থানচিতে সাড়ে ৮ হাজার শিক্ষার্থীদের অধিকাংশের হাতেই পাঠ্যবই নেই

fec-image

বান্দরবানে থানচি উপজেলা উচ্চ মাধ্যমিক ও প্রাথমিককে সাড়ে ৮ হাজার শিক্ষার্থীদের পাঠ্যবই হাতে নেই। সময় কাটছে মাঠে খেলাধুলা ও ক্লাসের গান বাজনা করে। এছাড়াও উপজেলা সদরের বাইরে দুর্গম ক্ষুদ্র নৃ-গৌষ্ঠীদের গ্রামের অধিকাংশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শ্রেণি শিক্ষক অনুপস্থিত থাকায় শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ বাড়িতে খেলাধুলা করে সময় পার হচ্ছে।

গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ভিত্তিক পাঠ্যবইগুলো হলো প্রাথমিক স্তরে ৫ম, ৪র্থ; তৃতীয় শ্রেণিতে প্রাথমিক বিজ্ঞান, প্রাথমিক গণিত ও বাংলা; মাধ্যমিকগুলোতে গ্রুপভিত্তিক বিষয়সমূহ যেমন- ৯ম শ্রেণির বাংলা, গণিত, ইংরেজি ১ম পত্র , ইতিহাস, পৌরনীতি, ভূগোল, হিসাব বিজ্ঞান, ব্যাংকিং, ব্যবসা উদ্যোগ; এছাড়াও ৭ম শ্রেণিতে ইতিহাস, সামাজিক বিজ্ঞান গুরুত্বপূর্ণ পাঠ্য বইগুলো এখনও বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নিকট পৌঁছায়নি।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্যমতে থানচি উপজেলা ৪টি ইউনিয়নের ৩৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গত বছরের নভেম্বর শেষ সপ্তাহের শিশু শ্রেণির থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত মোট ৬ হাজার ৯শত কোমলমতি শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যবইয়ের চাহিদা দিয়েছিল। জানা যায়, ৪টি ইউনিয়নের নিন্ম মাধ্যমিক ৩টি উচ্চ মাধ্যমিক ৪টি মোট ৭টি বিদ্যালয়ের মোট ১ হাজার ৬শত শিক্ষার্থীদের পাঠ্যবইয়ের চাহিদাপত্র একই সাথে সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ে দিয়েছিল উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।

কিন্তু ১ জানুয়ারি উপজেলা সকল বিদ্যালয়ের একযোগে বিতরণ করা হয়েছে শিশু শ্রেণিতে সম্পূর্ণ, ২য় শ্রেণিতে সম্পূর্ণ, তৃতীয়, ৪র্থ, ৫ম শ্রেণিতে বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় ( সমাজ), ইংরেজি, ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা। তবে প্রাথমিক বিজ্ঞান, প্রথমিক গণিত, ও বাংলা বই এখন পায় নি। নিম্ন মাধ্যমিককের ৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণিতে সকল বই পাইলে ও উচ্চ মাধ্যমিককে ৭ম শ্রেণিতে ইতিহাস, সমাজ বিজ্ঞান দুইটি বিতরণ করা হয়নি, ৯ম শ্রেণিতে বাংলা, গণিত, ইংরেজি ১ম, ইতিহাস, পৌরনীতি, ভূগোল, হিসাব বিজ্ঞান, ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং ও ব্যবসা উদ্যোগ বই বিতরণ করা হয় নি।

রোববার সকালে সরেজমিনে গিয়ে থানচি মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ক্যসাচিং মারমা বলেন, প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কার্যালয় থেকে তৃতীয়, ৪র্থ, ৫ম শ্রেণিতে প্রাথমিক বিজ্ঞান, প্রথমিক গণিত ও বাংলা পাঠ্য বই সরবরাহ করা সম্ভব হয় নি। সুতরাং নিয়মিত শিক্ষার্থীদের ক্লাস করার সম্ভব হচ্ছে না। আমাদের বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষের চেয়ে শিক্ষার্থী সংখ্যা বেশি হয়ে যাচ্ছে। এখনও শিক্ষার্থী ভর্তির প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। বর্তমানে ৩৬৮ জন শিক্ষার্থীর জন্য শিক্ষক ৮ জন কর্মরত আছেন। উপজেলা সদরে বিদ্যালয় বিধায় শিক্ষার্থী ক্রমন্বয়ে পরিমাণ বেড়ে চলছে, রীতিমতো খেতে হচ্ছে হিমশিম। অনেক শিক্ষার্থী পাঠ্যবই না পেয়ে বাহিরে খেলাধুলায় সময় কাটাচ্ছে। অনেকে পাঠ্যবই না পেয়ে কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি ফেরে। অনেক শিক্ষার্থী স্কুলে গিয়ে বই না পেয়ে হতাশ হয়ে বাড়ি ফেরে।

থানচি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নূর মোহাম্মদ বলেন, জানুয়ারির ৫ তারিখের মধ্যে ভর্তি শেষ করে বর্তমানে ৩৪২ জন শিক্ষার্থী মধ্যে ৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির সব বই পেয়েছে। কিন্তু ৭ম শ্রেণিতে ইতিহাস, সমাজ বিজ্ঞান দুইটি পাঠ্যবই, ৯ম শ্রেণিতে বাংলা, গণিত, ইংরেজি ১ম, ইতিহাস, পৌরনীতি,ভূগোল, হিসাব বিজ্ঞান, ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং, এবং ব্যবসা উদ্যোগ বই বিতরণ করা হয় নি। তাই শিক্ষার্থীদের ক্লাস করতে সাময়িক অসুবিধা হচ্ছে। প্রতি বছর জানুয়ারি ১৫ তারিখ মধ্যে সব পাঠ্য বই বিতরণ কাজ শেষ করার সম্ভব হয়েছে। কিন্তুু চলতি বছরে সামান্য অসুবিধা হচ্ছে।

এ বিষয়ের জানতে উপজেলা প্রথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (অ. দা.) ত্রিরতন চাকমা কার্যালয়ে অনুপস্থিত পাওযা যায় নি। তবে তার মুঠো ফোনে বার বার কল দিলেও বন্ধ পাওয়া যায়।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আসলাম খাঁন তিনিও কার্যালয়ে অনুপস্থিত কিন্তু মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, চাহিদাপত্র মোতাবেক ১ জানুয়ারি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ৭৫ শতাংশ পাঠ্য বই দিয়েছে। তা সময়মতো সব বিদ্যালয়গুলোতে পৌঁছিয়ে দিয়েছি কিন্তু বাকি ২৫ শতাংশ বই এখনও পাইনি। তবে আজ বা কালকের মধ্যে পৌঁছে যাবে।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: থানচি, পাঠ্যবই, শিক্ষার্থী
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন