জন্মাষ্টমী: পুজোর রীতি, সময় ও ইতিহাস

নিজস্ব প্রতিবেদক:

কৃষ্ণের জন্মকাহিনি, জীবন নিয়ে উৎসাহের অবকাশ নেই। হিন্দু পুরাণের সবচেয়ে জনপ্রিয় চরিত্র কৃষ্ণ। মহাভারত, ভাগবত গীতা, বৈষ্ণব পদাবলী জুড়ে যার বিচরণ। সবচেয়ে বেশি আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন হিন্দু দেবতার জন্মদিন পালনের তোড়জোড় অনেক আগে থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছে।

আজ জন্মাষ্টমী তিথি। আজ সারাদেশে পালিত হচ্ছে এই জন্মোৎব।

জন্মাষ্টমীর গুরুত্ব

অত্যাচারী রাজা কংসের রাজত্বে মথুরাবাসীর দুঃখের সীমা ছিল না। বোন দেবকীর সঙ্গে বাসুদেবের বিয়ের সময় আকাশ ভেঙে শোনা যায় দৈববাণী। দেবকীর অষ্টম গর্ভে জন্মানো সন্তান কংসকে হত্যা করে উদ্ধার করবে মথুরাবাসীকে। দৈববাণী শুনে দেবকী, বাসুদেবকে সেই মুহূর্তেই কারাগারে বন্ধ করেন কংস।

দ্বাপর যুগে মর্ত্যে আবির্ভাব বিষ্ণুর অষ্টম অবতার কৃষ্ণের। কারাগারে দেবকীর ষষ্ঠ সন্তানকেও বাসুদেব কারাগারে হত্যা করার পর সপ্তম সন্তান মারা যায় গর্ভেই। কথিত আছে এই সপ্তম সন্তানই বৃন্দাবনে রোহিনীর গর্ভে বলরাম রূপে জন্মগ্রহণ করেন। অষ্টম গর্ভে কৃষ্ণের জন্মের পর বাসুদেব দেবানুকূল্যে শ্রাবণের ঝড়, বৃষ্টি কবলিত রাতে শিশু কৃষ্ণকে বৃন্দাবনে নন্দরাজ, যশোদার কাছে দিয়ে আসেন। কৃষ্ণকে মাথায় নিয়ে যমুনা পারপারের সময় শেষনাগ শিশু কৃষ্ণকে রক্ষা করেন দুর্যোগের হাত থেকে। বৃন্দাবনে যশোদার সদ্যোজাতের সঙ্গে কৃষ্ণকে বদলে দিয়ে আসেন। দেবকীর কোলে যশোদার সদ্যোজতকে দেখে কংস তাকে বধ করতে উদ্যত হলে শূন্যে মা দুর্গার রূপ ধারণ করেন সেই সদ্যোজাত কন্যা। শোনা যায় দৈববাণী, কংসকে হত্যা করে মথুরাবাসীকে উদ্ধার করতে কৃষ্ণ পৃথিবীকে আবির্ভূত হয়েছেন।

উপবাস, ভোগ ও পুজো

শুধু এক পদ দিয়ে রাতের খাবার খেয়ে ভক্তেরা জন্মাষ্টমীর দিন উপবাস রাখেন ও সংকল্প করেন। উপবাসের সময় কোনও দানা খাওয়ার নিয়ম নেই। সারা দিন ফলার খেয়ে অষ্টমী তিথি শেষ হওয়ার পর তারা উপোস ভাঙেন। দুধ, ঘি ও জল দিয়ে কৃষ্ণের অভিষেকের পর ভোগ নিবেদন করা হয়।

৫৬ ভোগ

জন্মাষ্টমী পুজোর রীতি শুরু হয় সূর্য ডোবার পর। ভজন, পুজো, মধ্য রাতে উপবাস ভাঙার পর পরদিন পালিত হয় নন্দ উৎসব। এই দিন গোপালকে ৫৬ পদে ভোগ দেওয়ার নিয়ম। কৃষ্ণের প্রিয় মাখন, মিছরির সঙ্গে ফল, নানা রকম মেওয়া, নিমকি দেওয়া হয়। শ্রাবণ মাসে জন্ম হওয়ার কারণে পাকা তাল কৃষ্ণের প্রিয়। জন্মাষ্টমীতে তাই তালের বড়া, তাল ক্ষীর, তালের লুচির মতো নানাবিধ সুস্বাদু খাবারে সাজিয়ে দেওয়া হয় থালা। এ ছাড়াও মঠরি, রাবড়ি, মোহনভোগ, ক্ষীর, জিলিপি মতো নানা রকম মিষ্টি, শাক, দই, খিচুড়ি, দুধ, কাজু, মোরব্বা সব কিছু দিয়ে তৈরি হয় ছাপ্পান্ন ভোগ।

জন্মাষ্টমী পুজো ও উপোসের নির্ঘণ্ট

স্মার্ত সম্প্রদায় অনুযায়ী এ বছর জন্মাষ্টমী পালিত হচ্ছে ১৪ আগস্ট। যদিও বৈষ্ণব সম্প্রদায় পালন করবে ১৫ অগস্ট। তাই স্মার্ত সম্প্রদায় নীশিথ কালেই জন্মাষ্টমী পুজো করেন। স্মার্ত সম্প্রদায় অনুযায়ী ১৪ অগস্ট উপবাসের দিন এবং উপবাস ভাঙার সময় পরদিন সন্ধে ৫টা ৩৯। অন্য দিকে, মথুরার কারাগারে জন্ম ও মধ্য রাতে সকলের অগোচরে গোকুল যাত্রার নিয়ম মেনে বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের ক্ষেত্রে মধ্য রাতেই উপবাস ও পুজোর পর উপবাস ভাঙার সময় পরদিন ভোর ৫টা ৫৪ মিনিটে।

নীশিথ পুজোর সময়: রাত ১২টা ০৩ থেকে ১২টা ৪৭ পর্যন্ত।

অষ্টমী তিথি শেষ হবে ১৫ অগস্ট ৫টা ৩৯ মিনিটে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন