ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ২ মাসে ঝরেছে ১৪ প্রাণ

fec-image

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনীর ২৬ কিলোমিটার সড়কে লাফিয়ে বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনা। চলতি বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসেই সড়কে ঝড়েছে ১৪ তাজা প্রাণ। বেপরোয়া গতি ও ট্রাফিক আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগের অভাবে দীর্ঘ হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল।

ফাজিলপুর ও মহিপাল হাইওয়ে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ১৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। তার মধ্যে ফাজিলপুর অংশে ৮টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৯ জনের মৃত্যু হয়। নিহত ৯ জনের মধ্যে ৬ জনই পথচারী। এছাড়া মহিপাল হাইওয়ে থানার আওতাধীন এলাকায় চলতি বছরে ৫টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৫ জন প্রাণ হারিয়েছে। এসব ঘটনায় ৪টি গাড়ি পুলিশ হেফাজতে রয়েছে।

এদিকে জেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতের নির্দিষ্ট কোনো পরিসংখ্যান পাওয়া না গেলেও বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যায়, মহাসড়ক ছাড়াও জেলার বিভিন্ন সড়কে চলতি বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় অন্তত আরও ৩ থেকে ৪ জন নিহত হয়েছেন। এসব দুর্ঘটনায় হতাহতের সংখ্যাও অনেক। নিহতের মধ্যে বেশিরভাগই পথচারী, কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থী ও মোটরসাইকেল আরোহী ছিলেন।

জেলায় চলতি বছরে বিভিন্ন সড়ক দুর্ঘটনার তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, গত সোমবার (৪ মার্চ) ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে রাস্তা পারাপারের সময় বিপরীত দিক থেকে আসা মাইক্রোবাসের ধাক্কায় গুরুতর আহত হন জয়নাল হাজারী কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী নিঝুম আক্তার। গতকাল মঙ্গলবার চট্টগ্রামের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়েছে।

এর আগে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের লেমুয়া রাস্তার মাথায় বেপরোয়া গতিতে মোটরসাইকেল চালানোর সময় বিপরীতদিক থেকে আসা ইটভাঙার ট্রলির সঙ্গে সংঘর্ষে এক কলেজছাত্র নিহত হয়। নিহত মোটরসাইকেল আরোহীর নাম মুশফিক উস সালেহীন মাহিন (২১)। তিনি ফেনী সদর উপজেলার ফরহাদ নগর ইউনিয়নের দক্ষিণ ভোরবাজার এলাকার সৌদি প্রবাসী এম এন মাজেদ ও সাহেদা আক্তারের ছেলে। মাহিন ইনস্টিটিউট অব কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির (আইসিএসটি) ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।

গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দেবীপুর ও কসকা এলাকায় পৃথক দুর্ঘটনায় দুইজন নিহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন, লহ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চর আলগী গ্রামের বশির মাঝির ছেলে মো. আবু বক্কর ছিদ্দিক (২২) এবং ভোলার লালমোহন উপজেলার রায়চাঁদ বাড়ির মো. ফজলুল হকের ছেলে মো. ইয়ামিন।

এর আগে ২৩ ফেব্রুয়ারি মহাসড়কের ফেনীর মহিপাল এলাকায় পেছন থেকে দ্রুতগামী কাভার্ড ভ্যানের ধাক্কায় একটি সবজিবাহী পিকআপের চালক নিহত হয়েছেন। এ সময় পিকআপের সামনের অংশে থাকা দুই যাত্রী আহত হন। নিহত পিকআপের চালকের নাম মো. মহি উদ্দিন (৩৫)। তিনি চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার খৈয়াছড়া এলাকার বাসিন্দা।

৯ ফেব্রুয়ারি ফেনী পৌরসভার সুলতানপুর এলাকার আমিনবাজার সড়কে মাটিকাটার স্কেভেটর বহনকারী ট্রাক্টরের সঙ্গে সিএনজিচালিত অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে ১৩ বছরের এক কিশোর নিহত হয়েছেন। একই ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও পাঁচ জন। এ ঘটনায় নিহত লিমন ছাগলনাইয়া উপজেলার পাঠাননগর ইউনিয়নের জসিমের ছেলে।

গত ৬ ফেব্রুয়ারি বিকেলে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনী সদর উপজেলার ফাজিলপুর এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় মইনুল ইসলাম রাহাত (১৯) নামের এক কলেজ শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। নিহত রাহাত ফাজিলপুর মাদ্রাসা রোডের ওয়ালী ভূঞা বাড়ির শিবপুর আরবি হাট উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক আবুল কাশেমের ছোট ছেলে। তিনি ফাজিলপুর সাউথইস্ট ডিগ্রি কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।

৪ ফেব্রুয়ারি মহাসড়কের ফাজিলপুর এলাকায় যাত্রীবাহী বাস ও পিকআপের মুখোমুখি সংঘর্ষে এক পিকআপচালক নিহত হয়েছেন। তার নাম মো. সাহাব উদ্দিন (২৪)। তার আগেরদিন ৩ ফেব্রুয়ারি রাতে ফেনী-সোনাগাজী আঞ্চলিক সড়কের সদর উপজেলার কলঘর এলাকায় দ্রুতগামী মোটরসাইকেলের ধাক্কায় নুরুল আমিন (৬৫) নামের এক পথচারী নিহত হন।

এর আগে ৩১ জানুয়ারি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সদর উপজেলার বিসিক রাস্তার মাথা এলাকায় রিকশায় অজ্ঞাত গাড়ির ধাক্কায় এক তরুণ নিহত হয়েছেন। নিহত ইহাদুল ইসলাম (২০) উপজেলার লেমুয়া ইউনিয়নের লেমুয়া গ্রামের মো. স্বপন মিয়ার ছেলে। তিনি ফাজিলপুর সাউথইস্ট ডিগ্রি কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিল।

চলতি বছরের ২১ জানুয়ারি শহরের ট্রাংক রোডের দাউদপুল সেতুর পাশে কাঁচাবাজার এলাকায় লেগুনার সঙ্গে মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে এক পথচারী কিশোর নিহত হয়েছেন। তার নাম মো. নিশাত (১৫)। নিহত নিশাত ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার বাংলাবাজার এলাকার কাটাখিলা গ্রামের বাসিন্দা। সে ফেনী শহরের একটি মাদরাসার নবম শ্রেণির ছাত্র ছিল।

১৬ জানুয়ারি ভোরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার মুহুরীগঞ্জের পাশে কবরস্থান নামক এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় অজ্ঞাত নারীর মৃত্যু হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ও সিআইডির টিম হাজির হয় মর্গে। তারা ওই নারীর আঙুলের ছাপ নিয়ে পরীক্ষা–নিরীক্ষা শেষে পরিচয় শনাক্ত করেন। ওই নারীর নাম বুলু বিশ্বাস (৩৫)। তিনি মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার বাজিতপুর ইউনিয়নের কাকৈরখোপা এলাকায় চিত্তরঞ্জন বিশ্বাসের মেয়ে এবং একই এলাকার নকুল বকতের স্ত্রী ছিলেন।

মহাসড়কের ফাজিলপুর অংশে দুর্ঘটনা বাড়ার কারণ জানতে চাইলে ফাজিলপুর হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. রাশেদ খান চৌধুরী বলেন, চলতি বছরে মহাসড়কের ফাজিলপুর অংশে ৮টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৯ জনের মৃত্যুর তথ্য পুলিশের কাছে এসেছে। এ স্থানে পথচারী পারাপার ও বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানোর কারণে দুর্ঘটনা বেশি ঘটছে। নিহত ৯ জনের মধ্যে ৬ জন ছিলেন পথচারী।

এ ব্যাপারে মহিপাল হাইওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোস্তফা কামাল বলেন, চলতি বছরে মহিপাল হাইওয়ে থানা পুলিশের আওতাধীন এলাকায় ৫টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এসব ঘটনায় ৪টি গাড়ি পুলিশ হেফাজতে রয়েছে।

নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) এর ফেনী জেলার নবগঠিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান দারা বলেন, সড়কে চলাচলরত গাড়ি চালকদের শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও দক্ষতার অভাবে দুর্ঘটনা বাড়ছে। এছাড়াও ফেনীর আয়তনের তুলনায় সড়কে যানবাহনের সংখ্যা অনেক বেশি। সাম্প্রতিক সময়ে সড়কে বেপরোয়া গতিতে মোটরসাইকেল চালানোর কারণে দুর্ঘটনা বাড়ছে। মহাসড়কে হাইওয়ে পুলিশের যথাযথ নজরদারি থাকলে দুর্ঘটনা কমিয়ে আনা সম্ভব হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: সড়ক দুর্ঘটনা
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন