রাঙামাটি রাজবন বিহারে কঠিন চীবর দানোৎসব’র প্রস্তুতি সম্পন্ন

Rangamati Pic-2-Bihar-2

স্টাফ রিপোর্টার :

রাঙামাটি রাজবন বিহারে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠান কঠিন চীবর দানোৎসব উপলক্ষে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে উপাসক-উপসিকা পরিষদ। আগামী ১৯ ও ২০ নভেম্বর ধর্মীয় নানা আচার অনুষ্ঠানে মধ্যে দিয়ে শুরু হবে এ দানোৎসব। এ উপলক্ষে রাজবন বিহারে দুই দিনব্যাপী কঠিন চীবর দানোৎসবে মেলা, ধর্মীয় কীর্তন, নাটক, চরকায় সুতা কাটা, বেইন বুনন, শোভাযাত্রাসহ বর্ণাঢ্য কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। এ ধর্মীয় উৎসবে প্রতি বছর রাঙামাটি রাজবন বিহারে অগণিত মানুষের ঢল নামে। অনুষ্ঠানে সমাগম ঘটে লাখো মানুষের। এবারও উৎসবকে ঘিরে তিন পার্বত্য জেলার বিভিন্ন এলাকার অগণিত পুণ্যার্থীসহ দেশ-বিদেশের অসংখ্য মানুষের ঢল নামাতে শুরু হয়েছে।

এ ব্যাপারে রাঙামাটি রাজবন বিহার উপাসক-উপসিকা পরিষদের সিনিয়র সহ-সভাপতি গৌতম দেওয়ান জানান, কঠিন চীবর দানোৎসব উপলক্ষে রাজবন বিহারে ইতিমধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। আগামী ১৯ নভেম্বর দুপুর ১টা থেকে আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। পুরো রাজবন বিহারে পুণ্যার্থীর জন্য ব্যাপক নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। সেদিন বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হবে। তাছাড়া অন্যান্য ব্যবস্থায় সেচ্ছাসেবক কর্মীরা কাজ করবেন। প্রথম দিন দুপুরে বেইন কর্মীদের পঞ্চশীল গ্রহণের পরে বেইন ঘর উদ্বোধন করবেন রাঙামাটি চাকমা রাজা ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়। তাছাড়া চরকায় সুতা কাটা উদ্বোধন করবেন রাণী ইয়াং ইয়াং রাখাইন।

এছাড়া ২০ নভেম্বর সকালে বুদ্ধ পতাকা উত্তোলন, চীবর সেলাই, পূজনীয় ভিক্ষু সংঘেষর প্রতিরাশ, পরম পূজ্য বনভন্তের প্রতিচ্ছবিসহ পূজনীয় ভিক্ষু সংঘেষর মঞ্চে আগমন ও আসন গ্রহণ, ধমীয় সংগীত পরিবেশন, পঞ্চশীল গ্রহণসহ সংঘদান, অষ্ট পরিস্কার দান, পুজনীয় ভিক্ষু সংঘকে পিণ্ডদান। দুপুরে শোভাযাত্রা সহকারে চীবর ও কল্পতরু মঞ্চে আনয়ন, অতিথিবৃন্দের অনুষ্ঠান মঞ্চে আসন গ্রহণ, পূজনীয় ভিক্ষু সংঘ মঞ্চে আগমন ও আসন গ্রহণ, ধর্মীয় সংগীত পরিবেশন, পঞ্চশীল গ্রহন, কঠিন চীবর উৎসর্গ ও দান, বিশ্ব শান্তি কামনায় বিশেষ প্রার্থনা, সভাপতি/সাধারণ সম্পাদকদের স্বাগত বক্তব্য, প্রধান পৃষ্ঠপোষকের (চাকমা রাজা) বক্তব্য, পূজনীয় ভিক্ষু সংঘেষর ধর্ম দেশনা, পরম পূজ্য শ্রাবক বুদ্ধ শ্রদ্ধেয় শ্রীমৎ সাধনানন্দ মহাস্থবির বনভন্তের দর্শদেশনা ক্যাসেট হতে। সন্ধ্যায় প্রদীপ প্রজনন।

রাঙামাটি পুলিশ সুপার মো. সাঈদ তারিকুল হাসান জানান, আসন্ন রাঙামাটি রাজবন বিহারে কঠিন চীবর দানোৎসবকে ঘিরে পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যাপক নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। যে কোন নাশকতা এড়াতে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পুলিশ মোতায়ন করা হবে।

প্রসঙ্গত, আজ থেকে আড়াই হাজার বছর আগে মহামতি গৌতম বুদ্ধের জীবদ্দশায় তার প্রধান সেবিকা মহাপূণ্যবতী বিশাখা ২৪ ঘন্টার মধ্যে তুলা থেকে সুতা কেটে রং করণ, বয়ন ও সেলাই শেষে চীবর (বিশেষ পরিধেয় বস্ত্র) দানকার্য সম্পাদন করেন। ২৪ ঘন্টার মধ্যে মহাদানযজ্ঞ সম্পাদন করার কারণে বৌদ্ধরা এই ধর্মীয় উৎসবকে ‘দানোত্তম কঠিন চীবর দান’ বলে। রাঙামাটি রাজবন বিহারে এ মহাদানযজ্ঞ সর্বপ্রথম অনুষ্ঠিত হয় ১৯৭৭ সালে।
তারও আগে ১৯৭৪ সালে বৌদ্ধ আর্যপুরুষ শ্রাবক বুদ্ধ মহাসাধক সাধনানন্দ মহাস্থবির বনভান্তের এক স্বর্গীয় অনুভূতি থেকে রাঙামাটি জেলার লংগদু উপজেলার তিনটিলা বৌদ্ধ বিহারে বিশাখার ঐতিহ্যবাহী নিয়মে এ ধর্মীয় অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। সেই থেকে প্রত্যেক বছর রাঙামাটি রাজবন বিহারসহ পার্বত্য তিন জেলার রাজবন বিহারের শাখাসমূহে বিশাখা প্রবর্তিত নিয়মে কঠিন চীবর দানোৎসব সম্পাদন করা হয়ে থাকে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন