চকরিয়া নিম্নাঞ্চল প্লাবিত, ৬ বসতবাড়ী নদীতে বিলীন

চকরিয়া প্রতিনিধি:

কক্সবাজারের চকরিয়ায় টানা ভারী বর্ষণে মাতামুহুরী নদীতে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পানির নিচে নিমজ্জিত। পানি বন্দি হয়ে পড়েছে তিন লক্ষাধিক জনগোষ্টি। বিভিন্ন অভ্যান্তরীন সড়কের যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

মঙ্গলবার বিকাল চারটার দিকে মাতামুহুরী নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করে প্রবাহিত হয়েছে। নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ার কারনে উপজেলার আঠার ইউনিয়ন ও পৌরসভার বেশির ভাগ নীচু এলাকা পানিতে প্লাবিত হয়ে লোকালয়ে ডুকে পড়েছে। পাহাড়ি ঢলে পানির তোড়ে পড়ে পৌরসভার দিগরপানখালী এলাকায় ছয়টি বসতবাড়ি মাতামুহরী নদীতে তলিয়ে যায়।এতে করে বর্তমানে উপজেলার তিন শতাধিক গ্রামের  তিনলক্ষ জনসাধারণ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

উপজেলার সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজিমুল হক আজিম জানিয়েছেন, টানা ভারী বর্ষণের কারনে মাতামুহুরী নদীতে উজান থেকে পাহাড়ি ঢল নেমেছে। পানির প্রবল স্রোতে  তাঁর ইউনিয়নের বেশির ভাগ এলাকা তলিয়ে গেছে। গতকাল দুপুর নাগাদ সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়নের চারভাগের তিনভাগ এলাকা পানিতে তলিয়ে গিয়ে স্থানীয় লোকজন চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে বলে জানান।

কাকারা ইউপি চেয়ারম্যান শওকত উসমান জানান,ভারী বর্ষণের কারনে নদীতে ঢলের পানির প্রবাহ বেড়ে যাওয়ায় তাঁর ইউনিয়নে নদীর তীরবর্তী বেশির ভাগ এলাকায় পানি ঢুকে পড়েছে। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে রাতের মধ্যে বড় ধরণের বন্যার আশঙ্কা রয়েছে।

চকরিয়া পৌরসভার মেয়র আলমগীর চৌধুরী জানিয়েছেন, টানা বৃষ্টিপাতে মাতামুহুরী নদীতে পাহাড়ি ঢল নামার কারনে পৌরসভার ৮ নম্বর ওর্য়াড়ের কোচপাড়া এলাকার বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে লোকালয়ে পানি ডুকে পড়ে এবং একাধিক স্থানে বেড়িবাঁধ হুমকির মুখে পড়েছে।

দুপুর থেকে বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে মাতামুহুরী নদীর ঢলের পানি লোকালয়ে ঢুকে পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডের অন্তত ৩০ হাজার জনসাধারণ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

উপজেলার চিরিঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জসীম উদ্দিন জানিয়েছেন, ভারী বর্ষণের ফলে তার ইউনিয়নের বেশিরভাগ নীচু এলাকা হাটু সমান পানিতে তলিয়ে গেছে। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে উপজেলার চিংড়িজোনের হাজার হাজার মৎস্য প্রকল্পপানিতে তলিয়ে যাবে। এতে ঘের মালিক ও চাষীদের হাজার কোটি টাকার বেশি ক্ষতিসাধনের আশঙ্কারয়েছে।

উপজেলার উপকুলীয় বদরখালী ইউপি চেয়ারম্যান খাইরুল বশর ও কোনাখালী ইউপি চেয়ারম্যান দিদারুল হক সিকদার জানিয়েছেন, মাতামুহুরী নদীতে পাহাড়ি ঢল ফলে গতকাল বিকাল থেকে বিভিন্ন শাখা খাল ও স্লইচ গেট দিয়ে তাদের ইউনিয়নে লোকালয়ে প্রবাহিত হচ্ছে নদীর পানি।

ইউনিয়নের অধিকাংশ নীচু এলাকা তলিয়ে গেছে পানিতে। উপকুলের বিস্তীর্ণ মৎস্য প্রকল্প পানিতে তলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে নদীতে ঢলের পানির গতি বাড়বে। এঅবস্থায় উপকুলের একাধিক বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়ার পাশাপাশি মৎস্য প্রকল্প সমুহ পানিতে ভেসে যেতে পারে।

বরইতলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জালাল আহমদ সিকদার জানিয়েছেন, পাহাড়ি ঢলের প্রভাবে তাঁর ইউনিয়নের গোবিন্দপুর, বরইতলী, পঁহরচাদা, মছনিয়াকাটা, ডেইঙ্গাকাটা, রসুলাবাদা, শান্তি বাজার, পহরচাঁদা অংশে বেড়িবাঁধের ক্ষতিগ্রস্থ অংশ দিয়ে লোকালয়ে ঢুকছে ঢলের পানি।

দুপুর থেকে ইউনিয়নের বেশির ভাগ নীচু এলাকা পানিতে নিমজ্জিত হয়ে প্রায় ৩ হাজার পরিবার পানি বন্দি রয়েছে। পুরাতন বানিয়ারছড়া পহরচাদা পেকুয়া সড়কে গাড়ী চলাচল বন্ধ রয়েছে।

বিএমচর ইউপি চেয়ারম্যান এস এম জাহাঙ্গীর আলম বলেন, টানা ভারি বর্ষণ ও মাতামুহুরী নদীতে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলের পানি এবং অব্যাহত বৃষ্টিতে নদীতে পানির গতি বেড়ে যাওয়ার কারণে দুপুরের দিকে ইউনিয়নের খুরিল্যার কুম এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে লোকালয়ে পানি ঢুকে প্লাবিত হয়ে যায়।

এতে তলিয়ে গেছে হাজার একর কৃষকের ফসলি জমি। পানি বন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় দশ হাজার জনসাধারণ। ইউনিয়নের সাথে চকরিয়া শহরের যোগাযোগ ব্যবস্থাও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

এ ব্যাপরে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাহেদুল ইসলাম বলেন, বন্যা মোকাবেলায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরণের প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হয়েছে। শুকনো খাবারের চাহিদা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জানানো হয়েছে। ইতিমধ্যে দুর্যোগ মোকাবেলায় বিভিন্ন ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। প্রশাসনের লোকজন সার্বক্ষনিক নজর রাখছে।

কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সবিবুর রহমানের কাছে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভারী বর্ষণে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে পানি প্রবাহ বেড়ে যাওয়ায় চকরিয়া উপজেলার মাতামুহুরী নদীতে বিকাল তিনটা নাগাদ নদীর পানি বিপদসীমা  অতিক্রম করে উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।

তিনি আরও বলেন, নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে দুপুরে উপজেলার বিএমচর খুরিল্যারকুম এলাকা ও পৌরসভার কোচপাড়া এলাকাসহ বেশ কয়েকটা জায়গায় বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে গিয়ে লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়েছে। পানি কমে গেলে ভাঙ্গনকৃত এলাকাসমুহ চিহ্নিত করে দ্রুত সংস্কারে ব্যাবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন