তামাক কোম্পানীর লোভনীয় ফাঁদে পার্বত্য এলাকার নীরিহ কৃষক

দুলাল হোসেন,খাগড়াছড়ি:
পার্বত্য এলাকায় ক্রমাগত তামাকের চাষের আগ্রাসন প্রতিরোধ করতে লাভজনক আখ চাষ বাড়ানোর প্রতি গুরুত্বারোপ করেছে কৃষি বিশেষজ্ঞরা। পার্বত্য এলাকার মাটি ও আবহাওয়া এবং একই ভুমিতে একাধিক সাথী ফসল ফলানোর সুযোগ থাকায় এ চাষ তামাকের চেয়ে দ্বিগুণ লাভজনক । সম্প্রতি শহরের একটি কমিউনিটি সেন্টারে আয়োজিত পার্বত্য চট্টগ্রামে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ইক্ষু ও সাথী ফসল আবাদের গুরুত্ব ও সম্ভাবনা শীর্ষক কর্মশালায় কৃষিবিদরা এ অভিমত দিয়েছেন।

কর্মশালায় জানানো হয়, গত ২০০৬ সাল থেকে বাংলাদেশ ইক্ষু গবেষনা ইনষ্টিটিউট’র মাধ্যমে তিন পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি রাঙ্গামাটি ও বান্দরবানে পরীক্ষামূলকভাবে উন্নত জাতের ইক্ষু চাষ শুরু হয়েছে। মূলত পার্বত্য এলাকার উর্বর জমিতে তামাকের আবাদ বেড়ে যাওয়ায় এসব জমিতে উন্নত জাতের ইক্ষু চাষ সম্প্রসারণের লক্ষে পাইলট প্রকল্প হিসেবে গত ৯ বছর ধরে ব্যাপক সাফল্য পাওয়া গেছে। কর্মশালায় ধারণা দেয়া হয়, কৃষি বিজ্ঞানীদের গবেষনায় দেখা গেছে, অধিক লাভবান এবং পার্বত্য এলাকার মাটি ও আবহাওয়া আখ চাষের অনুকুল হওয়ায় এখানকার উৎপাদিত আখ দেশের অন্যান্য এলাকার আখের চেয়ে মিষ্টতা বেশি। যার ফলে এখাকার চিবিয়ে খাওয়া আখ ও গুড় তৈরির আখের চাহিদা সমতলেও দিন দিন বাড়ছে।

তাছাড়া আখ চাষে সাথী ফসল হিসেবে একাধিক ফসল করা সম্ভব বলে আখ চাষে কৃষকরা তামাকের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ লাভ করতে পারে। তামাক চাষে তথাকাথিত কোম্পানীর ফাঁদে পড়ে বাজার সৃষ্টির নামে অনেকেই প্রতারিত হচ্ছে। তামাক কোম্পানী গুলো বিলাস বহুল গাড়ী চড়ে পার্বত্য এলাকার নীরিহ মানুষকে বেশী অর্থের লোভ দেখিয়ে তামাক চাষে উদ্বুদ্ধ করে। তামাক চাষের মরণ ছোবলে এ এলাকার মাটির উর্বরতা শক্তি দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে।

এ অবস্থায় আখ চাষের এখানকার অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে কৃষকদের উন্নত জাতের আখ চাষে প্রশিক্ষণ ও বিনামূল্যে আখের বীজ ও অন্যান্য সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। কর্মশালায় বলায় হয়, পার্বত্য এলাকার আখ চাষের বাজার সৃষ্টিতে বহুমূখী উদ্যোগের নেয়া হয়েছে। আখ চাষীদের পন্য বাজারজাতের নিশ্চয়তার লক্ষ্যে আখ থেকে গুড় ছাড়াও চকলেটসহ অন্যান্য সামগ্রী তৈরির কথা ভাবা হচ্ছে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম ইক্ষু চাষ সম্প্রসারণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ড.এস ইউ ইউসুফজাই এর সভাপতিত্বে কর্মশালায় প্রধান অতিথি ও কর্মশালার উদ্বোধন করেন, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা। কর্মশালায় বিশেষ অতিথি ছিলেন, খাগড়াছড়ি কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের জেলা প্রশিক্ষন কর্মকর্তা আবদুল মতিন, সাবেক উপ-পরিচালক আবদুল মালেক। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইক্ষু গবেষনা ইনস্টিটিউট খাগড়াছড়ির বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা দিবাকর চাকমা। পার্বত্য এলাকায় বিগত সময়ে আখের চাষের বিভিন্ন সফলতা নিয়ে বিভিন্ন তথ্য ও উপাত্ত উপস্থাপন করেন, বান্দরবান ইক্ষু গবেষনা ইনষ্টিটিউটের ইনচার্জ ক্যাসাই মারমা। কর্মশালায় জেলার বিভিন্ন উপজেলার কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের কর্মকর্তা ও তিন পার্বত্য জেলার ইক্ষু চাষের গবেষক ও আখ চাষীরা উপস্থিত ছিলেন।

 অন্যদিকে সরকারী ব্যবস্থাপনায় আখ চাষের এ সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে আখের পরিকল্পিত বাজার ব্যবস্থাপনা সৃষ্টি করা গেলে আখ এ অঞ্চলের আর্থ সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটাতে পারে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন