থানচি বাজার সড়কের বেহাল দশা, জনদুর্ভোগ চরমে

fec-image

বান্দরবানে থানচি উপজেলা সদরে একটি মাত্র বাজারের অভ্যন্তরীণ জনগুরুত্বপূর্ণ সড়কের বেহাল দয়া। সড়কের উপরের অংশ উঠে যাওয়ায় রড় বেরিয়ে যান চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এছাড়া সড়কের বিভিন্ন স্থানে সৃষ্টি গর্তে ময়লা আবর্জনার স্তুপ হয়ে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে যা পরিবেশের উপর বিরুপ প্রভাব ফেলছে। এতে এ সড়কে চলাচলকারীদের ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে। গত ৪ বছরে ধরে সড়কটি সংস্কাররি দাবি জানালেও এখনও কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

জানা যায়, স্থানীয় সরকার প্রকৌশ অধিদপ্তর (এলজিইডি) অর্থায়নের ২০১৭-১৮ সালে দুই ধাপে প্রায় ৮০ লাখ টাকার ব্যয়ের থানচি বাজারে প্রবেশ পথ থেকে বাজার ঘুরে অভ্যন্তরীণ সড়কের আর সিসি ঢালাই (মিনি কার্পেটিং) নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করা হয়েছে।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরে বাস্তবায়িত প্রকল্পের উপেক্ষা করে ২০২০ সালে সারা দেশের নোভেল করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। সারা দেশের লকডাউন সময়ের একই বছরে ২৭ এপ্রিল থানচি বাজারের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে প্রায় ২২০টি ছোট বড় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ব্যবসায়িক দোকান ঘর পুড়ে ছাই হয়ে যায়। অগ্নিকাণ্ডে পরর্তীতে উপজেলা প্রশাসন ও বাজার ব্যবসায়ীদের সমন্বয়ে ওই সময নতুন দোকান ঘরগুলিকে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ও যেকোন দুর্ঘটনা মোকাবেলায় প্রতিটি দোকানঘর নির্মাণে আধাপাক্কা, পাক্কা ঘর নির্মাণের তাগিদ দেয়া হলে বাজারে অনেক ইট, সিমেন্ট, রড, মালামালের পরিবহনের ভারী যানবহন প্রবেশ করেন। মালামাল পরিবহন ও ভারী যানবহন চলাচলের বাজারে চতুর পাশে অভ্যন্তরীণ সড়কের জরাজীর্ণ বিভিন্ন স্থানের গর্তের সৃষ্টি হয়ে রড উঠে চলাচলে ঝুকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। এছাড়া গর্তে ময়লা জমে বর্জ্য স্তুপে পরিণত হয়েছে।

একই অর্থবছরের উপজেলা প্রশাসন এবং জনপ্রতিনিধিরা স্থানীয় বাজার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছে শিগগির জনগুরুত্বপূর্ন সড়কটি সংস্কারের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কিন্তু দীর্ঘ চার বছর অতিবাহিত হলো এখন ও সংস্কার বা নির্মাণ করা হয়নি।

সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাজারের অভ্যন্তরে বিজিবি চেক পোস্টের আশেপাশে চারদিকে সড়কের সারি সারি গর্ত, মাঝখানের সবজি বিক্রেতাদের ঝুপড়ি, বাজার মূল প্রবেশ দ্বারে সড়কের ছিন্ন বিচ্ছিন্ন গর্তে ময়লা আবর্জনা দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।

বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, ঝুপড়ি বাজারে নামে মাত্র প্রতিটি অস্থায়ী দোকান থেকে উপজেলা পরিষদ, ইউনিয়ন পরিষদ, জেলা পরিষদকে মাসিক দুই হাজার টাকা করে নিয়মিত টেক্স দিতে হয়েছে। শুকনো মাছ, কাঁচা মাছ, মাংস, সবজি বিক্রেতা রয়েছে প্রায় ৫০ জনের মতো তবে এ সব বাজারে চারদিকে রাস্তা প্রবেশ দ্বারে ছোট ছোট গর্ত, ময়লা-আবর্জনাসহ নানান সমস্যা দেখা দিচ্ছে।

চট্টগ্রামে বাসিন্দা ট্রাক চালক মো. ইউছুপ বলেন, উন্নয়ন কাজের ঠিকাদারদের অর্ডারে আমি চট্টগ্রাম থেকে ৫ টন রড নিয়ে গাড়ি প্রবেশ করার সময় সড়কের রডের সাথে ধাক্কা লেগে গত দুই বছরে ১০-১২টা নতুন চাকা নষ্ট হয়েছে।

বাজার পরিচালনা কমিটি সাধারণ সম্পাদক মো. জসিম উদ্দিন বলেন, প্রতিদিন আমাদের বাজারে স্থানীয় লোকজন, পর্যটক, সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ প্রায় ৫ হাজার লোকের সমাগম হয়। সড়কটি সংস্কারের জন্য গত ৪ বছরে প্রশাসনকে কতবার বলেছি ঠিক মনে নেই। প্রশাসন বার বার বলছে শিগগির সড়কটি সংস্কার করা হবে।

ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী তোহিদুল ইসলাম বলেন, শুকনো মৌসুমে কেন রকমে পাঁয়ে হেঁটে চলাচল করা যায়। কিন্তু বর্ষা মৌসুমে সামান্য বৃষ্টিতে হাটু পর্যন্ত কাঁদা হয়। এছাড়া যানবহনের চাকা থেকে পানি-কাঁদা ছিটিয়ে অনেকে কাপড়-চোপড় হয়ে যায়।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) উপজেলা প্রকৌশলী মো. এ্যামদাদুল হক বলেন, আমি যোগদানের পর সড়কের অবস্থা দেখে খুবই দুঃখ লাগে। সেজন্য এলজিইডি মন্ত্রণালয়ের বারবার তকবির করার পর গত আগস্টে টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন। গত সেপ্টেম্বর মাসে মেসার্স আয়ান এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. মহিউদ্দিনকে প্রায় ৭৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ৯৭৫ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ১৮ মিটার প্রস্থ সড়কের নির্মাণের কার্যাদেশ দিয়েছি। কিন্তু কার্যাদেশ দেয়ার গত তিন মাসেরও সড়ক নির্মাণ কাজ শুরু করতে দেখা যায় নি।

থানচি বাজার পরিচালনা কমিটি সভাপতি ও বাজার চৌধুরী খামলাই ম্রো বলেন, থানচি বাজারটি জনগুরুত্বপূর্ণ এবং পর্যটন এলাকা হওয়ায় সড়কটি দ্রুত সংস্কারের প্রয়োজন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো: আবুল মনসুর বলেন, উপজেলা প্রকৌশলীকে আমি এবং জেলা প্রশাসক মহোদয় অনেকবার বলেছি। সড়কটি জনগুরুত্বপূর্ণ জাতীয় নির্বাচনের আগেই বাস্তবায়ন কাজ শেষ করতে। আগামী ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহের কাজ শুরু না করলে কার্যাদেশ বাতিল করে ২য় স্থানের ঠিককদারকে কার্যাদেশ দেয়া ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন