টেকনাফে ইয়াবা ব্যবসায়ী ও মালেশিয়ায় আদম পাচারকারীরা নির্বিঘ্নে চালিয়ে যাচ্ছে পাচার কাজ

images

টেকনাফ প্রতিনিধি:

ধরা ছোঁয়ার বাইরে রয়ে যাচ্ছে তালিকাভূক্ত রাঘব বোয়ালরা। ইতিমধ্যে তালিকাভূক্ত ইয়াবা ব্যবসায়ীদের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধে ৩ জন নিহত হয়েছে। অপরদিকে পার পেয়ে যাচ্ছেন সমুদ্রপথে মালয়েশিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যে মানবপাচারকারী দালালরা। সচেতনমহল মনে করেন ইয়াবার বিরুদ্ধে যেভাবে যুদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে তেমনিভাবে মানবপাচারকারী দালালদের চিহ্নিত করে তাদেরকেও আইনের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তি ব্যবস্থা করা দরকার। এ পেশায় চিহ্নিত তালিকভূক্ত ইয়াবা ব্যবসায়ী ছাড়াও নতুনভাবে ব্যবসায় নিয়োজিত হয়ে হঠাৎ করে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে গেছে।

টেকনাফের কাঞ্জর পাড়া এলাকার আবদুল দইয়ান ও তাঁর ছেলে জিয়াবুল হক এককালে অবৈধভাবে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা পারাপারের নৌকার মাঝির কাজ করত। পাশাপাশি বিভিন্ন প্রকার দেশীয় ভোগ্য সামগ্রী চোরাইপথে মিয়ানমারে পাচার করে কোন রকমে সংসার চালাত। কিন্তু সে অবস্থা এখন আর নেই ওই পরিবারে। রাতারাতি কোটিপতি হয়ে তৈরী করছে টাইল্সযুক্ত নতুন দালান বাড়ী। তেমনিভাবে হুন্ডি ব্যবসা ও মানব পাচারের দালালী করে বিত্তবান হয়েছে আবদুল মালেক প্রকাশ হুন্ডি মালেক। তারা সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করে বরাবরই রয়ে গেছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে।

এলাকাবাসী অভিযোগ করেন তাদের কারনে এলাকার অনেকে সন্তানহারা ও মাদক পেশায় নিয়োজিত হচ্ছে যুব সমাজ। মানব পাচার করে যারা অল্প সময়ে অঢেল টাকা ও সম্পত্তির মালিক বনে গেছে তাদের মধ্যে মাদক ও আদম পাচারকারী মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামী। ছুরা শব্বীর ওয়ারেন্টভুক্ত আসামী হলেও প্রকাশ্যে বাজারে ও বাড়ীতে থাকেন তিনি। তাকে ধরবেনা, কারন চুক্তি করা আছে বলে জানান অনেকে। তিনরাস্তার মাথা বাজারের পশ্চিম পাশের কোনার পাড়ার আবুল হাশেমের মেয়ে ফাতেমা। ১৫ দিন পূর্বে তার বাড়ীতে অভিযান পরিচালনা করেন প্রশাসন। খারাপ চরিত্রের কারনে স্বামী পরিত্যাক্তা বলে জানা যায়।

বাজার পাড়া স্কুল ও বাহরুল উলুম বড় মাদরাসার সামনের মুদি দোকানী জাফর। জাফর মাস্তান ও সন্ত্রাসী হিসাবে কেউ বাধা দেয়ার সাহস করেনা। মিস্ত্রিপাড়ার মৃত আবুল হাশেমের ছেলে রশিদ, আয়াজ, ও শফীক। এ ৩ জনের দায়িত্ব হল ইয়াবা ও গাজা পৌছে দেয়া। তারা শাহপরীর দ্বীপের পাইকারী বিক্রেতা। তাদের ২ বোন সাজেদা ও সফুরা বেড়ী বাঁধের পাশে অবস্থান করে। সাগরে যাতায়াত করে। টেকনাফে ইদানিং ইয়াবা ব্যবসায়ীদের উপর দশ নম্বর মহা বিপদ সংকেত চললেও মালয়েশিয়ায় আদম পাচারকারীরা নির্বিঘ্নে চালিয়ে যাচ্ছে তাদের পাচার কাজ। দেশ ও জাতি ধ্বংসকারী ইয়াবা ব্যবসায়ীদের কে আর এক ধ্বংসকারী মালয়েশিয়া আদম পাচারকারীরা বহন করে দেশান্তর করছে।

সচেতন মহলের মতে, মালয়েশিয়া আদম পাচারকারীরা ইয়াবার চেয়ে আরও ভয়ংকর। এরা বাংলাদেশের অনেক মায়ের কোল খালী করে ছেলেদেরকে নিক্ষেপ করেছে সাগরে। অনেক স্বামীকে স্ত্রীদের নিকট থেকে পৃথক করে পুরেছে ভিন দেশের জেলে। অনেক অভাগি ছিন্নমূল পরিবারকে করেছে ঘর ছাড়া। এরা বর্তমানে নিজেরাই কোটিপতি হয়ে ভয়ংকর অস্ত্র ক্রয় করে, সন্ত্রাসী বাহিনী তৈরি করে দেশ ও জাতিকে ধ্বংশের ধারপ্রান্তে নিয়ে যাচ্ছে। সূত্র মতে টেকনাফ উপজেলার ২’শরও বেশী আদম পাচারকারী প্রশাসনের নাকের ডগায় এ পাচার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।

ইয়াবার মত মাদক মৌলভী পাড়া, হাবির পাড়া, নাজির পাড়া গ্রামে যেমনি ধ্বংস টেনে এনেছে পাশাপাশি মালয়েশিয়ায় আদম পাচারের নিরাপদ রুট হিসেবে টেকনাফ উপজেলার সাবরাং ইউনিয়নের কাটাবনিয়া, কচুবনিয়া, খুরের মুখ ও শাহপরীর দ্বীপ তার চেয়েও ধ্বংস টেনে এনেছে মালয়েশিয়ায় আদম পাচার করে। বর্তমানে এ গ্রামগুলো মালয়েশিয়া আদম পাচারের নিরাপদ রুট ও অঘোষিত বিমানবন্দর। এখানে গজিয়ে উঠেছে শত শত দালাল। এই সমস্ত দালালকে সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, স্থানীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, লোকজন জানায়। কয়েকজন বাঘা বাঘা মালয়েশিয়ায় আদম পাচারের দালাল এখানে রয়েছে।

এরা অনেক সময় বিভিন্ন আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আবার পলাতক থেকে ডজন ডজন মামলার পলাতক আসামী বনে গেছে। এর পরও প্রকাশ্য দিবালোকে আদম পাচার অব্যাহত রেখেছে। এর মধ্যে কয়েকজনের নাম হচ্ছে- শাহপরীরদ্বীপের মিস্ত্রিপাড়ার মৃত মীর আহমদের পুত্র মোঃ আয়াছ, মিস্ত্রিপাড়ার লম্বা ছলিম, এনায়েত উল্লাহ, ইব্রাহিম, মোহাম্মদ ইসমাঈল, হাজী কাদির হোছনের পুত্র নুরুল আমিন, সাবরাংএর খুরের মুখের আলী আহমদ চৌকিদার,মৃত হাশিমের পুত্র মোঃ ছলিম,নুরুল আমিন বইল্ল্যার পুত্র ইব্রাহীম, পশ্চিমপাড়ার মোঃ উল্লাহ মাঝির পুত্র মোঃ শফিক,মৃত বশির আহমদের খুরশিদ আলম,মৃত নজির আহমদের পুত্র জিয়াবুল, তার ভাই ইসমাইল, টেকনাফ জালিয়াপাড়ার মৃত দুদু মিয়ার পুত্র নুরুল আলম নুরা, ক্যাম্পপাড়ার মৃত আলতাজ মিয়ার পুত্র মোঃ শামীম, সলিম, ইসমাইল, ফিরোজ, নুরুল আমিন, জামিল, শুক্কুর, কাটাবনিয়ার গুরা মিয়া, আবদুল হামিদ, মুন্ডার ডেইল এলাকার নুরুল আলম নুরু, মোঃ শাকের অন্যতম বলে একাধিক সুত্রে জানা গেছে।

এদের বিরুদ্ধে মানব পাচারের একাধিক মামলা রয়েছে। অভিযুক্ত ও পাচারকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহন করা হলে ইয়াবার মত ব্যাপকহারে ভাইরাস ছড়ানোর আগে নির্মূল সম্ভব বলে মনে করেন সচেতন মহল। শাহপরীরদ্বীপে মাদকের ৯ আস্তানায় তরুণ-তরুণীদের সমাগম ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। অনৈতিক কর্মকান্ডের কারণে অল্প বয়সেই বিপথগামী হচ্ছে অনেকে। সন্তানের ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে অভিভাবক মহল। কয়েক বছর আগে ছিল নামে মাত্র ১টি মদ,গাজা বিক্রির আস্তানা। বর্তমানে ৯ আস্তানায় হরদম তরুণ-তরুণীদের ভিড় ল্য করা যাচ্ছে। গত ১৫ দিন পূর্বে একটি আস্তানায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান পরিচালনা করেন বলে জানা যায়।

ইয়াবার খুচরা বিক্রি, দেশীয় ও মিয়ানমারের তৈরী মদ, গাজা ও মনোরঞ্জনের জন্য অল্প বয়সী সুন্দরী মেয়ে দিয়ে দেহ ব্যবসা চালিয়ে এলাকা নষ্ট করছেন যারা, শাহপরীরদ্বীপ ডাঙ্গার পাড়া এলাকার জাফর আহমদের স্ত্রী ছমুদা। জাফরের নামে কয়েকটি মামলা থাকায় পলাতক আসামী হিসাবে তিনি ঘরের বাইরে অবস্থান করে। শব্বীর আহমদের স্ত্রী নুনুনি। শব্বীর আহমদ প্রকাশ (ছুরা শব্বীর ) সহ ডজন দালাল। এরা সবাই শাহপরীর মিস্ত্রি পাড়ার বাসিন্দা। অপর দিকে কাটা বনিয়া, কচুবনিয়া ও খুরের মুখের হামিদ, বশির, নজির, রফিক ও নুর মোঃ সহ ডজন দালাল। এদের বিরুদ্ধে আদম পাচারের অভিযোগে থানায় মামলা থাকার শর্তেও আটক হচ্ছে না।

টেকনাফ সীমান্তের শাহপরীরদ্বীপ আদমপাচার পয়েন্টগুলো বন্ধ হলে ইয়াবা ও পাচার প্রতিরোধ সম্ভব। টেকনাফে ইয়াবা ও মানব পাচার ব্যবসা দ্রুত এবং ভয়ংকররূপে বৃদ্ধি পেয়েছে। পাশাপাশি ব্যবসায়ীরা মরণ নেশা ইয়াবা ছড়িয়ে দিয়েছে দেশের সর্বত্রই। মানবপাচারকারীরা অবৈধভাবে সাগর পথে মালয়েশিয়া মানব পাচার করতে গিয়ে সমূদ্রে ডুবে প্রাণ হারিয়েছে অনেক তাজা প্রাণ। এছাড়া মালয়েশিয়া পৌঁছে মুক্তিপন আদায় করতে না পারায়ও প্রাণ দিতে হয়েছে এদেশের নাগরিককে।

সচেতন মহলের মতে, সংশ্লিষ্টরা দ্রুত ব্যবস্থা ও কার্যকরী পদক্ষেপ না নেয়ায় ইয়াবা এবং মানব পাচার ব্যবসা ভাইরাসের মতো ছড়িয়ে পড়েছে দেশের আনাচে কানাচে। তবে, সেই ইয়াবা নামক মরন নেশা থেকে মুক্তিপেতে সম্প্রতি অভিযান শুরু করেছে আইনশৃংখলা বাহিনী। ইয়াবার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে প্রশাসন। ফলে ইয়াবা ব্যবসায়ীদের মধ্যে একধরনের আতংক ছড়িয়ে পড়েছে। ভাসমান রোহিঙ্গারা সাধারণ ভাড়া বাসায় থাকেন।

এরকম ভাড়া রয়েছে শাহপরীরদ্বীপে অনেক। সেসব ভাড়াবাসা থেকে অভাবী ভাসমান রোহিঙ্গা তরুণীদের টার্গেট করে তাদের আস্তানায় নিয়ে দেহ ব্যবসা চালায়। এ ৯ জনের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে মাদক প্রতিরোধে প্রশাসনের হস্তপে কামনা করেছেন এলাকাবাসী।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন