চা খোর পানছড়ির শহিদুল্লাহ

TEA PIC

শাজাহান কবির সাজু:

বিডিখোর, তামাকখোর, গাঁজাখোর, হেরোইনখোর, ডাইলখোর, নেশাখোর নানা শব্দ বাংলা ভাষায় প্রচলিত হলেও এবার পানছড়িতে দেখা মিললো নতুন খোরের। তিনি চা খোর। চা খোর শহিদুল্লাহ।

খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়ি উপজেলায় দিনে ৩০ কাপ চা পান করার এক আজব মানুষের খবর পাওয়া গেছে। আর এই আজব মানুষটির নাম মো: শহীদুল্লাহ (৫৫)। সে উপজেলার ইসলামপুর গ্রামের মৃত আলী আকবর ও সুফিয়া খাতুনের ছেলে। এই রসালো খবরে ইসলামপুর এলাকার বাজারে সরেজমিনে গিয়ে কথা হয় চা দোকানদার মো: শফিকুল ইসলাম, আনোয়ার হোসেন. এরশাদ ও সরু মিয়ার সাথে। তারা সকলেই জানালেন শহীদুল্লার চা পানের হাস্যকর কাহিনী। তাছাড়া এই প্রতিবেদকের কথা শুনে শহীদুল্লাহর চা পানের গল্প শুনাতে এদিক ওদিক থেকে হাজির হয় প্রায় ত্রিশ জনের অধিক মানুষ।

দোকানী শফিকুল জানালেন, সকাল ৭টার দিকে দোকানে এসে নাস্তা করার সাথে সাথেই শুরু হয় চা নিয়ে যুদ্ধ। এক কাপ শেষ হতে না হতেই অর্ডার আসে “আর এক কাপ দাও” এভাবে একটার পর একটা পান করতে করতে সকাল ৯টার আগেই নুন্যতম ৭/৮ কাপ শেষ করে।

দোকানদার আনোয়ার. এরশাদ ও সরু মিয়া জানায়, সকাল ১১টার দিকে শুরু করে চা পানের দ্বিতীয় পর্ব। এ সময়ও অর্ডারের পর অর্ডার দিয়ে ৭/৮ কাপ পান করে। বিকাল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত এভাইে চলে আরো দু’দফা চা পানের সংগ্রাম। এ দু’দফাতে ১৬/১৭ কাপ। সব মিলিয়ে নুন্যতম ৩০ থেকে ৩৫ কাপ চা পান করা হয় বলে তাদের প্রাথমিক ধারণা। এলাকার পল্লী চিকিৎসক আবদুল কাদের বলেন, এখন তো কিছুটা কমেছে ৩/৪ বছর আগে আরো বেশী ছিল। এলাকার ফরিদা আক্তার নামের একজন জানান, “শহীদুল্লাহ চায়ের বেলায় খুব ডাট, ডেলি কয় কাপ খায় তার কোন ইষ্টিশন নাই, আরে বাপরে বাপ, এই রহম আর জীবনে দেখছি না”।

পানছড়ি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সদ্য বিদায়ী কর্মকর্তা ডা: মো: জাহিদুল ইসলাম জানান, ২৫/৩০ কাপ চা পান করা স্বাস্থ্যর জন্য অবশ্যই ক্ষতিকর। অতিরিক্ত চা পানে গ্যাষ্টিক, আলসারসহ পাকস্থলীতে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। প্রতিদিন ৪/৫ কাপের অধিক চা পান করা ঠিক নয় বলে এই প্রতিবেদককে জানান।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শহীদুল্লার ৪ মেয়ে ২ ছেলে। কৃষি কাজের পাশাপাশি ব্যাটারি চালিত টমটম ও গরুর গাড়ির মালিক মো: শহীদুল্লা। পানছড়ির কানুনগোপাড়া এলাকার কপি ক্ষেতে কাজ করার সময় কথা বলতে বলতে শহীদুল্লা জানায়, তার এ চায়ের নেশা দীর্ঘ ২৫/৩০ বছর ধরে। গত দুই-তিন বছরে ২৫/৩০ কাপ পান করলেও এর আগে প্রতিদিন ৩৫/৪০কাপ চা পান করা হত। পরিবারের মধ্যে সে নিজেই চা পান করে এবং বাড়িতে কোন চা তৈরী করা হয় না বলে জানায়।

দীর্ঘ বছর বিভিন্ন দোকানে চা পান করলেও দোকানীরা তার উপর সন্তুষ্ট। ইসলামপুর এলাকার ৪টি চা দোকান মিলে তার চায়ের বিল বকেয়া রয়েছে প্রায় ৭/৮ হাজার টাকা। শহীদুল্লা জানায়, এইতো আর কয়দিন পরেই কপি বেচা শুরু হবে। আর বেচাকেনা শুরু হলে দোকানের বাকী হিসাব শেষ করেই নতুন হিসাব খুলব।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন