অবৈধ মার্কেট নির্মাণে লাখ লাখ টাকার বাণিজ্য

চকরিয়ায় সড়ক বিভাগের জমি দখলের হিড়িক

fec-image

একদিকে করোনা দুর্দিন, অন্যদিকে বন্যার ক্ষয়ক্ষতি নিরূপনে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলা প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দাপ্তরিক কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি মাঠ পর্যায়ে কাজ করতে গিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। এই সুযোগে উপজেলার বিভিন্নস্থানে সুবিধাভোগী কতিপয় দখলবাজ চক্র মেতে উঠেছে সরকারি ভূ-সম্পদ জবরদখলে। দখলে নেয়া সরকারি জমিতে মার্কেট ও দোকান নির্মাণকরে জড়িতরা প্রতিমাসে লাখ লাখ টাকার বাণিজ্য চালাচ্ছে।

সর্বশেষ কোরবানী ঈদের রাতে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়ক লাগোয়া চকরিয়া উপজেলার বরইতলী একতাবাজার (গরুবাজার) এলাকায় ঘটেছে সড়ক বিভাগের অধিগ্রহনকৃত আরএস ৬৭০৯ খতিয়ানের বিএস ১৩২৯৭ দাগের জমি জবরদখলের ঘটনা।

অবশ্য ইতোমধ্যে এলাকায় সড়ক ও জনপদ বিভাগের কোটি টাকা দামের জমি দখলে নিয়ে সেখানে আলিশান মার্কেটও গড়ে তুলেছেন জায়েদ নামের এক প্রভাবশালী। সাম্প্রতিক সময়ে তিনি মার্কেটে নির্মিত একেকটি দোকান থেকে চার থেকে ৬ লাখ টাকা সেলামী নিয়ে ভাড়াও দিয়েছেন। সওজের জমিতে নির্মিত মার্কেটে বনফুল নামের একটি অভিজাত খাবার দোকান থেকে ৬ লাখ টাকা সেলামী নিয়েছেন অবৈধ মার্কেট মালিক প্রভাবশালী জায়েদ। সরেজমিনে গেলে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আশপাশের দোকানীরা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, সড়ক বিভাগের অধিগ্রহনকৃত আরএস ৬৭০৯ খতিয়ানের বিএস ১৩২৯৭ দাগের জমিতে প্রভাবশালী জায়েদ একা নন, তার মতো আরও একাধিক ব্যক্তি প্রভাব খাটিয়ে লম্বা লাইনে দোকানঘর নির্মাণ করেছেন। প্রায় এক যুগের বেশিসময় ধরে গরুবাজার জামে মসজিদ থেকে উত্তরে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীর পর্যন্ত এলাকায় অন্তত শতাধিক দোকান ও মার্কেট নির্মাণ করে জড়িতরা রীতিমত মালিক সেজে মাসিক হারে ভাড়াও উত্তোলন করছেন।

আশপাশ এলাকার পুরানো দখলবাজদের দেখাদেখিতে এবং করোনাকালীন সময়ে প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের ব্যস্ততার সুযোগে ওই এলাকায় সর্বশেষ কোরবানী ঈদের রাতে ঘটেছে নতুন করে জায়গা দখলের ঘটনা। ওই সময় জড়িতরা রাতের মধ্যে সড়কের জমিতে নতুন করে তিনটি দোকান তৈরী করে নিয়েছেন। এখনো চলছে অবশিষ্ঠ জমিতে দখলবাজদের অপতৎপরতা।

বরইতলী গরুবাজার নতুন করে সওজের জমি দখলের সত্যতা স্বীকার করেছেন কক্সবাজার সড়ক ও জনপদ (সওজ) বিভাগের চকরিয়া উপ-বিভাগের সহকারি প্রকৌশলী মো. দিদারুল ইসলাম। তিনি বলেন, খবরপেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে অভিযান চালাই। ওইসময় দোকান নির্মাণের জন্য মজুদকৃত বেশকিছু মালামাল জব্দও করেছি। বর্তমানে বন্যার কারণে আমরা সড়কের উন্নয়নকাজ নিয়ে ব্যস্ত আছি। তারপরও আমরা দখলচেষ্টার বিরুদ্ধে সজাগ রয়েছি।

এব্যাপারে সড়ক ও জনপদ (সওজ) কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী খন্দকার গোলাম মোস্তফা বলেন, বরইতলী একতাবাজারে সড়ক বিভাগের জমি দখলে নিয়ে সেখানে মার্কেট নির্মাণের বিষয়টি আমার জানা ছিলনা। তবে এখন যেহেতু জানতে পেরেছি, অবশ্যই আমাদের অধিগ্রহনকৃত জমিতে নির্মিত সকল অবৈধ মার্কেট-দোকান উচ্ছেদে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তিনি বলেন, কেউ আমাদের জমি দখলে নিয়ে মার্কেট দোকান নির্মাণ করবে, ভাড়া উত্তোলন করে জমিদারী চালাবে, তা কোনভাবে সহ্য করা হবেনা।

বিষয়টি প্রসঙ্গে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ সামসুল তাবরীজ বলেন, সড়ক বিভাগের জমি হলেও সরকারি সম্পত্তি। সেখানে কেউ অবৈধ মার্কেট নির্মাণের সৃুযোগ নেই। সড়ক বিভাগ সহযোগিতা চাইলে অবশ্যই উপজেলা প্রশাসন এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে আইনী পদক্ষেপ নেবে।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: চকরিয়া, জমি দখল, সড়ক বিভাগ
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন