খাগড়াছড়িতে বছরজুড়ে ছিল নারী নির্যাতনের ঘটনা

নারী নির্যাতন

মুজিবুর রহমান ভুইয়া :

আজ ৮ মার্চ। আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন দিবস। সারাদেশের ন্যায় খাগড়াছড়িতে নারীর ক্ষমতায়ন-মানবতার উন্নয়ন শ্লোগানে শানিত হয়ে অনেক ঘটা করেই পালন করা হয়েছে দিবসটি। এসময় একটি আঞ্চলিক সংগঠনের নারী কমিটির নেতৃবৃন্দসহ অনেকেই নারী অধিকার আর নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে অনেক বাণী শুনিয়েছে। কিন্তু পেছনের ফেলে আসা নারী নির্যাতনের মতো লোমহর্ষক ঘটনাগুলো তাদেরকে কোন বক্তৃতায় বলতে শোনা যায়না। এমনকি কোন নারী নির্যাতিত হলেও তার পাশে দাঁড়াতে দেখা যায়নি কোন নারী সংগঠনকে।

দেশের সমতল জেলার ন্যায় পাহাড়ী খাগড়াছড়িতেও বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীর ক্ষমতা বাড়ার পাশাপাশি বাঙ্গালী নারী নির্যাতনের ঘটনাও বেড়েছে অনেকাংশে। নারী নির্যাতনের ঘটনা অব্যাহতভাবে বাড়লেও এসব ঘটনা প্রতিরোধে কোন উদ্যোগ দেখা যায়নি। এসব সহিংসতায় মামলা দায়ের করা হলেও কোন ঘটনারই সুষ্ঠু তদন্ত এমনকি কিনারা হয়নি আজো। অনেকেই বিচারের জন্য ঘুরে বেড়াচ্ছে এ দয়ার থেকে ঐ দুয়ারে। সারাদেশের ন্যায় পার্বত্য এ জেলায়ও সরকারি-বেসরকারি চাকুরীতে যেমন নারীদের উপস্থিতি বেড়েছে তেমনি জনপ্রতিনিধি হিসেবেও সফল হয়েছে এ জনপদের নারীরা। শিক্ষা ক্ষেত্রেও নিজেদের অবস্থানকে সুসংহত করেছে এসব নারীরা।

সর্বশেষ সংশোধনী অনুযায়ী খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদেও নারী নেতৃত্ব নিশ্চিত করা হয়েছে। এতো কিছুর পরেও গেল বছর পাহাড়ী এ জনপদ বসবাসরত নারীদের জন্য একটি কলঙ্কজনক বছর। এ বছর পাহাড়ী এ জনপদে উপজাতীয় যুবক কর্তৃক একাধিক বাঙ্গালী নারী ধর্ষন ও শ্লীলতাহানির ঘটনা ঘটেছে অহরহ। বিভিন্ন স্থানে উপজাতি কর্তৃক বাঙ্গালী নারী ধর্ষন ও শ্লীলতাহানির ঘটনাগুলো পাক সময়কার বর্বরতাকেও হার মানিয়েছে। কোন ঘটনারই সুষ্ঠু বিচার হয়নি এখনো। কোন এক অদৃশ্য ক্ষমতাবলে এসব অপরাধীরা রয়ে গেছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।

এ বছরটি ছিল নিরীহ বাঙ্গালী নারীদের জন্য উদ্বেগ-উৎকন্ঠার বছর। আজকের এ দিনে খাগড়াছড়ির বিভিন্ন উপজেলায় যখন ঘটা করে আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন দিবস পালন করা হচ্ছে ঠিক তখনই পাষন্ড স্বামীর নির্যাতনের শিকার হয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটে কাতরাচ্ছে খাগড়াছড়ির গুইমারা থানাধীন বড়পিলাক‘র হত-দরিদ্র সালমা আকতার। কিন্তু কাউকেই সালমার জন্য অনুশোচনা পর্যন্ত করতে শোনা যায়নি। এ দিনেও কেউ দাড়ায়নি নির্যাতিত সালমা‘র পাশে। কেউ মনে করেনি পাষন্ড স্বামীর নির্মম নির্যাতনে নিহত মাটিরাঙ্গার স্কুল শিক্ষিকা ক্রায়োরী মারমা, কেউ মনে করেনি স্বামী-শাশুড়ীর নির্যাতনে ১৬দিন মৃত্যুর সাথে লড়াই করে মারা যাওয়া মাটিরাঙ্গার তবলছড়ির তুলাতলির হালিমা খাতুন কিংবা যৌতুকের বলি মাটিরাঙ্গার বেলছড়ি ইউনিয়নের উত্তরপাড়ার আমেনা আকতার‘র কথা। কেউ মনে করেনি মাটিরাঙ্গা রসুলপুর গ্রামের দুলাভাইয়ের লালসার শিকার হয়ে আত্মহত্যা করা কিশোরী শামসুন নাহার এর কথাও। এসবের বাইরেও আরো অনেক আত্বহত্যার ঘটনা ছিল যা সংবাদ মাধ্যমে নিউজ হওয়া আর একটি অপমৃত্যু মামলার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। হয়তো ঐ সকল আত্বহত্যার পেছনেও কোন বড় কারণ লুকিয়ে ছিল। যা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তে বেরিয়ে আসতো?

খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার শেখ মো. মিজানুর রহমান বলেন, খাগড়াছড়িতে নানা সময়ে সংঘটিত নারী ও শিশু নির্যাতনের প্রতিটি ঘটনাকেই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে অভিযুক্তদের গ্রেফতার এবং ক্ষতিগ্রস্থদের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের মাধ্যমে সেবা দেয়া হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন