খাগড়াছড়িতে বিএনপি নেতাকে গলা কেটে হত্যা: অজ্ঞান স্ত্রীকে দেখতে স্থানীয় সাংসদ ও পুলিশ সুপার হাসপাতালে
নিজস্ব প্রতিবেদক:
খাগড়াছড়ির জেলার দিঘীনালায় বিএনপির নেতা বাদল খাঁ(৪১)কে গলা কেটে হত্যা করেছে অজ্ঞাতনামা দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় লাশের পাশেই স্ত্রী কুলসুম বিবিকে অজ্ঞান অবস্থায় দেখতে পেয়ে পুলিশের সহযোগীতায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। খবর পেয়ে নিহতের স্ত্রীকে দেখতে হাসপাতালে ছুটে যান স্থানীয় সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা ও খাগড়াছড়ি পুলিশ সুপার মো: মজিদ আলী।
জানা যায়, রবিবার রাতে জেলার দিঘীনালা থানাধীন অনাথ আশ্রম নামক গ্রামে বাদল খাঁ (৪১), পিতা-রশিদ খাঁ কে জবাই করে হত্যা করে অজ্ঞাত সন্ত্রাসীরা। কে বা কারা তাকে জবাই করে এই রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা চলতেছে। লাশ ময়নাদতন্তের জন্য খাগড়াছড়ি জেলা সদর হাসপাতালে প্রেরণ করা হচ্ছে। এই হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত ব্যাক্তিদের সনাক্ত এবং রহস্য উদঘাটনের জন্য পুলিশি কার্যক্রম অব্যাহত আছে বলেও সূত্রে জানা গেছে।
এদিকে বিএনপির নেতা বাদল খাঁ’কে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহতের শ্যালক আবু বক্কর সিদ্দিক অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামী করে মামলা করেছে। বিষয়টি নিশ্চিত করে দিঘীনালা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো: মিজানুর রমহান জানান, তিন সন্তানের জনক বাদল মিয়া চা বিক্রি করে জীবন নির্বাহ করতো। আজ (সোমবার) সকালে চা দোকানটি বন্ধ দেখে দেখে স্থানীয় লোকজন দরজা খুলে দেখে গলা কাটা অবস্থায় বাদল খাঁ’র লাশ পড়ে আছে। পাশে অচেতন অবস্থায় ছিল নিহেতের স্ত্রী কুলসুম বিবি। তিনি আরো জানান, কুলসুম বিবিকে প্রথমে দিঘীনালা এবং পরে খাগড়াছড়ি হাসাপাতালে পাঠানো হয়েছে। স্ত্রীর জ্ঞান ফিরলে হত্যাকাণ্ডের কারণ জানা যাবে।
পুলিশ ও স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, উপজেলার অনাথ আশ্রম এলাকার নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চায়ের দোকানে কাস্টমারদের নিয়ে প্রতিদিনের মতো টেলিভিশন দেখছিলেন। রবিবার রাত সাড়ে এগারটার দিকে হঠাৎ মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। পরে তাকে ধরাধরি করে শোবার ঘরে নিয়ে মাথায় পানি দিয়ে শুইয়ে দেয়। পরে স্ত্রী কুলছুম বেগমসহ দোকান বন্ধ করে ঘুমিয়ে পড়ে। পর দিন সোমবার সকালে বড় ছেলের ডাকে ঘুম থেকে না ওঠায়, দরজা ভেঙ্গে ঘরে প্রবেশ করার পর বাদল খাঁ’র গলা কাটা লাশ দেখা যায়। পরে ছেলের চিৎকারে প্রতিবেশীরা এগিয়ে আসে। তবে ঘটনার পর থেকে ঘরে রক্ষিত প্রায় ৫২ হাজার টাকা চুরি হয়েছে বলে জানা যায়।
বড় ছেলে শাকিল জানান, রাতে বাবা অসুস্থতার খবর শুনে সকালে বাড়ি আসি। কিন্তু ঘরের দরজা বন্ধ থাকায় ডাকাডাকি করি। কিন্ত তারা দরজা না খুলায় ভাঙতেই দেখি বাবার গলা কাটা লাশ এবং মা অচেতন অবস্থায় পড়ে আছে।
নিহতের চাচাত ভাই বশির খাঁ জানান, প্রতিদিনের মতো রবিবার রাতে আমি, লিটন মোল্লা এবং আবদুল জলিলসহ একসাথে বসেই টিভি দেখছিলাম। ভাই হঠাৎ করে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। পরে তাকে তাড়াহুড়া করে থাকার ঘরে নিয়ে শুইয়ে ভাইয়ের মাথায় পানি দিই। ভাবছি ভাই ঘুমিয়ে গেছে। তাই বাড়ি চলে গেছি। পরে সকালে শুনি ভাইকে জবাই করে হত্যা করা হয়েছে।
স্থানীয় ওষুধ বিক্রেতা মো. মামুন জানান, ঘটনার পর শুনেছি, গত রবিবার ব্রাক থেকে ঋণ বাবত নেয়া বিশ হাজার টাকা এবং ঘরে রক্ষিত বত্রিশ হাজার টাকাসহ বায়ান্ন হাজার টাকা চুরি যায়।
খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার নয়নময় ত্রিপুরা জানান, ঘটনার আগে দুর্বৃত্তরা নেশা জাতীয় কিছু খাইয়েছে বলে মনে হচ্ছে। কুলসুম বিবি এখনো অচেতন হলেও শঙ্কামুক্ত রয়েছেন বলেও জানান তিনি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে দিঘীনালা উপজেলা বিএনপির সভাপতি মোসলেম উদ্দিন জানান, বাদল খাঁ দিঘীনালা উপজেলা বিএনপির সদস্য ও সাবেক ইউনিয়ন কৃষক দলের সাধারন সম্পাদক ছিলেন। সদ্য সমাপ্ত ইউপি নির্বাচনে মেম্বার প্রার্থী ছিলেন। মেরুং ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন জানান, গত ইউপি নির্বাচনের পর বিজিত প্রার্থীর লোকজন বাদল খাঁ’র উপর হামলা চালিয়েছিল।
দিঘীনালা উপজেলা বিএনপির সভাপতি মোসলেম উদ্দিন জানান, বাদল মিয়া দীঘিনালা উপজেলা বিএনপির সদস্য ও সাবেক ইউনিয়ন কৃষক দলের সাধারন সম্পাদক ছিলেন। সদ্য সমাপ্ত ইউপি নির্বাচনে মেম্বার প্রার্থী ছিলেন।
খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য ওয়াদুদ ভূইয়া বিএনপির নেতা বাদল খাঁ হত্যাকাণ্ডের নিন্দা ও জড়িতদের গ্রেফতারের দাবী জানিয়েছেন।
এদিকে রবিবার দুপুরে অচেতন কুলসুম বিবিকে দেখতে খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে যান স্থানীয় সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা ও পুলিশ সুপার মো: মজিদ আলী। তারা কুলসুম বিবির খোঁজ-খবর নেন।