ননজুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে সরকারি পাহাড় বিক্রেতাদের ধরতে মাঠে দুদক

কক্সবাজার প্রতিনিধি:

অবশেষে কক্সবাজারে পাহাড়ের কান্না থামাতে মাঠে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন। ইতোমধ্যে সরকারি পাহাড় বিক্রি ও পাহাড় কাটা বন্ধে টানা দু’দিন অভিযান চালিয়েছে দুদক। টানা দুইদিন অভিযান চালিয়ে কক্সবাজার শহরের লাইটহাউজ ফাতেরঘোনা এলাকায় ৭৮ একরের সরকারি একটি পাহাড় দখলমুক্ত করেছে দুদক। অভিযানে ওই পাহাড় থেকে শতাধিক ঘরবাড়ি উচ্ছেদ করা হয়। পুনরায় দখল ঠেকাতে বনবিভাগের তত্ত্বাবধানে বনায়ন ও রক্ষাবেক্ষবনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

ফাতেরঘোনা এলাকায় সরকারি ৭৮ একরের একটি পাহাড় দীর্ঘদিন ধরে কেটে প্লট বানিয়ে বিক্রি করে আসছে শহরের সিকদার মহল এলাকার নুরুল হক সওদাগরের ছেলে আজাদ হাসান ও নওশাদ। পাহাড় কেটে তৈরি করা প্লটে শতাধিক বাড়িঘর স্থাপন করা হয়েছে। গত কয়েক মাস ধরে ভয়াবহ পাহাড় কাটা চলে সেখানে। প্রশাসন একাধিকবার অভিযান করলেও সরকারি জমি বিক্রি, পাহাড় কাটা বা অবৈধ বসতি স্থাপন থামেনি। শেষ পর্যন্ত পাহাড় কাটা বন্ধ ও সরকারি পাহাড় রক্ষায় এগিয়ে আসল দুদক।

অভিযান সম্পর্কে এনফোর্সমেন্ট অভিযানের প্রধান সমন্বয়ক দুদক মহাপরিচালক (প্রশাসন) মোহাম্মাদ মুনীর চৌধুরী বলেন, পরিবেশ ধ্বংসের জন্য দায়ী অপরাধীদের খুঁজে বের করা হবে।  একই সাথে এই দুর্নীতির মাধ্যমে যারা লাভবান হয়েছে তাদের আইনের আওতায় আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এছাড়া কেটে ফেলা পাহাড়ের মাটি পুনঃভরণ করে পাহাড়কে পূর্বের আকৃতিতে ফিরিয়ে আনা হবে।

দুদক সূত্র জানায়, গত মঙ্গলবার ও বুধবার দুইদিনের অভিযানে ফাতেরঘোনা এলাকায় শতাধিক ঘরবাড়ি উচ্ছেদ করা হয়েছে। এরমধ্যে একতলা বিশিষ্ট ভবনও রয়েছে প্রায় আটটি। পাহাড় কাটায় সন্দেহভাজন ৩ জনকে আটক করা হয়েছে। এটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রশাসন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে।

অভিযানে নেতৃত্ব দেন দুদকের উপপরিচালক লুৎফুর কবির চন্দন। দ্বিতীয় দিনে অভিযানে আরও ছিলেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সেলিম শেখ, কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এসএম হুমায়ুন কবির, পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের সিনিয়র কেমিস্ট কামরুল হাসান ও পরিদর্শক মুমিনুল ইসলাম। অভিযানে সহযোগিতা করে পুলিশ, র‌্যাব ও ৩৯ আনসার ব্যাটালিয়ান।

পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের সিনিয়র কেমিস্ট কামরুল হাসান বলেন, ফাতেরঘোনায় পাহাড় কেটে সাবাড় করা হয়েছে। অভিযানে প্রায় ২০টি পাহাড় কাটার স্পট পাওয়া গেছে। পাহাড় কাটার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

দক্ষিণ বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এসএম হুমায়ুন কবির বলেন, উচ্ছেদের পর প্রাথমিকভাবে সেখানে ৪০০ শতাধিক বিভিন্ন গাছের চারা রোপন করা হয়। পর্যায়ক্রমে পুরো পাহাড়ে বনায়ন করে আবারও সবুজে ফিরিয়ে নেওয়া হবে এবং রক্ষণাবেক্ষণ করা হবে।

দুদক চট্টগ্রামের উপপরিচালক লুৎফুর কবির চন্দন বলেন, পাহাড়টি দখলমুক্ত করা হয়েছে। সেখানে বনায়ন করে আবারও সবুজে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য বনবিভাগ ও প্রশাসন কাজ করবে। একই সাথে কঠোরভাবে মনিটরিংও করা হবে। এই পাহাড়টি দখলে জড়িত আজাদ হাসান ও নওশাদকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। তাদের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় করা হবে।

তিনি আরও বলেন, কক্সবাজারে যেসব জায়গায় পাহাড় কেটে ঘরবাড়ি হচ্ছে বা হয়েছে সেখানে আগামী রোববার থেকে আবারও অভিযান চলবে। সরকারি পাহাড় বিক্রির সাথে জড়িতদেরকে আইনের আওতায় আনতে এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।

তিনি বলেন, পাহাড়ের দখল নিয়ে কেনাবেচার ঘটনাও ঘটেছে অহরহ। ফাতের ঘোনা পাহাড়ের সরকারি জমিও ননজুডিশিয়াল স্ট্যাম্পের মাধ্যমে কেনাকাটা হয়েছে দেদারছে। গত দুদিন ধরে চলা অভিযানে এমন অনেক তথ্য পাওয়া গেছে। সরকারি পাহাড়ের জমি বেচা কেনার বিষয়টির আরও সন্ধান করে যাচ্ছে দুদক।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন