পার্বত্য চট্টগ্রামে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে সরকার দায়ী- সন্তু লারমা

10397157_694008924017528_5244659069713066526_o

পার্বত্যনিউজ রিপোর্ট:

পার্বত্য শান্তি চুক্তি বিরোধী ও পার্বত্যবাসীর আশা-আকাঙ্ক্ষার বিপরীতে অগণতান্ত্রিক ও জনবিরোধী উদ্যোগ বাস্তবায়ন করার ফলে যদি কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, তবে তার জন্য সরকারই দায়ী থাকবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি।

 সোমবার রাজধানীর সুন্দরবন হোটেলে এক সংবাদ সম্মেলনে এই হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন সংগঠনের সভাপতি শ্রী জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লারমা)। তিনি বলেছেন, সত্তরের দশকে পার্বত্যবাসীর যেমন দেয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছিল, তেমনি পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে এখন।

 তিনি লিখিত বক্তব্যে বলেন, তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ আইন সংশোধন, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড আইন প্রণয়ন এবং পার্বত্য অঞ্চলের বিজ্ঞান-প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ স্থাপনের সিদ্ধান্তের আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

 সন্তু লারমা বলেন, সরকারের সঙ্গে পার্বত্য শান্তি চুক্তি সইয়ের ১৭ বছর পার হলেও চুক্তির মৌলিক বিষয়গুলো এখনও বাস্তবায়ন করা হয়নি। আওয়ামী লীগ সরকার চুক্তির পরে ৯ বছরের বেশি সময় ক্ষমতায় থাকলেও চুক্তির মৌলিক বিষয়সমূহ বাস্তবায়নে চরম ব্যর্থতার প্রমাণ দিয়েছে। মৌলিক বিষয়সমূহ বাস্তবায়ন না হওয়ায় পার্বত্য এলাকায় বর্তমানে চুক্তি পূর্ব অবস্থা বিরাজ করছে। তাই এ মুহূর্তে যদি কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থির সৃষ্টি হয়, তবে তার জন্য সরকারই দায়ী থাকবে।

জেএসএস সভাপতি বলেন, মানুষের মৌলিক অধিকার যখন থাকে না, তখন তা প্রতিষ্ঠার জন্য মানুষ সবকিছুই করতে পারে। এমনকি নিজের জীবনও বলি দিতে পারে। তিনি বলেন, ‘আমি বারবার সরকারের কাছে পার্বত্য এলাকার পরিস্থিতি তুলে ধরার চেষ্টা করছি, কিন্তু সরকার আমাদের মূল দাবিগুলো উপেক্ষা করে এবং ঝুলিয়ে রেখে একতরফাভাবে তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ আইন সংশোধন, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড আইন প্রণয়ন এবং রাঙামাটিতে মেডিকেল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে।’

 সন্তু লারমা বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামে মানুষের জীবন-যাপন সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। শাসকশ্রেণী পার্বত্য চট্টগ্রামে কী করতে চায়, সেটা সম্পর্কে আমরা অবগত। এর বিপরীতে গণতান্ত্রিক ধারায় আন্দোলন-সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছি। শাসকশ্রেণীর আকাঙ্ক্ষার বিপরীতে আমাদের অবস্থান। কেবল ঘোষণার মধ্যে নয়, নিরন্তর গণতান্ত্রিক লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের দাবি বাস্তবায়নের চেষ্টা করব। পার্বত্য মানুষের অধিকার আদায়ে যা যা প্রয়োজন, জনসংহতি সমিতি তা করে যাবে।’

তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ আইন সংশোধন, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড আইন প্রণয়ন এবং পার্বত্য অঞ্চলের বিজ্ঞান-প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ স্থাপনের উদ্যোগ সরকারের চরম অগণতান্ত্রিক, জনবিরোধী ও পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি পরিপন্থি মানসিকতারই প্রতিফলন।

 লিখিত বক্তব্যে শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য সরকারের কাছে কিছু সুপারিশ বা দাবি পেশ করা হয়। দাবিগুলো হলো- চুক্তির অবাস্তবায়িত বিষয়সমূহ দ্রুত বাস্তাবায়ন, আঞ্চলিক পরিষদের নির্বাচনের জন্য ভোটার তালিকা করা, অহস্তান্তরিত সব বিষয় নির্বাহী অদেশের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট পরিষদের কাছে হস্তান্তর করা, পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন ২০০১ সংশোধন করা, সব অস্থায়ী সেনা, আনসার, এপিবি ও ভিডিপি ক্যাম্প প্রত্যাহার করা, জুম্মু শরণার্থীদের জায়গা-জমি প্রত্যর্পণ করা, পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রযোজ্য সব আইন ও বিধিমালা সংশোধন করা, তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ (সংশোধন) আইন ২০১৪ প্রত্যাহার করা ইত্যাদি।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, সমিতির তথ্য ও প্রচার সম্পাদক মঙ্গলকুমার চাকমা, সাংগঠনিক সম্পাদক শক্তিপদ ত্রিপুরা, ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পংকজ ভট্টাচার্য, বিশিষ্ট কলামিস্ট ও গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেন, সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং  প্রমুখ। 

ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পংকজ ভট্টাচার্য বলেন, পাঞ্জাবিদের শোষণ থেকে মুক্ত হতেই আমরা স্বাধীনতা যুদ্ধ করেছিলাম। কিন্তু স্বাধীনতার পর বাঙালিরাই পাঞ্জবিদের ভূমিকায় অবর্তীর্ণ হয়েছে। তারা এখন এ দেশের আদিবাসীদের ওপর বিভিন্ন নির্যাতন করছে। ফলে আমরা দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য যে আন্দোলন গড়ে তুলেছিলাম তা ব্যহত হয়েছে।

 পার্বত্য অঞ্চলের বিজ্ঞান-প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ স্থাপনের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ওই এলাকার মানুষের বিশ্ববিদ্যালয় বা মেডিকেলে পড়ার অবস্থা নেই। ফলে সেখানে ধীরে ধীরে শিক্ষিত শরনার্থীদের বাসস্থান গড়ে ওঠবে। আর তাতে আমাদের দেশের আদিবাসীদের অস্তিত্ব বিলিন হওয়ার সম্ভবনা থাকবে।

 

 

 

 

 

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন