পানছড়িতে জনপ্রিয়তা পেয়েছে সেক্স ফেরোমন ফাঁদ ও পার্চিং পদ্ধতি

FAD PICশাহজাহান কবির সাজু, পানছড়ি:

জেলার পানছড়ি উপজেলার বিভিন্ন সবজির মাঠ ও ধানের জমিতে পোকা দমনে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে সেক্স ফেরোমন ফাঁদ ও পার্চিং পদ্ধতি। এরি মাঝে পানছড়ি সবজি চাষিরা সবজির মাছি পোকা ও ফল ছিদ্রকারী পোকা দমনে সেক্স ফেরোমন ফাঁদ পদ্ধতি ব্যবহার করতে শুরু করেছে। পূর্বে ক্ষতিকর পোকা দমনে শুধুমাত্র রাসায়নিক ব্যবস্থাপনাকে প্রাধান্য দেয়া হতো। যার ফলে পরিবেশের ভারসাম্যর পাশাপাশি মানব দেহ, জমিনের উর্বরতা, বাড়তি উৎপাদন খরচসহ পুরো দিকটাই ছিল কৃষককূলের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। এরি মাঝে পানছড়ি কৃষি অধিদপ্তরের এক মহান উদ্যোগে এলাকার কৃষকরা নিরাপদভাবে সবজির পোকা দমনে শুরু করেছে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি পরিবেশ বান্ধব ও নিরাপদ পদ্ধতি “সেক্স ফেরোমন ফাঁদ”।

পানছড়ি কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, পুরুষ পোকা কর্তৃক একই প্রজাতির স্ত্রী পোকাকে প্রজনন কাজে আকৃষ্ট করতে একটি প্লাস্টিকের বৈয়ামে ফাঁদ তৈয়ার করা হয়। কৃত্রিম পদার্থের তৈরী ফাঁদে পুরুষ পোকার গন্ধে আকৃষ্ট হয়ে স্ত্রী পোকা বৈয়ামে প্রবেশ করলেই সাবান মিশ্রিত পানিতে পড়ে পোকাটি মারা যায়। পোকা ধরার সহজলভ্য ও সস্তা দ্রব্যাদি দিয়ে তৈরী কার্যকরী ফাঁদটিকে অনেকে যাদুর ফাঁদও বলে থাকে।

অপরদিকে উপজেলার বিভিন্ন ধানের মাঠে বিষাক্ত ঔষধের পরিবর্তে পোকা দমনে সহজ ও পরিবেশ বান্ধব পার্চিং পদ্ধতির ব্যবহার বেড়েই চলছে। বাঁশঝাড় থেকে কঞ্চি বা বিভিন্ন গাছের ডালপালা কেটে জমিনে পুতে দিয়ে পাখি বসার জায়গা করে দিলেই পাখিরা অনায়াসে ক্ষেতের ক্ষতিকর পোকামাকড় খেয়ে সাবাড় করে দেয়। এই পার্চিং পদ্ধতি ব্যবহারে কৃষকের অতিরিক্ত কোন টাকাই ব্যয় করতে হয়না।

পানছড়ি শান্তিপুর এলাকার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা নির্বান চাকমা জানান, অত্র এলাকায় ১৮০ হেক্টর জমিতে বোরো ও ৬০ হেক্টর জমিতে সবজির চাষ হয়েছে। কৃষকরা এখন পার্চিং পদ্ধতিতেই ধানের পোকা দমন করে বলে তিনি জানান। তাছাড়া সবজির বেলায়ও সেক্স ফেরোমন ফাঁদে সফলতা পেয়েছে কৃষককূল। উত্তর শান্তিপুর এলাকার কৃষক সুবাহু চাকমা গত দু’বছর সেক্স ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার করে শতভাগ সফলতা পেয়েছেন বলেও জানা যায়।

মির্জিবিল এলাকার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা নজির আহাম্মদ, বড় পানছড়ি এলাকার শুভাশীষ চাকমা, রাঙ্গাপানিছড়া সন্তোষ চাকমা ও দমদম এলাকার মো: মানিক মিয়ার সাথে আলাপকালে জানা যায়, এবারের বোরো চাষে প্রায় সব জমিতেই পার্চিং পদ্ধতি ব্যবহার করেছে কৃষক। তাছাড়া বিভিন্ন জাতের সবজি চাষেও ব্যবহার করছে সেক্স ফেরোমন ফাঁদ। তারা জানান, বেগুন, কুমড়া জাতীয় ফসল, কপি জাতীয় ফসল. আম, লিচু ও পেয়ারা জাতীয় ফসলের জন্য আলাদা আলাদা সেক্স ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার করতে হয়।

বড় পানছড়ি এলাকার কৃষক কিরণ জ্যোতি চাকমা ও দমদম এলাকার কৃষক শফিকুর রহমানের সাথে আলাপকালে তারা এ প্রতিবেদককে জানান, পার্চিং পদ্ধতি ও সেক্স ফেরোমন ফাঁদ খুব ভালো পদ্ধতি যা নিজ শরীর ও পরিবেশের কোন ক্ষতি করেনা। তাছাড়া উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের সুন্দর নজরদারি ও নিরলস পরিশ্রমের ফলেই পানছড়ির মাঠ আজ সেজেছে সবুজ বোরো ও সবজিতে। তাদের আশা বাম্পার ফলনেই ভরবে গোলা আর সবুজ সবজিতে ভরবে হাট।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন