দীঘিনালার মাইনী নদীর উপর সেতু নির্মাণ করা হলে পূর্বপাড়ের ১২ গ্রামের চিত্র পাল্টে যাবে

স্টাফ রিপোর্টার, পার্বত্যনিউজ :

একটি সেতুর অভাবে দীর্ঘদিন ধরে যোগাযোগ ক্ষেত্রে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলার মেরুংবাসীকে। মেরুং বাজার সংলগ্ন মাইনী নদীর ওপর সেতু নির্মাণের দাবী দীর্ঘদিনের হলেও স্বাধীনতার ৪২ বছরেও মাইনী নদীর ওপর সেতু নির্মাণের কোনো উদ্যোগ পরিলক্ষিত হয়নি। একের পর এক সরকার আসে এবং সরকার যায় মেরুংবাসীর দুর্ভোগের সমাপ্তি ঘটেনা।

সম্প্রতি সরেজমিনে ঘুরে ও স্থানীয় অধিবাসীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলার সদর থেকে মেরুং বাজারের দুরত্ব মাত্র ১২ কিলোমিটার এবং পাশ্ববর্তী বাঘাইছড়ি উপজেলার দুরত্ব মাত্র ৮ কিলোমিটার। বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে বাঘাইছড়ির সাথে মেরুংবাসীর সুসম্পর্ক থাকলেও মাইনী নদীর ওপর সেতু না থাকায় ৮ কিলোমিটারের পথ পাড়ি দিতে হয় দীর্ঘ ৪০ কিলোমিটার পথ ঘুরে। বছরের পর বছর ধরে মেরুং এলাকার বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ মাইনী নদীর উপর সেতু নির্মানের দাবী জানিয়ে আসলেও সেতু নির্মানের কোনো উদ্যোগ পরিলক্ষিত হয়নি। তাই যুগ যুগ ধরে যোগাযোগ ক্ষেত্রে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে মেরুংবাসীকে।

এলাকাবাসীর নদী পাড়াপাড়ের একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে বর্ষা মৌসুমের সময় নৌকা এবং শীতের মৌসুমে বাঁশের সাকো। বর্ষা মৌসুমে জীবনের ঝুঁকি নিয়েই পার হতে হয় খরস্রোতা মাইনী নদীর ওপর দিয়ে। নদীর পশ্চিম পাড়ে মেরুং বাজার এবং পূর্বপাড়ে রয়েছে ১২টি জনবসতিপূর্ণ গ্রাম। এসব গ্রামের লোকজন কৃষির ওপর নির্ভরশীল। তাই উৎপাদিত কৃষিপণ্য পরিবহনের কোনো প্রকার সুযোগ না থাকায় ওপাড়ের কৃষকরা তাদের উৎপাদিত কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এলাকাবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এ পাড় থেকে ওপাড়ের লোকজনকে দেখা গেলেও দু’পাড়ের লোকজনকে ভাগ করে রেখেছে খরস্রোতা মাইনী নদী। বর্ষা মৌসুমে পশ্চিম পাড়ের লোকজনকে উপজেলা সদর কিংবা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাতায়াতের ক্ষেত্রে কোনো প্রকার সমস্যা না হলেও পূর্বপাড়ের লোকজনকে পোহাতে হয় চরম দুর্ভোগ।

শুধু তাই নয় বর্ষা মৌসুমে পূর্বপাড়ের স্কুল ও কলেজগামী শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া ও স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বন্ধ থাকে। স্থানীয় ইউপি সদস্য মো: জাহাঙ্গীর আলম দুলাল জানান, মাইনী নদীর ওপর একটি সেতু নির্মানে আমরা দীর্ঘদিন থেকে বিভিন্ন মহলে দাবী জানিয়ে আসছি। তিনি ক্ষোভের সুরেই বলেন, নির্বাচন এলেই রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে সেতু নির্মানের প্রতিশ্রুতি দিলেও কেউই কথা রাখেননি। তিনি জানান ‘মাইনী নদীর উপর সেতু নির্মাণ করা হলে পূর্বপাড়ের ১২ গ্রামের চিত্র পাল্টে যাবে।

মেরুং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো: মোশারফ হোসেন জানান, মেরুং ইউনিয়নকে দু’ভাগে বিভক্ত করে রেখেছে মাইনী নদী। তাই মাইনী নদীর উপর একটি সেতু নির্মানের জন্য আমরা দীর্ঘদিন ধরে দাবী জানিয়ে আসছি। রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে সেতু নির্মানের বিষয়ে একাধিকবার প্রতিশ্রুতি দেয়া হলেও অদ্যবধি আলোর মুখ দেখেনি। বর্তমানে মাইনী নদীর ওপর সেতু নির্মানের দাবী মেরুংবাসীর প্রাণের দাবীতে পরিণত হয়েছে বলে জানান তিনি।

দীঘিনালা উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি হাজী মো: আবুল কাশেম জানান, মেরুং বাজার সংলগ্ন মাইনী নদীর ওপর সেতু নির্মানের জন্য দলের পক্ষ থেকে আমাদের সব ধরনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন