পার্বত্য উন্নয়ন বোর্ড ও জেলা পরিষদের পূর্নগঠন চেষ্টার খবরে খাগড়াছড়িতে তোলপাড়

1458663_546423838785241_354009035_n

♦ গত ৪২ বছর ধরে মারমা সম্প্রদায়ের লোকজন শুধু আওয়ামীলীগকে দিয়ে যাচ্ছে পক্ষান্তরে কিছুই পায়নি। বিষয়টি মারমা সম্প্রদায়ের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার করেছে। ‘চাকমা’ সম্প্রদায় থেকে বীর কিশোর চাকমা (অটল)-কে চেয়ারম্যান করা হলে এখানে আগামী নির্বাচনেও আওয়ামীলীগের ভোটে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।- সাইথোঅং মারমা                                                        ♦ বীর কিশোরকে নিয়োগ দেয়া হলে ত্রিপুরা জনগোষ্ঠি শুধুমাত্র পিছিয়েই পড়বেনা এখানকার রাজনীতিতে একক আধিপত্য বিস্তারের পথ সুগম হবে চাকমা সম্প্রদায়ের। – মনৗন্দ্র কিশোর ত্রিপুরা       পার্বত্যনিউজের শতশত প্রিন্ট ও ফটোকপি মানুষের হাতে, সর্বত্র আলোচনায় পার্বত্যনিউজ 

 

মুজিবুর রহমান ভুইয়া :

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে বীর কিশোর চাকমা (অটল)-কে নিয়োগ দেয়া হলে খাগড়াছড়ির রাজনীতিতে ভারসাম্য হারাবে। ফলে খাগড়াছড়ির রাজনীতিতে ‘চাকমা’ সম্প্রদায়ের একক আধিপত্য বিস্তারের আশঙ্কা করছেন বিভিন্ন সম্প্রদায়ের সচেতন মহল। তাদের কেউ কেউ পার্বত্য রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ জেলা হিসেবে পরিচিত খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে বীর কিশোর চাকমা (অটল)-কে নিয়োগ না দিয়ে সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য কোন ব্যক্তিকে ‘চেয়ারম্যান’ নিয়োগ দেয়ার দাবী জানান সরকারের কাছে।

জানা গেছে, বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন পার্বত্য জেলা পরিষদে অন্তর্বতীকালীন ব্যবস্থা চালু হওয়ার পর থেকে ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষায় সকল সম্প্রদায়ের একজন করে প্রতিনিধি নিয়ে জেলা পরিষদগুলো পরিচালিত হয়ে আসছে। সেদিক থেকে সংখ্যাধিক্য বিবেচনায় তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের মধ্যে পার্বত্য বান্দরবানে বোমাং বা মারমা, পার্বত্য রাঙ্গামাটিতে চাকমা ও পার্বত্য খাগড়াছড়িতে ত্রিপুরা সম্প্রদায় থেকে চেয়ারম্যান নিয়োগ দিয়ে ক্ষমতায় ভারসাম্য রাখা হতো। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পরও তার ব্যত্যয় ঘটেনি।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহনের কারণে খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করলে সাইথোঅং মারমাকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেয়া হয়। গত ২ ডিসেম্বর সাইথোঅং মারমাকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেয়ার আট দিনের মাথায় তার স্থলে চাকমা সম্প্রদায় হতে বীর কিশোর চাকমা (অটল)-কে চেয়ারম্যান করার উদ্যোগে হতাশ মারমা ও ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দ। তাদের মতে ‘চাকমা’ সম্প্রদায়কে খুশি করতেই পার্বত্য মন্ত্রণালয় এ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।

এ বিষয়ে ‘মারমা’ সম্প্রদায়ের ক্ষোভের কথা জানিয়ে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদেও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সাইথোঅং মারমা পার্বত্যনিউজ-কে বলেন, গত ৪২ বছর ধরে মারমা সম্প্রদায়ের লোকজন শুধু আওয়ামীলীগকে দিয়ে যাচ্ছে পক্ষান্তরে কিছুই পায়নি। বিষয়টি মারমা সম্প্রদায়ের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার করেছে। তিনি নিজেকে আওয়ামীলীগের নিবেদিতপ্রাণ কর্মী দাবী করে বলেন, আওয়ামীলীগের প্রতি আমার যে আবদান ছিল তার মুল্যায়ন করেই আমাকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়। কিন্তু হঠাৎ করেই বীর কিশোর চাকমা (অটল)-কে চেয়ারম্যান নিয়োগ করার খবরে সর্বত্র ক্ষোভের তৈরী হয়েছে। ‘চাকমা’ সম্প্রদায় থেকে বীর কিশোর চাকমা (অটল)-কে চেয়ারম্যান করা হলে এখানে আগামী নির্বাচনেও আওয়ামীলীগের ভোটে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। এখানকার সম্প্রীতি নষ্ট হওয়ারও আশঙ্কা করছেন সাইথোঅং মারমা।

এদিকে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের সাবেক নির্বাচিত সদস্য মনিন্দ্র কিশোর ত্রিপুরা এ নিয়োগের খবরে নিজের ক্ষোভের কথা জানিয়ে বলেন, তাকে নিয়োগ দেয়া হলে ত্রিপুরা জনগোষ্ঠি শুধুমাত্র পিছিয়েই পড়বেনা এখানকার রাজনীতিতে একক আধিপত্য বিস্তারের পথ সুগম হবে চাকমা সম্প্রদায়ের। খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির যুগ্ম-সম্পাদক মংসাথোয়াই মারমা বলেন, এ নিয়োগের ফলে খাগড়াছড়িতে সংখ্যাধিক্য চাকমাদের আধিপত্য বিস্তারের পাশাপাশি পিছিয়ে পরা মারমা ও ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের নেতৃত্ব বিকশিত হওয়ার সম্ভাবনা সংকুচিত হবে।

এদিকে মন্ত্রনালয়ের সচিব‘র দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রদানের জন্য চরম বাঙ্গালী বিদ্বেষী হিসেবে পরিচিত সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নব বিক্রম কিশোর ত্রিপুরা এবং খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদে ত্রিপুরা কোটায় পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নব বিক্রম কিশোর ত্রিপুরার বড় ভাই খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি রণ বিক্রম কিশোর ত্রিপুরাকে সদস্য করার প্রস্তাবও দেয়া হয়। এ নিয়োগ নিয়ে স্থানীয় বাঙালীদের মধ্যেও ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক বাঙালী নেতা পার্বত্যনিউজকে বলেন, নববিক্রম কিশোর ত্রিপুরা পুলিশ ও প্রশাসনে চাকুরীকালীন সময়ে একজন বাঙালী বিদ্বেষী হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। গত কয়েক বছরে তিনি একেরপর এক বাঙালী বিদ্বেষী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ও অন্যদের নিতে বাধ্য করেছেন। কাজেই এহেন ব্যাক্তি যদি আবার উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান হন পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙালীদের অবস্থান বিপন্ন হয়ে পড়বে।

জানা গেছে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগের নয় দিনের মাথায় অনেকটা তড়িঘড়ি করে খাগড়াছড়িতে চরম বাঙ্গালী বিদ্বেষী বীর কিশোর চাকমা (অটল)-কে চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেয়ার প্রস্তাব সম্বলিত একটি ফাইল গত রোববার পার্বত্য বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে পাঠানোর খবর পার্বত্যনিউজ-এ প্রকাশিত হলে খাগড়াছড়ির বিভিন্ন মহলে বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। জেলায় পার্বত্য নিউজের শতশত কপি প্রিন্ট ও ফটোকপি বিক্রি হতে থাকে যা এখনো চলমান। নিউজটি প্রকাশের পর থেকে স্থানীয় সরকার, প্রশাসন ও গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধি এবং অসংখ্য সাধারণ পাঠক পার্বত্যনিউজে ফোন করে নিউজের সত্যতা ও উৎস সম্পর্কে জানতে চান।

পার্বত্য জেলা পরিষদ আইনের ১৪ ধারা অনুযায়ী চেয়ারম্যান পদ শুন্য থাকলে পরিষদের উপজাতীয় সদস্যগণের মধ্য হতে একজন অস্থায়ী চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব পালন করার কথা থাকলেও কে বা কি কারনে তড়িঘড়ি করে বীর কিশোর চাকমা (অটল)-কে চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেয়ার পাঁয়তারা শুরু করেছে মন্ত্রণালয় তা নিয়ে জনমনে সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে।

সর্বশেষ খবরে জানা গেছে, নিয়োগটি এখনো প্রধানমন্ত্রীয় বিবেচনার অপেক্ষায় রয়েছে তবে পার্বত্যনিউজে খবরটি প্রকাশিত হবার পর স্থানীয় বিভিন্ন মহল এই নিয়োগ বন্ধে কেন্দ্রে ব্যাপক তৎপরতা চালাচ্ছে বলে জানা গেছে।

 

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন