নিরাপত্তা বাহিনীর অস্থায়ী ক্যাম্প সরিয়ে নেওয়া শুরু হওয়ায় পার্বত্য চট্টগ্রামের জনমনে আতঙ্ক

24(05)

নিজস্ব প্রতিবেদক:
শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নের অংশ হিসাবে সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থান থেকে নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর অস্থায়ী ক্যাম্প প্রত্যাহার শুরু করেছে। এর মধ্যে বেশ কিছু নিরাপত্তা ক্যাম্প প্রত্যাহার করেছে এবং আরো কিছু নিরাপত্তা ক্যাম্প প্রত্যাহার প্রক্রিয়াধীন বলে জানা গেছে।

এদিকে নতুন করে নিরাপত্তা বাহিনীর ক্যাম্প প্রত্যাহার শুরু হওয়ায় ক্যাম্পের আশেপাশে বসবাসকারী নিরীহ মানুষের মধ্যে শুরু হয়েছে অজানা আতঙ্ক।

সূত্রে জানা গেছে, গেল বছরের (২০১৫) আগস্ট মাস জুড়ে মানিকছড়ি ও রামগড় উপজেলার উত্তর ও দক্ষিণ হাফছড়িসহ আশে-পাশের বেশ কয়েকটি গ্রামে পরিত্যক্ত ভূমিতে ক্যায়াং(মন্দির) নির্মাণকে ঘিরে বাঙ্গালী ও উপজাতি সম্প্রদায়ের মাঝে সৃষ্ট মতবিরোধ নিরসনে অস্থায়ীভাবে নির্মিত নিরাপত্তা ক্যাম্প সরিয়ে নেওয়াকে ঘিরে আবারও উত্তেজনা দেখা দিয়েছে।

বুধবার সকাল থেকে ওই এলাকার শত শত বাঙ্গালীরা অস্থায়ী নিরাপত্তা ক্যাম্প সরিয়ে নেওয়ার প্রতিবাদে রাস্তায় ব্যারিকেট দিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেছে। পরে নিরাপত্তার স্বার্থে নিয়মিত টহল জোরদার করার ঘোষণায় ব্যারিকেড সরিয়ে নেয় এলাকাবাসী।

পুলিশ ও গুচ্ছগ্রামবাসী সূত্রে জানা গেছে, মানিকছড়ি ও রামগড় উপজেলার উত্তর ও দক্ষিণ হাফছড়ি, বকরি পাড়া, মনাধন পাড়া ওয়াকছড়িসহ আশে-পাশের বেশ কয়েকটি গ্রামে সেই ১৯৮০-৮১ ও ৮৩-৮৪ সালে তৎকালীন সরকার বাঙ্গালীদেরকে শরণার্থী হিসেবে প্রতি পরিবারকে ৫ একর খাস টিলা ভূমির কবুলিয়ত দিয়ে উল্লেখিত জনপদে বসবাসের সুযোগ দেয়। ফলে সেখানে বাঙ্গালীরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা উপজাতিদের সাথে সু-সর্ম্পক গড়ে তোলে এবং সুখে-শান্তিতে বসবাস করতে থাকে।

এক পর্যায়ে ১৯৮৭-৮৮ সালে এ অঞ্চলের তৎকালীন আতংক ‘শান্তি বাহিনী’ বাঙ্গালী শরণার্থীদের সরিয়ে নেওয়ার দাবীতে শুরু করে সশস্ত্র আন্দোলন। এতে ৩ পার্বত্য জেলার ন্যায় এখানেও বাঙ্গালীদের ঘর-বাড়ী জ্বালিয়ে দেয়াসহ গুলি করে এবং পুড়িয়ে মারা হয়েছে এখানকার অসহায় অসংখ্য বাঙ্গালীদের।

24(03)

উল্লিখিত জনপদে ওই সময় সন্ত্রাসী কর্তৃক নিহত হয়েছে অনেক পরিবারের বয়োঃবৃদ্ধ ও শিশু-কিশোর! পরবর্তীতে সরকার আইন-শৃংখলা রক্ষার্থে পার্বত্যাঞ্চলে বসবাসরত বাঙ্গালীদের নিরাপত্তায় গড়ে তোলে “গুচ্ছগ্রাম নামক বন্দীশালা!” যা আজোও বহাল রয়েছে। কিন্তু সরকার প্রদত্ত বাঙ্গালী শরনার্থীদের টিলা ভূমিগুলো থেকে যায় অরক্ষিত(পরিত্যক্ত)। ফলে ওইসব খাস ভূমি উপজাতিদের পৈতৃক সম্পত্তি বলে দাবী করে উপজাতিরা।

একই কারণে গত ২০১৫ সালের আগস্ট মাসের শুরুতে ওই জনপদের পরিত্যক্ত ভূমিতে জনৈক ভান্তে (একাধিক টিলায়) ধর্মীয় পতাকা ঝুলিয়ে ক্যায়াং নির্মাণের নামে ভূমি জবর-দখল শুরু করলে উত্তেজনা দেখা দেয়। এক পর্যায়ে উপজাতি এবং বাঙ্গালীদের ভ্রাতৃত্ববন্ধনে চিড় ধরে। ইউপিডিএফ এবং বাঙ্গালীরা পৃথক পৃথক ভাবে শুরু করে আন্দোলন। এক পর্যায়ে রাতের আধারে উপজাতি সন্ত্রাসীরা বাঙ্গালীদের ফসলী জমির ফসল ও ঘর-বাড়ী জ্বালিয়ে দেয়। এতে উত্তেজনা বেড়ে যায়। পরে প্রশাসন নিরাপত্তার স্বার্থে গেল বছরের ১০ সেপ্টেম্বর বকড়ী পাড়ার নির্ঝন পাহাড়ে পুলিশ, আনসার ও সেনাবাহিনীর সমন্বয়ে একটি অস্থায়ী নিরাপত্তা ক্যাম্প বসায়। এতে ওই জনপদে সন্ত্রাসী তৎপরতা থেমে যায়। অনায়াসে বাঙ্গালী ও উপজাতিরা পূর্বের ন্যায় বসবাস শুরু করেন।

গত এক বছরে সেখানে বসবাসরত উপজাতি ও বাঙ্গালীদের সর্ম্পকে মধ্যে কোন রকম ছেদ পরিলক্ষিত হয়নি! হঠাৎ করে ২৪ আগস্ট বুধবার সেই অস্থায়ী নিরাপত্তা ক্যাম্পটি ছেড়ে মালামাল নিয়ে নিরাপত্তা বাহিনী চলে যেতে চাইলে সকাল থেকে এলাকাবাসীরা(নারী-পুরুষ) রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে প্রতিবাদ শুরু করে।

 খবর পেয়ে জনপ্রতিনিধি ও সেনাবাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ঘঁনাা স্থলে ছুটে আসেন। সেখানে ইউপি সদস্য মোশারফ হোসেন, নুর নাহার বেগম ও চেয়ারম্যান মো. শফিকুর রহমান ফারুক এবং সিন্দুকছড়ি জোনের টু আইসি মেজর মো. রাকিব হাসান উপস্থিত এলাকাবাসীর উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন এবং তাদেরকে সান্তনা দেন।

এ সময় চেয়ারম্যান ও সেনা কর্মকর্তা বলেন, এখানে একটি অনাকাংখিত ঘটনার প্রেক্ষিতে অস্থায়ী নিরাপত্তা ক্যাম্প বসানো হয়েছিল। এখন থেকে নিয়মিত টহলের মাধ্যমে নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে। আতংকিত হওয়ার কিছুই নেই। নিরাপত্তার বিঘ্ন ঘটলে প্রশাসন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।

এদিকে ক্যাম্প সরিয়ে নেওয়ায় আবারও মানিকছড়ি ও রামগড়ের এ জনপদে অশান্তি’র আশংকা করছেন বাঙ্গালীরা।

এ প্রসঙ্গে বাঙ্গালী নেতা মো. ইউছুফ লিডার বলেন, নিরাপত্তা ক্যাম্প বসার পর দীর্ঘ ১ বছর এখানে উপজাতি ও বাঙ্গালীরা শান্তিতে ছিল। এখন আবার এখানে উপজাতি সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্যের আশংকা করছি আমরা ।

বাঙ্গালী ছাত্র পরিষদের সভাপতি মো. মোক্তাদীর বলেন, এ অঞ্চলের বসবাসরত সাধারণ উপজাতি ও বাঙ্গালীরা শান্তিতে থাকতে চায়। কিন্তু অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা নিরাপরাধ চাষীদের ওপর চাঁদাবাজি, হুমকি প্রদান করে আতংক ছড়াচ্ছে। এখানে একটি স্থায়ী ক্যাম্প স্থাপনের জোর দাবী জানান তিনি।

এদিকে গত কিছুদিনে জেলার দিঘীনালা উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে বেশ কিছু অস্থায়ী নিরাপত্তা ক্যাম্প সরিয়ে নেয়ায় স্থানীয়রা আতঙ্কে ভুগছেন বলে জানা গেছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন