জমে উঠেছে কক্সবাজারের বৃহত্তম ইলিশিয়া কোরবানি পশুর হাট, ক্রেতাদের ভিড়

fec-image

মুসলিম সম্প্রদায়ের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ। কোরবানি আর বাকি মাত্র ৫ দিন। এরই মধ্যে চকরিয়া উপজেলার ১৮টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা এলাকায় সরকারি অনুমোদনপ্রাপ্ত এবং অনুমোদন ছাড়া অন্তত ২১টি কোরবানি পশুর হাট পুরোদমে জমে উঠেছে। সবচেয়ে জমে উঠতে শুরু করেছে কক্সবাজারের পশ্চিম বড় ভেওলাস্থ বৃহত্তম ইলিশিয়া কোরবানি পশুর হাট। সপ্তাহের প্রতি রোববার ও বৃহস্পতিবার এই হাট বসে। এই কোরবানি হাটে দক্ষিণ চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থান থেকে গাড়িযোগে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বাজারে গরু আসতে শুরু করে। ওই পশুর হাটে স্থানীয়ভাবে বিক্রির পাশাপাশি এসব গরু চলে যাচ্ছে চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন প্রান্তে।

সরেজমিন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, অন্যান্য বছরের ন্যায় এবারেও পশুর হাট জমে উঠেছে। ইলিশিয়া গরুর বাজার, চকরিয়া পৌরসভার বাসটার্মিনাল, ঘনশ্যামবাজার, মগবাজার কমিউনিটি সেন্টার মাঠ, ডুলাহাজারা স্টেশন বাজার, খুটাখালী স্টেশন বাজারসহ অন্তত ২১টির মতো কোরবানির পশুর হাট। এসব কোরবানি পশুর হাটে মাঝারি সাইজের এক একটি গরু বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৯০ হাজার এবং বড় সাইজের গরু বিক্রি হচ্ছে ১ লাখ ৫০ হাজার থেকে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকায়।

গরুর পাশাপাশি এই হাটে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির ছাগলও। একেকটি বড় আকারের খাসি বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকায়। অন্যান্য বাজারের তুলনায় ইলিশিয়া বাজারে এবারও সবচেয়ে বড় সাইজের গরু দেখা মিলেছে বেশ কয়েকটি। সরকারি নির্দেশনা মেনে হাট পরিচালনা করা হচ্ছে বলে দাবি করেছেন বিভিন্ন বাজার ইজারাদারেরা।

সরকারি বিধি অনুসরণের বিষয়ে জানতে চাইলে তারা বলেন, প্রশাসনের নির্দেশনা অনুসরণ করে আমরা কোরবানির হাট পরিচালনায় চেষ্টা করছি। আমাদের স্বেচ্ছাসেবক ও পশু বিক্রেতাদের সরকারি নির্দেশনা মেনে চলার জন্য সকলকে মাইকিং করে বলা হচ্ছে। তবে হাট-বাজারে আসা গরু পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য উপজেলা প্রাণী সম্পদ বিভাগের কোন ধরণের কর্মকর্তাকে দেখা যায়নি।

ইলিশিয়া পশুহাটে গিয়ে কথা হয় বরইতলী এলাকার পশু পালনকারী নুরুল কাদেরের সাথে। তিনি জানান, ২ বছর ১ মাস বয়সের একটি ফ্রিজিয়ান ষাড় গরু বাজারে এনেছেন। গরুটির ওজন প্রায় ৫শত কেজি বলে দাবি করছেন তিনি। গরুর দাম দেন ৭ লক্ষ টাকা। ৬ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা হলেই তিনি বিক্রি করবেন। তবে এখনও কোনো ক্রেতার সাক্ষাত মেলেনি।

কোনাখালী সিকদার পাড়া গ্রামের আবদুর হাকিম জানান, তিনি কোরবানির জন্য গরু দেখতে এসেছেন, দামে পোষালে আজই কিনবেন। তবে ইলিশিয়া এই পশুর হাটে দাম অন্যান্য বাজারের চেয়ে তুলনামূলক একটু কম।

পশ্চিম বড় ভেওলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মাতামুহুরী সাংগঠনিক উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ইলিশিয়া বাজারটি একটি ঐতিহ্যবাহী বাজার। বৃটিশ আমলে এই বাজারটি আমার দাদা মোখতার আহমদ চৌধুরী ও তাদের ভাইয়েরা প্রতিষ্ঠা করেন। তার পাশাপাশি স্কুল, খেলার মাঠ ও ইউনিয়ন পরিষদ প্রতিষ্ঠা করেছিল। ইউনিয়ন পরিষদের জন্য দাদা মোখতার আহমদ চৌধুরী পাঁচ একর জায়গা রেজিষ্ট্রি করে দিয়েছেন। ঐতিহ্যবাহী বাজারটি ঘিরে এতদ্বঞ্চলের গরীব কৃষকদের মধ্যে গরু লালন পালনের উৎসাহ সৃষ্টি হয়েছে। যার কারণে প্রায় ঘরে ঘরে গরু পালন করা হয়।

তিনি আরো বলেন, উপজেলার উপকূলীয় এলাকায় পশুর এই হাট ছাড়া বড় ধরণের আর কোন হাট নেই। পশুর এ হাটটি গ্রামের মানুষের বাড়ির পাশে হওয়ায় গরু বেচা-বিক্রি করতে সুবিধা হয়। যা মানুষের এখানকার মানুষ অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল হচ্ছে এবং গরীব কৃষকেরা পশু পালনে দিন দিন স্বাবলম্বী হতে চলছে। প্রতি রোববার ও বৃহস্পতিবার ইলিশিয়া বাজারটি বসে। বর্তমানে বাজারকে ঘিরে নানা ধরণের ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। নির্বাচনে যেসব প্রার্থীরা আমার বিরুদ্ধে ভোটে পরাজিত হয় মূলত তারাই এ বাজার নিয়ে ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছেন। বাজারের কারণে কোন ধরণের বিদ্যালয়ের পরিবেশ ও প্রতিবেশের বিঘ্ন সৃষ্টি হয় না। তবে কোরবানি সময়ে বিদ্যালয়ের শর্ত সাপেক্ষে খেলার মাঠে তিনদিন পশুর হাট বসানো হয় বলে তিনি জানান।

চকরিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) চন্দন কুমার চক্রবর্তী বলেন, উপজেলার বিভিন্ন পশুর হাটে আইন শৃংখলা রক্ষার্থে ও অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পুলিশের কয়েকটি টিম মাঠে রয়েছে। যাতে বাজারে আগত ক্রেতা-বিক্রেতারা যেন নির্বিগ্নে ও নিরাপদে কোরবানি পশু ক্রয়-বিক্রয় করতে পারে। আইন শৃংখলাবাহিনীর সদস্যরা সার্বক্ষণিক বাজার পর্যবেক্ষণে রয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেপি দেওয়ান জানান, নির্দিষ্ট পশু হাট ব্যতীত নতুন কোনো পশু হাট বসানো যাবে না। এছাড়া সড়ক ও মহাসড়কের ওপরে কোন পশুর হাট বসানো হলে তা সরিয়ে নেয়া হবে। প্রতি হাটে মোবাইল কোর্ট যাবে। কেউ আইন অমান্য করলে তাকে জরিমানার আওতায় আনা হবে।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: কক্সবাজার, কোরবানি পশুর হাট, বৃহত্তম ইলিশিয়া
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন