গোপনীয়তা রক্ষা করে কক্সবাজারে চলছে বিনামূল্যে এইডস পরীক্ষা

03

নিজস্ব প্রতিনিধি:

কক্সবাজার সদর হাসপাতালে সম্পূর্ণ গোপনীয়তার সাথে বিনামূল্যে এইচআইভি পরীক্ষা ও কাউন্সেলিং সেবা প্রদান করা হচ্ছে। মরণব্যাধি এইডস হয় এইচআইভি ভাইরাসের মাধ্যমে। এই ভাইরাস শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট করে ফেলে। ফলে যে কোন রোগে আক্রান্ত হয়ে রোগী মারা যায়।

এই ভাইরাসে যে কেউ আক্রান্ত হতে পারে। আক্রান্ত ব্যক্তি কারো না কারো আপনজন অথবা নিজেও হতে পারে। তাই দ্রুত এইচআইভি পরীক্ষা করানো প্রয়োজন। আর আক্রান্ত হলে হতাশ না হয়ে চিকিৎসাসহ কাউন্সেলিং সেবা গ্রহণ করা উচিত। অনেকে লজ্জা ও গোপনীয়তা রক্ষা না থাকার ভয়ে এইচআইভি পরীক্ষা করাতে চান না। যার ফলে বড়ধরণের ক্ষতি হচ্ছে জনস্বাস্থ্যের।

তাই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রনে ২০১৬ সাল থেকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে সম্পূর্ণ গোপনীয়তার সাথে বিনামূল্যে এইচআইভি পরীক্ষা ও কাউন্সেলিং সেবা প্রদান করা হচ্ছে। সদর হাসপাতালের তৃতীয় তলার ৩১৩ নাম্বার রুমে এ সেবা প্রদান করছে আশার আলো সোসাইটি।

এইডস নিয়ে নানা ধরনের রূপক গল্প রয়েছে। অনেকে এইডসদেক ছোঁয়াচে মনে করে। আবার শুধু অনিরাপদ (কনডম ছাড়া) যৌন মিলনকেই এইডসের কারণ বলে দাবি করে। যদিও অনিরাপদ যৌন মিলন ছাড়াও নানা কারণ রয়েছে এইচআইভি ভাইরাস ছড়াতে।

আশার আলোর সোসাইটির কাউন্সেলর মোহাম্মদ মাহমুদুল ইসলাম জানান, এখানে যে কোন ব্যক্তির এইচআইভি পরীক্ষার রিপোর্ট অত্যন্ত গোপনীয়তার সাথে করা হয়। রোগীর অনুমতি ছাড়া এই রিপোর্ট পরিবার, অফিস অথবা অন্য কাউকেই দেয়া হয়না। কোন ব্যক্তি এইচআইভি ভাইরাসে আক্রান্ত হলে বিনামূল্যে নিয়মিত চিকিৎসকের আন্তরিক পরামর্শ, ব্যবস্থাপত্রসহ প্রয়োজনীয় ঔষধ দেওয়া হয়। এছাড়া বিনামূল্যে প্রয়োজনীয় প্যাথলোজিক্যাল টেস্ট দেওয়া হয়। এইডস আক্রান্ত ব্যক্তিদের অধিকার ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা হয়। ইতিবাচক জীবন যাপনের জন্য বিভিন্ন ধরনের কাউন্সেলিং সেবা প্রদান করা হয়। এছাড়া মা থেকে শিশুদের এইচআইভি সংক্রমণ রোধে প্রয়োজনীয় সেবা প্রদান করা হয়।

এইডস সর্ম্পকে তাদের দেওয়া তথ্যে জানা যায়, এইচআইভি ভাইরাস মানুষের শরীরে প্রবেশের পরে ধীরে ধীরে শরিরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ধবংস করে ফেলে। আর এই ধবংসের প্রক্রিয়া চলে ৩ থেকে ১০ বছর অথবা তারও বেশি সময় ধরে। রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া যায় শরীরে এইচআইভি ভাইরাস আছে কিনা। এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তি অন্য সব ব্যক্তির মত সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারেন। এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যখন একেবারেই নষ্ট হয়ে যায় তখন ওই ব্যক্তি সহজেই বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হন। যা সহজে ভালো হয়না। এই অবস্থাকে এইডস বলা হয়।

এইচআইভি ছড়ায় অপরিক্ষিত বা আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত গ্রহণ করলে, আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত অপরিশোধিত সুই বা সিরিঞ্জ ব্যবহার করলে। আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে অনিরাপদ (কনডম ছাড়া) যৌন কাজ করলে। এছাড়া এইচআইভি আক্রান্ত মা থেকে (শিশুতে গর্ভে থাকাকালীন সময়ে, প্রসবকালীন সময়ে এবং মায়ের দুধ পান করলে) এইডস ছড়ায়। এইচআইভি মোটেও ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস শুধু আক্রান্ত ব্যক্তির রক্তে, বীর্যে, যোনিরসে এবং বুকের দুধে থাকে।

এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে ওঠা-বসা, খেলাধুলা, কোলাকুলি বা সাধারণ মেলামেশার মাধ্যমে এইচআইভি ছড়ায় না। একই থালা-বাসনে একসাথে খাবার খেলে, একই পুকুরে গোসল করলে এবং একই পায়খানা ব্যবহার করলে এইচআইভ ছড়ায় না। হাঁচি-কাশি, থুথু এবং মশা-মাছি বা অন্যান্য পোকা-মাকড়ের মাধ্যমেও এইচআইভি ছড়ায় না।

এখন পর্যন্ত এইচআইভি প্রতিরোধের কোন ঠিকা আবিষ্কার হয়নি। কিন্তু কিছু উপায় মেনে চললে এইচআইভ প্রতিরোধ করা যায়। তা হল, স্বামী-স্ত্রী ছাড়া অন্য নারী বা পুরুষের সাথে যৌনমিলন থেকে বিরত থাকতে হবে। প্রয়োজনে আবশ্যই কনডম ব্যবহার করতে হবে। রক্ত নেয়ার আগে রক্তদাতার রক্তে এইআইভি আছে কিনা তা পরীক্ষা করে নিতে হবে। ইনজেকশন নেয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবার নতুন সুই ও সিরিঞ্জ ব্যবহার করতে হবে। এইচআইভি আক্রান্ত মায়েদের সুবিধা-অসুবিধা বিবেচনা করে অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে সন্তান ধারনের সিন্ধান্ত নেওয়া উচিত।

কক্সবাজার সদর হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডাক্তার পুচনু জানান, এইচআইভি ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির প্রতি ঘৃণা কিংবা অবহেলা করা যাবেনা। চিকিৎসা ও সহমর্মিতার মাধ্যমে সেবা প্রদান করা উচিত। এইচআইভি বা এইডসের প্রতি অহেতুক ভয় ও আক্রান্তদের প্রতি বৈষম্য করা উচিত নয়। এতে অন্যান্যরা এইচআইভি পরীক্ষা করাতে নিরুৎসাহিত হবে। ফলে নতুন এইচআইভি সংক্রমিতদের সেবা কার্যক্রমের আওতায় আনা কঠিন হয়ে পড়বে। আর আক্রান্তদের চিকিৎসা ও সেবা প্রদান ব্যহত হবে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন