সবুজ সবজিতে সেজেছে পানছড়ি দমদমের মাঠ

DOM DOM PIC

শাহজাহান কবির সাজু:

জেলার পানছড়ি উপজেলার ৩নং পানছড়ি ইউপির বিশালাকার একটি গ্রামের নাম দমদম। এই গ্রামের পূর্ব পাশ দিয়ে একে বেঁকে বয়ে গেছে একটি চিকন ছরা। শুকনো মৌসুমে ছরাটি যখন শুকিয়ে যায় তখন এলাকার কৃষকেরা নিজেদের উদ্যেগে প্রায় অর্ধ লক্ষাধিক টাকা ব্যয় করে নির্মাণ করে একটি অস্থায়ী বাঁধ। অল্প অল্প করে এই বাঁধে পানি জমলেই কৃষকরা মেশিনের সাহায্য পানি তুলে জমি করে তোলে চাষের উপযোগী।

বর্তমানে কৃষকরা মাঠের পর মাঠ সাজিয়ে তুলেছে বিভিন্ন ধরনের সবজির মিলনমেলায়। যতদুর চোখ যায় শুধু সবুজের রং মাখানো কার্পেটিং করা সবজির মাঠে মন-প্রাণ সবই জুড়িয়ে তোলে। বাঁশের কঞ্চিতে বাদুর ঝুলা ঝুলছে বরবটি, কাঁচা মরিচ, মাটিতে শুয়ে আছে সবুজ রংঙের শশা, তরমুজ, মাছায় ছুলছে জিঙ্গা, করলা, চিচিঙ্গার মত টাটকা সবজি আর আকাশের পানে উকি মেরে সবুজের বড় বড় পাতা মেলে দাড়িয়ে আছে ভূট্টার গাছ। সরেজমিনে গিয়ে ঘন্টাখানেক পায়ে হেঁটেও কুল-কিনারা খুজে পাওয়া যায়নি দমদমের সবজি বাগানের।

ছোট্ট একটি ঘর দেখে এগিয়ে গিয়ে জানতে পারি এটি সবজি বাগানের সেন্ট্রি পোষ্ট। চোর ও শত্রুর ভয়ে রাতকে রাত কৃষকরা এই ঘরটিতেই পাহারারত থাকে। তারপরও মাঝে মধ্যে শত্রুর বিষধর চোবলে নষ্ট হচ্ছে বিভিন্ন সবজির গাছ। গত তিন-চার দিনে করলা, ভূট্টা ও বরবটি সহ বেশ কিছু গাছ মূলসহ উপড়ে ফেলেছে।

কথা হয় কৃষক শফিকুর ইসলামের সাথে, সে জানায় এই মাঠের কৃষক সাত্তার, বেলাল, রমজান, শরবত আলী, শহীদ, আলী আজ্জম সহ অনেক কৃষকই দমদম গ্রামের বাসিন্দা। শফিকের মুখে মিষ্টি হাসি দেখেই বুঝা গেছে ফলন এবার বাম্পার। সে এবার ৫ কানি জমিতে বিভিন্ন সবজির চাষ করেছে। গতবারেও সবজি করেছিল ৫ কানিতে। সর্বমোট বিক্রি করেছিল ৩ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা। যার পূজি ছিল ১ লক্ষ টাকার মত। এবার প্রায় ১ লক্ষ ৬৫ টাকার মত পূজি লেগেছে বলে জানায়।

প্রথম বারের মত রবিবার ১২২কেজি বরবটি, ২২ কেজি চিচিঙ্গিা ও ২৫ কেজি জিঙ্গা বাজারজাত করেছে। যার বাজার মূল্য প্রায় ৭ হাজার টাকার মত। শফিক জানায় সে কৃষি কাজ করেই ১ ছেলে ৪ মেয়ে ও সহধর্মিনীকে নিয়ে সুখেই বাস করছে। তার সহধর্মিনী ও সন্তানরা লেখাপড়ার ফাঁকে ফাঁকে জমিনে সহযোগিতার হাত বাড়ায়।

বয়োবৃদ্ধ কৃষক বেলালের সাথে আলাপকালে জানায় সে ৩ কানি জমিতে জিঙ্গা, চিচিঙ্গা, করলা, বরবটি, শশা ও কাঁচা মরিচের চাষ করেছে। কৃষক বেলালের ধারনা ২ লক্ষাধিক টাকার মত বিক্রি হবে। তারা উভয়েই জানায়, উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো: মানিক মিয়ার পরামর্শ নিয়েই জমিনের পরিচর্যা করে থাকে। তাছাড়া মানিক মিয়া সরেজমিনে এসে তাদের কি কি করণীয় সবই বুঝিয়ে দিচ্ছে এবং মোবাইলেও বিভিন্ন টিপস দিচ্ছে বলে তারা জানান।

বিকাল সাড়ে চারটার দিকে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো: মানিক মিয়া নিজেই উপস্থিত হয় সবজি মাঠে। তার সাথে আলাপকালে জানা যায়, বর্তমানে দমদমের এই মাঠে প্রায় ১০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন সবজির চাষ হয়েছে। যা পানছড়ির চাহিদা মিটিয়ে জেলায়ও রপ্তানি করা যাবে। তাছাড়া কৃষকদের রাসায়নিক সারের পরিবর্তে জৈব সার বা কম্পোষ্ট সার ব্যবহারের প্রতিও উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। যা গৌবর. লতা-পাতা. হাঁস-মুরগীর বিষঠা দিয়ে স্বল্প খরচেই তৈরী সম্ভব। তাছাড়া এসব ব্যবহারে জমিনের উর্বরতা বদ্ধি পায় বলেও জানান উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো: মানিক মিয়া।

অত্র এলাকার কৃষকের দাবী দমদম গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ছরাটি বছরের বেশীরভাগ সময়ই থাকে শুকনো। তাছাড়া কৃষকদের অর্থ দিয়ে তৈরী বাঁধটি অল্প বৃষ্টি হলেই পাহাড়ী ঢলে উপড়ে নিয়ে যায়। যার ফলে প্রতি বছরই বাঁধ নির্মানে অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। তাই তাদের দাবী সরকার একটু দৃষ্টি দিয়ে যদি এই ছরায় একটি স্লুইস গেট নির্মান করে দেয় তাহলে অত্র এলাকার চাষীরা যেমনি উপকৃত হতে তেমনি পানছড়ি দমদম মাঠের সবজি খাগড়াছড়ি জেলা ছেড়ে দেশের অন্যান্য জেলায়ও বাজারজাত করা যাবে বলে তাদের দৃঢ় বিশ্বাস।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন