পানছড়িতে জমে উঠেছে ত্রিমুখী উৎসবে : পূজা-ঈদ ও কঠিন চীবরকে ঘিরে চলছে খুশীর মাতম

2272210496

শাহজাহান কবির সাজু, পানছড়ি, খাগড়াছড়ি:

হিন্দু সম্প্রদায়ের শারদীয় দুর্গোৎসব, মুসলমানদের পবিত্র ঈদুল আযহা ও বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের দানোৎত্তম কঠিন চীবরকে ঘিরে পানছড়ির সর্বত্র লেগেছে উৎসবের সাজ।  প্রতিটি পাড়ায় পাড়ায় বাজছে উৎসবের সূর। ধনী-গরিব সকলের ঘরে ঘরে চলছে উৎসবের প্রস্তুতি। চলতি বছর হিন্দু সম্প্রদায়ের শারদীয় দুর্গোৎসব, মুসলমানদের পবিত্র ঈদুল আযহা ও বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের দানোৎত্তম কঠিন চীবর দানোৎসব খুব কাছাকাছি সময়ে হওয়ায় সকল সম্প্রদায়ের  মাঝে বিরাজ করছে উৎসবমুখর পরিবেশ। মাসব্যাপী উৎসবের আনন্দে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান আর মুসলিম যেন জাতিগত সব বিভেদ ভুলে মিলেছে এক কাতারে। পাহাড়ের এই উৎসব ভুলিয়ে দিয়েছে জাতিগত বিভেদ। সবাই ভুলে যায় কে পাহাড়ী বা কে বাঙ্গালী? সবাই মেতে উঠে ধর্মীয় উৎসবের অনাবিল এক আনন্দ আয়োজনে। তৈরী হয় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত। সব মিলে ধর্মীয় উৎসবগুলো জাতিগত ভেদাভেদের শেকড়কে উপড়ে ফেলে। সকলের আন্তরিকপূর্ণ উপস্থিতিতে উৎসবগুলো হয়ে উঠে প্রাণবন্ত।

১০ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া শারদীয় দূর্গোৎসব চলবে ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত।  পানছড়ির ৮টি পূজামন্ডপে একযোগে চলছে হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান এ ধর্মীয় উৎসব। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবছর অধিকাংশ পূজামন্ডপেই তৈরি করা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন প্রতিমা। শিল্পীর মননশীল চিন্তায় আর নিপুণ হাতের প্রাণবন্ত কারুকাজে প্রতিমাগুলোকে সাজানো হয়েছে নান্দনিক সাজে। পাশাপাশি নয়নাভিরাম সাজে সাজানো হয়েছে পূজামন্ডপগুলোকে। আর কেনা-কাটায়ও পিছিয়ে নেই হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন। শান্তিপূর্ণ পরিবেশে দুর্গোৎসব সম্পন্ন করতে প্রতিটি মন্ডপে নেয়া হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা। টহল দিচ্ছে নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত মোবাইল টিম।

হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব দূর্গাপূজা শেষ হতে না হতেই আগামী ১৬ অক্টোবর পালিত হবে মুসলমানদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদ-উল আযহা। পবিত্র ঈদ-উল আযহা পালনেও যে যার সামর্থ্য অনুযায়ী প্রস্তুতি শেষ করে এনেছে মুসলমানরা। এ উৎসবকে ঘিরে ইতিমধ্যে পানছড়ির বাজারগুলোতে জমে উঠেছে কোরবানীর পশুর হাট। কোরবানীর পশুর হাটকে ঘিরেই চলছে প্রাথমিক উৎসব। বাপ-ছেলের গরু টানাটানির দৃশ্যগুলোও চোখে লেগে থাকার মত।

এদিকে মুসলমানদের ঈদের আনন্দ কাটতে না কাটতেই শুরু হবে বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের ঐতিহ্যবাহী উৎসব দানোৎত্তম কঠিন চীবর দানোৎসব। কঠিন চীবর দানোৎসবকে সামনে রেখে পাহাড়ী জনপদের বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ঘরে ঘরে চলছে উৎসব প্রস্তুতি। এ উৎসবে তাদের নতুন জামা-কাপড় কেনাকাটার রেওয়াজ না থাকলেও এই ধর্মীয় উৎসব আয়োজন ও পালনে তাদের মাঝে উৎসাহের কোনো কমতি নেই। আগামী ১৭ নভেম্বর পর্যন্ত পার্বত্য জনপদের বিভিন্ন বৌদ্ধ মন্দিরে পালন করা হবে ঐতিহ্যবাহী কঠিন চীবর দানোৎসব। এসময় পাহাড়ের আকাশে আকাশে ভেসে বেড়াবে ফানুস বাতির আলোকসজ্জা।

পানছড়িস্থ শান্তিপুর অরণ্য কুটিরকে প্রতি বছরের ন্যায় এবছরও সাজানো হবে বর্ণিল সাজে। প্রতিদিন শত শত দায়ক-দায়িকা অংশ নিচ্ছেন বৌদ্ধ মন্দিরগুলোর প্রস্তুতির কাজে। প্রতিটি বৌদ্ধ মন্দিরেই চলছে কঠিন চীবর দানোৎসব উদযাপনের প্রস্তুতি। দানোৎত্তম কঠিন চীবর দানোৎসবকে ঘিরে বৌদ্ধ ধর্মালম্বী সম্প্রদায়ের এ ধর্মীয় উৎসবগুলোতে থাকেনা কোন জাতিগত ভেদাভেদ। সকল সম্প্রদায়ের মানুষের উপস্থিতিতে এই ধর্মীয় উৎসবগুলো হয়ে উঠে প্রাণবন্ত।

এ ত্রিমুখী উৎসব উপলক্ষে পানছড়ির বিভিন্ন জায়গায় শোভা পেয়েছে নানা রংঙের ডিজিটাল ব্যানার। শারদীয় দূর্গা পূজার শুভেচ্ছা, ঈদুল ্আযহার শুভেচ্ছা ও কঠির চীবর দানের শুভেচ্ছা লিখা ডিজিটাল ব্যানারগুলো অনুষ্ঠানকে আরো প্রাণবন্ত করে তুলেছেন বলে মত ব্যক্ত করেন অভিজ্ঞ মহল। এই ত্রিমুখী আনন্দে যাতে ভাটা না পড়ে সেই লক্ষে কাজ করছে পুলিশ বাহিনীর সকল সদস্যরা। পানছড়ির সর্বশেষ সীমানা বাম্বু পাড়া হইতে লোগাং পর্যন্ত বিভিন্ন পূজা মন্ডপে দিনে দু’তিন বার চষে বেড়াচ্ছেন পানছড়ি থানা অফিসার ইনচার্জ মো: আব্দুস সামাদ মোড়ল।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন