নির্মাণের বছরেই ভেঙে গেছে উন্নয়ন বোর্ডের অর্ধকোটি টাকার মাটির বাঁধ

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি:

খাগড়াছড়ির মাটিরাঙা উপজেলার গৌরাঙ্গপাড়া ছড়ার উপর বাঁধ নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার বছরেই বাঁধটি ভেঙে গেছে। শুষ্ক মৌসুমে ওই এলাকায় চাষাবাদে সেচের সুবিধার্থে ২০১৩-১৪ ও ২০১৪-১৫ অর্থবছরে অর্ধকোটি টাকা ব্যয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড(পাচউবো) বাঁধটি নির্মাণ করে।

সঠিক পরিকল্পনা ও নির্মাণ ত্রুটির কারণে নির্মাণের মাত্র এক বছরের মধ্যে বাঁধ ভেঙে গিয়ে কৃষি জমি ও ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এতে করে কৃষকদের লাভের চেয়ে ক্ষতি হয়েছে বহুগুণ।

পাচউবো খাগড়াছড়ি শাখা অফিসে এবিষয়ে তথ্য চাওয়া হলে তথ্য দিতে অপারগতা জানানো হয়। পাচউবো’র একটি সূত্র ও একাধিক ঠিকাদার জানান, গৌরাঙ্গ পাড়া ছড়ার উপর মাটির বাঁধ তৈরিতে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। ঠিকাদার যতনেশ্বর ত্রিপুরা পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের বর্তমান চেয়ারম্যান নব বিক্রম কিশোর ত্রিপুরার আত্মীয়। চেয়ারম্যানের প্রভাব বিস্তার করে ওই ঠিকাদার নিম্ন মানের কাজ করলে কিছু বলার থাকেনা।

বাঁধ নির্মাণে প্রাথমিক খরচ ধরা হয়েছিল ২৫ লক্ষ টাকা। পরবর্তী অর্থবছরে দ্বিগুণ করে ৫০ লক্ষ টাকা করা হয় বাঁধ নির্মাণ ব্যয়। নির্মাণ ব্যয় বৃদ্ধি পেলেও গুণগত মান রক্ষা না করায় এক বছরে বাঁধ ভেঙে যায়।

গৌরাঙ্গপাড়া ছড়াটি বাঁধের স্থান থেকে প্রায় সাত কিলোমিটার দূরে ফেনী নদীতে গিয়ে মিশেছে। ছড়ার দু’পাশে রয়েছে হাজার একর ফসলি জমি। শুষ্ক মৌসুমে এ ছড়ার পানি দিয়ে চলে চাষাবাদ।

স্থানীয়দের অভিযোগ, গৌরাঙ্গপাড়া ছড়ার বাঁধটি যথাযথ পরিকল্পনায় করা হয়নি। শুষ্ক মৌসুমে বাঁধের পানি ছাড়তে একটি ছোট  গেইট করা হয়েছিলো। যা দিয়ে সামান্য পরিমান পানি নিষ্কাশন হতো এবং বাঁধ থেকে দু’তিন কিলোমিটারের মধ্যে জমি গুলো এ পানি ব্যবহার করতে পারতো।  ফলে দু’তিন কিলোমিটার পরে রয়ে যাওয়া কয়েক’শ একর জমির কোনো কাজে লাগতোনা বাঁধটি।

ঝর্ণাটিলা এলাকার কৃষক নুরুল আমিন বলেন, বাঁধ নির্মাণ থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত আমরা কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত। আমার জমির উপর বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে কিন্তু কোন ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়নি। বাঁধে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর নিচে গিয়ে আবারও চাষাবাদ শুরু করি। ভাঙ্গনের পর বাঁধের সব মাটি ও পাথর এসে জমির ফসল নষ্ট করে দিয়েছে।

চৌমুনী এলাকার কৃষক মো. হারুন মিয়া বলেন, দীর্ঘদিনের দাবিতে বাঁধ নির্মাণ হলেও সেটি কোনো কাজে আসেনি।

তবলছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল কাদের জানান, যে বছর বাঁধ নির্মাণ হয়েছে সে বছরই ভেঙে গেছে। এতে করে সরকারি অর্থের অপচয়ের পাশাপাশি বাঁধের পানিতে কৃষকদের কয়েক লাখ টাকার জমির ফসল ও মৎস খামারের মাছ ভেসে গেছে। শুষ্ক মৌসুমে কৃষি জমিগুলো অনাবদী রয়ে যাচ্ছে। সঠিক পরিকল্পনা করে দ্রুত সময়ের মধ্যে বাঁধটি সংস্কার করা প্রয়োজন।

এবিষয়ে কথা বলতে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স যতনেশ্বর ত্রিপুরার সত্ত্বাধিকারী যতনেশ্বর ত্রিপুরার মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও সংযোগ পাওয়া যায়নি।

পাচউবো খাগড়াছড়ি শাখার ভারপ্রাপ্ত প্রকৌশলী আবু তাহের বলেন, সাংবাদিকরা সংবাদ করলে কি এর সমাধান হবে। বাঁধ ভেঙে গেছে, বাঁধ আবার হবে।

সরকারের কাছে স্থানীয়দের দাবি দ্রুত বাঁধটি সংস্কার এবং তিন কিলোমিটার পর একটি স্লুইস গেইট নির্মাণ করা হউক।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন