খাগড়াছড়িতে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলার নামে চলছে হাউজি-লটারী আর অশ্লীল নাচ-গান

%e0%a6%9c%e0%a7%81%e0%a7%9f%e0%a6%be

পার্বত্যনিউজ ডেস্ক:

চারপাশে ঘনবসতি, সরকারী অফিস, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আর ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। এর মাঝেই খাগড়াছড়ি সরকারী হাইস্কুল মাঠে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলার নামে খাগড়াছড়ি পৌরসভা চালাচ্ছে অবৈধ হাউজি, লটারী আর অশ্লীল নাচ,গান। প্রশাসনের শীর্ষ দুই প্রতিষ্ঠান থেকে মাত্র কয়েক’শ গজের মধ্যেই এ মেলা চললেও মেলার লাগাম টানছেন না কেউ ই। শুধু তাই নয়, দিনভর খাগড়াছড়ি শহর এবং আশেপাশে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে হাউজি আর লটারীর মাইকিং।

জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে খাগড়াছড়ি পৌরসভাকে এ মেলার অনুমতি দেয়া হয় ১৫ ডিসেম্বর বিকেলে। কিন্তু তার এক সপ্তাহ আগে থেকেই পৌরসভার লোকজন স্কুল কর্তৃপক্ষের কোন অনুমতি না নিয়ে মাঠের দখল নিয়ে পুরো মাঠ জুড়ে গড়ে তোলেন মেলার সব স্থাপনা। ১৬ ডিসেম্বর বিকেল থেকে চলমান কথিত এই বিজয় মেলার অত্যাচারে মেলাঙ্গনের আশপাশের আবাসিক বাসিন্দা থেকে শিক্ষার্থী, নারী ও শিশু এবং মুসল্লীরা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন।

অন্যমিডিয়া

জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে মেলা আয়োজনের জন্য দেয়া ২৬টি শর্তে পৌরসভাকে দেয়া অনুমতি পত্রের ১নং শর্তে উল্লেখ রয়েছে, বিজয় মেলার নামে কোন প্রকার জুয়ার আয়োজন, কোন অশালীন নৃত্য প্রদর্শণ এবং বিজয় দিবসের ভাবগাম্ভীর্য বিনষ্ট হতে পারে এমন কোন অনৈতিক কাজ করা যাবে না। কিন্তু খাগড়াছড়ির পৌর বিজয় মেলার সূচনা দিন থেকে এখন পর্যন্ত অবাধে চলছে জুয়া-হাউজি-লটারী, অশ্লীল নাচ আর গান। স্থানীয় প্রশাসনের চাপাচাপিতে মঙ্গলবার থেকে পৌরসভা মেলার সময়সীমা এবং শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নিলেও বহাল তবিয়তে চালাচ্ছে জুয়া-হাউজি আর টাকার বিণিময়ে অশ্লীল নাচ,গান।

পার্বত্য চট্টগ্রামের মুক্তিযোদ্ধা ও রাজনীতিক রণ বিক্রম ত্রিপুরা পৌর বিজয় মেলার বিষয় সর্ম্পকে বলেন, এই মেলার সাথে মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কোন সম্পর্ক নেই। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে পুঁজি করে চেতনা বিরোধী কাজ করা অনুচিত। তিনি মেলার স্থান নির্বাচন, মেলা পরিচালনা এবং নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসনের আরও সজাগ হবার অনুরোধও জানান। তার মতো মুক্তিযোদ্ধা মো. শফিও মন্তব্য করেন, মেলায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতি অবমাননাকর কোন কিছু হয়ে থাকলে প্রশাসনের উচিত দ্রুত তা খতিয়ে দেখা এবং ব্যবস্থা নেয়া।

এদিকে মেলা সর্ম্পকে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে মিলনপুর, হাসপাতাল, টিএন্ডটি এবং কালেক্টর এলাকার বেশ কয়েকজন বাসিন্দা  জানান, প্রশাসনের নাকের ডগায় এভাবে অনিয়ন্ত্রিত মেলা চলতে দেয়া ঠিক হচ্ছে না। যেখানে পৌরসভা তার বাসিন্দাদের রুচিসম্মত পরিবেশ এবং বিনোদন দেয়ার কথা, সেখানে জুয়া-হাউজি আর অশ্লীলতার মাধ্যমে উল্টো স্বাভাবিক জীবনযাত্রার ব্যাঘাত সৃষ্টি করা হচ্ছে।

মেলার অনুমতি এবং শর্ত লঙ্ঘনের বিষয়ে প্যানেল মেয়র পরিমল দেবনাথ টেলিফোনে বলেন, প্রশাসনের অনুমতি নিয়েই মেলা পরিচালিত হচ্ছে। জুয়া এবং হাউজির অনুমতি আছে কী না, এমন প্রশ্নের উত্তরে বলেন, এই বিষয়টি মেয়র সাহেব জানে না।

এদিকে আয়কর বিভাগ (খাগড়াছড়ি ও হাটহাজারী) সার্কেলের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, হাউজি এবং জুয়া আয়োজনের জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন প্রয়োজন। অনুমতি ছাড়া খাগড়াছড়িতে চলমান মেলায় কর ফাঁকির জন্যই অনুমতি নেয়া হয় নি। দাপ্তরিকভাবে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।

প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন পৌর কাউন্সিলর এবং কর্মচারী বলেন, এ মেলায় যা হচ্ছে তা আমাদের ধর্মীয় ও নৈতিক মূল্যবোধের পরিপন্থী।

জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ ওয়াহিদুজ্জামান টেলিফোনে মেলার শর্ত লঙ্ঘনের বিষয়টি লিখিতভাবে জানানোর পরামর্শ দিয়ে বলেন, সেটি হলে আইনী ব্যবস্থা নিতে সুবিধা হবে।

সূত্র: দৈনিক সুপ্রভাত

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন