টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে ১৭ রোহিঙ্গা শরণার্থীসহ ৩২ বাংলাদেশী বন্দী হস্তান্তর করেছে মিয়ানমার

DSC_0124

টেকনাফ প্রতিনিধি: 

বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগের পর ১৭ রোহিঙ্গা শরণার্থীসহ ৩২ বাংলাদেশী নাগরিককে ফেরত দিয়েছে মিয়ানমার। ১৭ জুন মঙ্গলবার সকালে মিয়ানমারের মংডু ১নং পয়েন্ট অব এন্ট্রি এন্ড এক্সিট এলাকায় বিজিবি ও মিয়ানমার ইমিগ্রেশন এন্ড ন্যাশনাল রেজিষ্ট্রেশন ডিপার্টমেন্ট এর মধ্যে ফ্ল্যাগ মিটিংয়ের পর তাদেরকে ফেরত দেওয়া হয়।

পরে বিজিবি ৪২ ব্যাটালিয়ন টেকনাফ বিওপির কোম্পানী কমান্ডার সুবেদার জাকারিয়ার নেতৃত্বে ৮ সদস্যের বিজিবি প্রতিনিধি দল সকাল সাড়ে ১১টায় কারাভোগ শেষ করা ৩২ জনকে নিয়ে টেকনাফে ফিরে আসেন। ফেরত আসা ৩২ জনের মধ্যে মিয়ানমার নাগরিক উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পের রয়েছে ১২ জন ও টেকনাফ নয়াপাড়া ক্যাম্পের রয়েছে ৫জন। এছাড়া অপর ১৫ জনের মধ্যে টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের ২ জন, উনচিপ্রাং’র ২ জন, চৌধুরী পাড়ার ১ জন, নোয়াপাড়া শরনাথীর্ শিবিরের ৫ জন, শাহপরীর দ্বীপের ৫ জন কক্সবাজারের খুরুশকুল গ্রামের ৩ জন, চকরিয়ার ১ জন, মহেষখালীর ২ জন রয়েছে রয়েছে।

সুবেদার জাকারিয়া জানান, অত্যন্ত সৌহাদ্যপূর্ণ পরিবেশে ফ্ল্যাগ মিটিং অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে ফ্ল্যাগ মিটিংয়ে বন্দী ফেরত ছাড়া অন্য কোন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়নি। ফ্ল্যাগ মিটিংয়ে মিয়ানমার দশ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন ইমিগ্রেশন স্টাফ অফিসার উথেন থুন লে।

এদিকে ফেরত আসা কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে তারা বিভিন্ন সময়ে ট্রলার যোগে অবৈধভাবে মালয়েশিয়া গমন ও নাফ নদী এবং বঙ্গোপসাগরে মাছ শিকাররত অবস্থায় মিয়ানমার নৌবাহিনী তাদেরকে আটক করেছিল। আটকের পর মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ তাদেরকে বিচারে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা প্রদান করে। এর মধ্যে রয়েছে সর্বোচ্চ ৫২ মাস কারাভোগ করা হ্নীলা ফুলের ডেইল এলাকার মৃত নজির আহমদের ছেলে নুরুল কবির(৩২) ও ইউছুপ আলীর ছেলে ফরিদ আলম(২৬)। তারা নাফ নদীতে মাছ শিকাররত অবস্থায় নাসাকা তাদেরকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল।

কুতুপালং শরণার্থী ক্যাম্পের মোঃ আলম জানান, তারা থাইল্যান্ড নাগরিকের মালিকানাধীন একটি ট্রলারে মালয়েশিয়া যাওয়ার পথে চালক দিক ভুল করে মিয়ানমার উপকূলে ট্রলার ভিড়িয়ে দেয়, পরে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের হাতে তারা আটক হয়।

ফেরত আসা ব্যক্তিরা হচ্ছে, টেকনাফ পৌরসভার চৌধুরী পাড়ার মোঃ সেলিমের ছেলে মোঃ শফিউর রহমান, হ্নীলা ফুলের ডেইল এলাকার মৃত নজির আহম্মদের ছেলে নুরুল কবির, ইউছুপ আলীর ছেলে ফরিদ আলম, হোয়াইক্যং উনচিপ্রাং এলাকার সিরাজের ছেলে মোঃ আলম, শাহপরীরদ্বীপ বাজার পাড়ার মোঃ জালালের ছেলে কালাম হোসেন,কেফায়েত উল্লাহর ছেলে আজম উল্লাহ, ক্যাম্প পাড়ার ওমর কাদেরের ছেলে মোঃ শফি, উত্তর পাড়ার আব্দুল হাকিমের ছেলে মোঃ রশিদুল্লাহ, সাবরাং নয়াপাড়া মমতাজ মিয়ার পুত্র আবু তাহের,
কক্সবাজার মহেষখালী উপজেলার শামলাপুর নয়াপাড়া গ্রামের মৃত মোজাহের আহমদের ছেলে মোঃ হোছেন, মোহাম্মদ কাটা এলাকার আমীর হোসেনের ছেলে মোঃ ইসমাঈল, খুরুস্কুল ঘোনার পাড়ার মৃত জাফর আলমের ছেলে আবুল কালাম, আব্দুল জব্বারের ছেলে শফিউল্লাহ, ডেইল পাড়ার মৃত লোকমান হাকিমের ছেলে সাদ্দাম হোসেন, চকরিয়া সেগুন বাগিচা এলাকার মোস্তাক আহমদের ছেলে ওসমান। নয়াপাড়া শরণার্থী ক্যাম্পের আব্দুল গফুরের ছেলে আব্দুল মজিদ, আব্দুল হাকিমের ছেলে মোঃ হাশেম, সৈয়দ আমিনের ছেলে সৈয়দুল্লাগ, নুর হোসেনের ছেলে কাশেম আলী, শব্বির আহমদের ছেলে শাকের। 

কুতুপালং শরণার্থী ক্যাম্পের মোঃ নবির ছেলে আব্দুল্লাহ, হাসান আলীর ছেলে ইব্রাহিম, আব্দুল হামিদের ছেলে জোবাইর, আবুল কাশেমের ছেলে মোঃ শফিক, সৈয়দ হোসেনের ছেলে মোঃ আলম, ইয়াকুব আহমদের ছেলে গফফার, সিরাজুল হকের ছেলে মোঃ ইলিয়াছ, সৈয়দ হোসেনের ছেলে মাজেদ আব্দুল্লাহ, আলি জোহারের ছেলে রহিমুল্লাহ, মোহাম্মদের ছেলে মোঃ ইউনুচ, সৈয়দ কাসিমের ছেলে রশিদ আহমদ, সৈয়দ নুরের ছেলে ইছা খলিল।

টেকনাফ থানা অফিসার ইনচার্জ মোঃ মোক্তার হোসেন জানান, মিয়ানমার থেকে কারাভোগ শেষে ফেরত আসা ৩২ জনকে বিজিবি টেকনাফ থানায় হস্তান্তর করেছে। এদের মধ্যে ১৭ জন রোহিঙ্গাকে নয়াপাড়া ও কুতুপালং ক্যাম্প কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশী নাগরিকদের হস্তান্তরের জন্য তাদের পরিবারের কাছে খবর দেওয়া হয়েছে।

যাচাই বাছাইয়ের পর তাদেরকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলে জানান তিনি। নয়াপাড়া শরণার্থী ক্যাম্প ইনচার্জ বেলাল হোসেন জানিয়েছেন, নয়াপাড়া ক্যাম্পের রোহিঙ্গা শরণার্থীরা যদি রেজিষ্ট্রেশনভূক্ত (এমআরসি) হয় তবে তাদের ক্যাম্পে গ্রহণ করা হবে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন