খেতে হচ্ছে। আগে যেখানে ১ কেজি কিনতে পারতাম এখন আধা কেজি কিনে সংসারে খাওয়া শেষ করতে হয়। সীমিত আকারে সংসার চালাতে হচ্ছে।

মুরগী বিক্রেতা জানান, আগে অনেক বেশি বিক্রি হতো এখন কম বিক্রি হয়। আগের চেয়ে এখন দাম বেশি এ জন্য। এখন আমরা বেশি লাভ করতে পারি না মুরগি দাম বেশি এজন্য। তাই সীমিত লাভে বিক্রি করতে হয়।লাভ কম হয়।

অপর বিক্রেতা রাজন ত্রিপুরা জানান,প্রতিটি বাজারে তার ২ হাজার কেজি মুরগী বিক্রি হয়। আগে অনেক বেশি লাভ হতো এখন খুব কম লাভ হয়। ব্যবসা কম দোকান বেশি তাই। যারা কাটাছিড়া করেন না তারা এখান থেকে মাংস কিনে নিয়ে যায়। এ জন্য ক্রেতাদের সুবিধা। তারা শুধু ধুয়ে রান্না করতে পারে এটা তাদের জন্য ভালো।

উৎপল চাকমা বলেন, এই মুরগী বাজার থেকে কিনে বাসায় নিয়ে ধুয়ে রান্না করতে পারি। কোনো প্রকার ভোগান্তি পোহাতে হয় না। তাই এই মুরগী বাজার থেকে কিনলে আমাদের জন্য খুবই ভালো। আমরা আগে একটু বেশি কিনতাম এখন কম কিনি। যা প্রয়োজন তা কিনি।

হোটেল ব্যবসায় হিতু চাকমা বলেন, এই কাটা মুরগি মাংস কিনে আনলে আমাদের কিছু করা লাগেনা। সব রেডিমেড পাওয়া যায়। তাই বাজার থেকে কাঁটা কুটা করে নিয়ে আসি। শুধু ধুয়ে রান্না করলেই কাস্টমারকে খাওয়া পারি। কোনো জামেলা শয়ানা
খাগড়াছড়ি জেলা সিভিল সার্জন ডাক্তার মোহাম্মদ ছাবের মুরগি জবাই ও বেচাকেনার ক্ষেত্রে পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করার তাগিদ দিয়েছেন। স্বাস্থ্য সম্মত উপায়ে নিতে হবে। মুরগি জবাই করার পর ৬ ঘণ্টার বেশি রাখা যাবে না। বিক্রির সময়ও মশা-মাছি যাতে মাংসের উপর বসতে না সে খেয়াল রাখতে হবে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন