নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ শেষ: অবৈধভাবে ধরা ইলিশের ট্রলারগুলো ফেরার অপেক্ষায়

ইলিশ ধরা

কক্সবাজার প্রতিনিধি:
বুধবার থেকে শিথিল হয়েছে সামুদ্রিক মাছ আহরণের উপর নিষেধাজ্ঞা। আশ্বিনী পূর্ণিমার দিন এবং এর আগে ও পরের পাঁচদিন করে মোট ১১ দিন সময় ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুম। এই সময়ে মা ইলিশ ডিম ছাড়ে। মা ইলিশ ও জাটকা রক্ষা এবং উৎপাদন বৃদ্ধির কার্যক্রমের অংশ হিসাবে, সংশ্লিষ্ট প্রশাসন প্রতিবছর আশ্বিনের ভরা পূর্ণিমার সময়ে ইলিশ আহরণ বন্ধ রাখতে সর্বোচ্চ সতর্কতায় থাকে। তারই অংশ হিসাবে গত ৫ অক্টোবর থেকে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত ইলিশসহ সব ধরনের সামুদ্রিক মাছ আহরণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে সরকার।

সরকারী এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে নিষেধাজ্ঞার সময়ে প্রশাসনের মাঝে সব ধরনের তৎপরতা লক্ষ্য করা গেছে। যদিও অভিযোগ রয়েছে কৌশলে বিপুল সংখ্যক ফিশিং বোট ইলিশ প্রজননের প্রধান এই মৌসুমে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে জেলা থেকে মাছ আহরণের উদ্দেশ্যে সাগরে গেছে। এদিকে প্রজনন মৌসুমে মা-ইলিশ রক্ষা কার্যক্রম চলাকালীন সময়ে নিষেধাজ্ঞাকে তোয়াক্কা না করে সাগরে মাছ আহরণ করার অভিযোগে গত ১৩ অক্টোবর সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কড়া নজরদারীতে জেলা উজেলায় বিপুল পরিমাণ কারেন্ট জাল জব্দ করে পরে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে।

তন্মধ্যে সোমবার সকাল ১০ টায় কলাতলী বেলী হ্যাচারী সংলগ্ন এলাকা থেকে প্রথম দফায় ১৫ টি কারেন্ট জাল জব্দ করা হয়। এ অভিযানে নেতৃত্বদেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট আহমদ আলী ও সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা (সদর) ড. মঈন উদ্দিন । সদর মডেল থানার পুলিশের ফোর্স অভিযানে সহায়তা করেন।

এছাড়া একই সময়ে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ ফেরদৌস আহমদের নেতৃত্বে অপর একটি দল উখিয়া রেজু খালের মোহনায় রেজুব্রীজ সংলগ্ন খালে অভিযান পরিচালনা করে। ওই অভিযানে ২৪ টি কারেন্ট জাল জব্দ করা হয়। এছাড়া উখিয়া সোনারপাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৩৪ টি কারেন্ট জাল জব্দ করা হয়। দুইদফা অভিযানে উদ্ধাকৃত কারেন্ট জালগুলো কক্সবাজার মৎস্য ভবন প্রাঙ্গনে পুড়িয়ে ধ্বংস করে ।

কক্সবাজার জেলা শহর ও উপজেলায় আটকের পরে ধ্বংসকৃত কারেন্ট গুলোর আনুমানিক মূল ২ কোটি ১৬ লাখ ২০ হাজার টাকা ছাড়িয়ে যাবে মনে করেন সংশ্লিষ্ট মৎস্য কর্মকর্তারা। সূত্র মতে, প্রতিবছর ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুমে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সর্তকর্তা নেয়া হয়। যাতে কোনভাবে বোট কিংবা ট্রলার ইলিশ আহরণ করতে না পারে। কিন্তু অনেক সময় দেখা যায় ফিশিং বোট এবং ট্রলারসমূহ গভীর সাগরে ইলিশ নিধনের উদ্দেশ্যে নিষেধাজ্ঞা জারির কয়েকদিন আগে গভীর সাগরের সোনার চর, ছভিউ, নভিউ, বারো ভিউ, চৌদ্দভিউ, ষোল ভিউ, আঠার ভিউ, গুলিদ্ধারসহ বিভিন্ন স্পটে গিয়ে মাছ আহরণ করে। পরবর্তীতে নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হলেই তারা ট্রলার ভর্তি মাছ নিয়ে উপকূলে ফিরে আসে। এসময় তাদের মাছের পরিমাণও অনেক বেশি হবে। আর এজন্য বোট বা ট্রলার সমূহ বিপুল পরিমাণে খাদ্যদ্রব্যসহ ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়ে সাগরে পাড়ি দেয়।

গতকাল মুঠোফোনে কক্সবাজার জেলা ফিশিং বোট মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক আহমদ জানান, সরকারের আশ্বিনী পূর্ণিমার দিনে মোট ১১ দিন সময় ইলিশের প্রধান প্রজনন যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল তা অমান্য করে কিছু লোভী ও নিষেধাজ্ঞা অমান্যকারী মাছ আহরণে গভীর সাগরে পাড়ি দিযেছে। তারা আজ কালের মধ্যে ক’লে ফিরে আসতে পারে। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি ও আহরিত মাছগুলো বাযোজাপ্ত করার জন্য দাবী জানান প্রশাসনকে।

উল্লেখ্য যে, আশ্বিনী পূর্ণিমার দিন এবং এর আগে ও পরের পাঁচদিন করে মোট ১১ দিন সময় ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুম। এই সময়ে মা ইলিশ ডিম ছাড়ে। ফলে মা ইলিশ ও জাটকা রক্ষা এবং উৎপাদন বৃদ্ধির কার্যক্রমের অংশ হিসাবে প্রশাসন প্রতিবছর আশ্বিনের ভরা পূর্ণিমার এই সময়ে ইলিশ আহরণ বন্ধ রাখতে সর্বোচ্চ সতর্কতায় থাকে। এদিকে প্রতিবেদনের প্রসঙ্গে কক্সবাজার জেলা মৎস্য কর্মকর্তার ব্যবহৃত ফোন নাম্বারে ০১৭১৮৩১২৫৫৯ একাধিক বার কল দেওয়া হলেও কল রিসিভ না করায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন