চরম অনিশ্চিয়তার মুখে ছোট্ট শিশু মিমের জীবন
ওমর ফারুক হিরু :
এই ছোট্ট শিশু মেয়েটির নাম মিম। তার বয়স ১ বছরেরও কম। মারধরে তার বাম হাত ভেঙ্গে যাওয়ায় প্রচণ্ড যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের শয্যায়। এই যন্ত্রণাদায়ক মুহুর্তে শিশুটির পাশে নেই তার গর্ভধারিনী মা। কারণ পতিতা মা তাকে ফেলে চলে গেছে ৪ মাস আগে। আর ছিন্নমূল মাদকাসক্ত বাবাও রাখতে চাইছে না মিমকে। তার বাবা মিমকে হাসপাতালে রেখে সরে পড়তে চাইছে বারবার। এই অবস্থায় মিমের চিকিৎসা ও জীবন চরম অনিশ্চিয়তার মুখে পড়েছে। ছোট্ট কোমলমিত শিশুটি এখনো জগৎ সংরারে কিছুই বুঝে না। এই মুহুর্তে তার প্রয়োজন একটু খাবার আর যন্ত্রণার উপশম। যন্ত্রনায় মিম কাতরাচ্ছে আর ক্ষুধায় ছটফট করছে। এই হৃদয়বিদারক দৃশ্য দেখা যায়, কক্সবাজার সদর হাসপাতালের ৫ম তলায় নারী ও শিশু ওয়ার্ডের ৩৬ নাম্বার সিটে গিয়ে।
মিমের জন্ম লালদিঘীর পাড়স্থ কোট বিল্ডিং এলাকায়। তার মা মুন্নি পতিতা। আর বাবা শুক্কুর ছিন্নমূল মাদকসেবি। মিমের মা ৪ মাস আগে তাকে ছেড়ে চট্টগ্রাম চলে গেছে। এদিকে মাদকাসক্ত পিতা শুক্কুর এতদিন কোনভাবে সন্তানকে লালন পালন করছে। ছোট্ট মিম ঠিকমত খেতে পায় না, ঘুমাতে পারে না। কারণ এই শহরে যখন সবাই ঘুমিয়ে পড়ে তখন কোটবিল্ডিংয়ের কোন এক প্রান্তে মিমের ঘুমাবার জায়গা হয়। মাদকসক্ত বাবা শুক্কুরের মাদকের টাকা যোগাতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে। তার মধ্যে বাচ্চার খাবার। এ যেন তার কাছে অনেক কষ্টের । এরপরেও কখনও পঁচা ফল, পাউরুটি, কলা, বন আবার কখনওবা একমুঠো ভাত খাওয়াচ্ছে মিমকে। আর এসব খেয়েই মিম কোনভাবে বেঁচে আছে। আর বড় হচ্ছিল পুষ্টিহীনতার মধ্যে দিয়ে।
কিন্তু ৩ দিন আগে মিমের উপর নামে অনেকবড় ঝড়। আঘাত করে ভেঙ্গে দেওয়া হয় তার কোমল হাড়। ঘটনার সময় গভীর রাতে তার মাদকাসক্ত বাবা শুক্কুরকে মারধর করছিল একদল মাতাল লোক। মারধরের এক পর্যায়ে হামলাকারীদের আঘাতে বাবার কোলে থাকা মিমের বাম হাত ভেঙ্গে যায়। আর মিম ছিটকে পড়ে বাবার কোল থেকে। এরপর ২ দিন পর্যন্ত প্রচণ্ড যন্ত্রণা নিয়ে দুর্বিষহ দিন কাটে ছোট্ট মিমের। এদিকে তার বাবা শুক্কুরও নড়া-চড়া করতে পারছিল না জখমের ব্যাথায়। এই অবস্তায় মিমের একদিকে হাত ভাঙ্গার যন্ত্রণা অন্যদিকে ক্ষুধা। সবমিলে এই দুর্বল শরীরটা যেন আর চোখ খোলা রাখতে পারছিল না।
এর পরেও যতটুকু শক্তি আছে তা দিয়ে চিৎকার করে কান্না করে মিম। এই চিৎকার যেন ঘৃণা আর ধিক্কারের। পরে আহত ও ক্ষুধার্ত শিশুটিকে কোলে নিয়ে এক সংবাদকর্মীর কাছে সহযোগিতা চাইতে আসে শুক্কুর। ওই সংবাদকর্মীর সহযোগিতার মিমকে ভর্তি করা হয় সদর হাসপাতালে। এদিকে মিমের মাদকাসক্ত বাবা সন্তানকে বুকে আগলে রাখতেও যেন আর পারছেন না। তিনি বারবার হাসপাতাল থেকে পালাতে চাইছেন বাচ্চাকে রেখে। আর অনেককে বলছেন তার বাচ্চাকে পুষ্য (দত্তক) নিবে কিনা। এ অবস্থায় মিমের চিকিৎসা ও জীবন দুটোই অনিশ্চিয়তায় পড়েছে।
অসহায় মিমকে ভাত খাওয়ানোর সময় ফাতেমা নামে এক নারী বলেন, ‘আমাদের বাচ্চাদের খাবারের চাহিদা মিটিয়ে আবার পুষ্টির জন্য কতকিছুই না খাওয়াচ্ছি। আর এই শিশুটি কংকাল সার হয়ে গেছে শুধুমাত্র ঠিকমত খেতে না পেরে। ঘুমাতে না পেরে। তার মা-বাবা দোষ করলেও এই নিষ্পাপ শিশুর তো কোন দোষ নেই। তার কেন এত কষ্ট। এই দেশে এমনকি কোন সংস্থা নেই বা কোন ব্যক্তি নেই। যেখানে গিয়ে মিমের জীবনটা বেচেঁ পারে’।