পেকুয়ায় আনন্দ স্কুলের শিক্ষক নিয়োগে ব্যাপক ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিনিধি, পেকুয়া:
পেকুয়ায় আনন্দ স্কুলের শিক্ষক নিয়োগ ও কেন্দ্র নির্ধারণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগে জানা যায় উপজেলার ৭ ইউনিয়নের মধ্যে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে ৫২টি ও মাদ্রাসা রয়েছে ১০টি এবং আনন্দ স্কুল ৫০টি রয়েছে, চলতি বছরে আরো নতুন ৮০টি স্কুল চালু করছে। কিন্তু সরকার শিক্ষার হার বাড়ানোর জন্য সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ঝরেপড়া ছাত্রছাত্রীদের কে বিদ্যালয় মূখি করার জন্য বিদ্যালয়বিহীন এলাকায় আনন্দ স্কুল কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করার নামে একটি প্রকল্প গ্রহণ করে বর্তমান সরকার। প্রথম ধাপে উপজেলার সাত ইউনিয়নে ৫০ টি আনন্দ স্কুল কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করে। ওই সব স্কুলের শিক্ষক নিয়োগ থেকে শুরু করে শিক্ষা কার্যক্রম চালু করে চলতি বছরের জানুয়ারী মাসে। এসব ইউনিয়নে বিদ্যালয়বিহীন আরো অনেক এলাকা থাকায় বর্তমান সরকার ২য় ধাপে পেকুয়ার বিভিন্ন এলাকায় আরো ৮০ টি আনন্দ স্কুল কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করার জন্য প্রস্তুতি নেয়।

অভিযোগ উঠেছে সরকারী নিয়ম অনুয়ায়ী যেস্থানে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে ওই স্থান থেকে অন্তত দেড় কিলোমিটার দূরে এই বিদ্যালয় স্থাপন করতে হবে এবং ওই সরকারী বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের মাধ্যমে কেন্দ্র নির্ধারণ সহ যাবতীয় কার্যাক্রম করার কথা থাকলেও পেকুয়ার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তা মানছে না। তিনি নিয়মবহিভুতভাবে তার পরিচিত লোকজন দিয়ে উৎকোচের মাধ্যমে মনগড়া স্থানে কেন্দ্র দিচ্ছে। আনন্দস্কুলের প্রজ্ঞাপনে দেখা যায়, সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আধা কিলো মিটারের মধ্যে এবং পাশে নতুন ভাবে আনন্দ স্কুলের কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করছে।

এদিকে আনন্দ স্কুলের এই কর্মকর্তার যোগসাজসে রাজাখালী ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যানের ভাই জহির নামের এক ব্যক্তির মাধ্যমে আনন্দ স্কুল কেন্দ্র স্থাপনের জন্য স্থান নিধারণ এবং বিভিন্ন জনকে চাকুরী দেওয়ার কথা বলে পাঁচ হাজার টাকা করে আদায় করে। এদিকে রাজাখালী ইউনিয়নে হেফাজ উদ্দিন দশ হাজার টাকা করে নিয়ে নিয়োগ কমিটির সভাপতি ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তপন কান্তির কাছে জমা দেয়। বারবাকিয়া ইউনিয়ন থেকে জিয়াবুলকে ওই ইউনিয়নের বিউটি নামের এক প্রার্থী ১০ হাজার টাকা দিয়েছে। জিয়াবুল একজন আনন্দ স্কুলের শিক্ষক। ছরওয়ার আলম সি এম সি (সংযোগ)  নিয়োগ দেওয়ার কথা বলে বেশ কয়েকজন থেকে দশ হাজার টাকা করে জমা নিয়েছে।

এদিকে গত ১৯ মে সকাল ১১ টায় পেকুয়া জি এম সি ইনষ্টিটিউশন কেন্দ্রে লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষা চলাকালে কেন্দ্রে উপস্থিত ছিলেন নিয়োগ কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা মীর শওকত হোসেন। ৪০ নাম্বারের এ পরীক্ষায় ১৭০ জন পরীক্ষার্থী অংশ নেয়। পরে বিকাল ৩ টায় উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তার কাযালয়ে মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষা গ্রহণ করেন জি এম সি ইনষ্টিটিউশনের প্রধান শিক্ষক এনামুল হক চৌধুরী, প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তপন কান্তি চৌধূরী, মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মাহাফুজুর রহমান, এ টি ও মাসুদ আলম। মৌখিক পরীক্ষা চলাকালে ইউএনও সামনে জাতীয় পার্টির পেকুয়া উপজেলা আহবায়ক এস এম মাহাবুব, এবং সদস্য সচিব দিদারুল ইসলাম বসা ছিল। তারা শিক্ষা কমিটির কোন সদস্য না তারপরও মৌখিক পরীক্ষার হলরুমে বসা ছিল কেন এ নিয়ে পশ্ন উঠেছে।

এদিকে বেশ কয়েকজন প্রার্থী অভিযোগ করছেন ২৯ এপ্রিল কোন পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি না দিয়ে দেয়ালে শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। যার কারণে এ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ না হওয়ায় প্রার্থীর সংখ্যা কম হয়েছে। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তার কার্যালয় উল্লেখ করা হলেও নিচে স্বাক্ষর করে সদস্য সচিব মাছুম বিল্লাহ। এদিকে প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তপন কান্তির যোগসাজসে ৭ ইউনিয়নে আবেদন কারী শিক্ষকদের নিয়োগ প্রদানের পূর্বে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে আবেদনকারী কিছু নির্ধারিত শিক্ষকদের মাধ্যমে অতি গোপনে মাঠ পর্যায়ে কেন্দ্র ভিত্তিক ছাত্রছাত্রী ভর্তি ফরম রেজিষ্টারের আনন্দ স্কুলের শিক্ষক হিসাবে স্বাক্ষর করে ভর্তি ফরম পূরণ করেন ৬ মে ছাত্রছাত্রীদের অভিভাবক ছবিও উত্তোলন করেন যা সম্পন্ন বিধি বহিভূর্ত। যার ফলে আবেদনকারী শিক্ষক শিক্ষিকাদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। তাছাড়া কোন নিয়ম নীতি তোয়াক্কা না করে ক্যাচম্যান এলাকার প্রাথমিক বিদ্যালয় ছাত্রছাত্রী ও কম বয়সী নামে ভর্তি ফরম পূরণ করে চরম প্রতারণা করেছে। অভিযোগ উঠেছে ৮০ বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে নিয়োগের পূর্বে প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তপন কান্তির পছন্দের বর্তমান রাজাখালীর চেয়ারম্যান বাবুলের ভাই জহির, হেফাজ উদ্দিন বারবাকিয়া ইউনিয়ন জিয়াবুল আনন্দ স্কুলের শিক্ষক বানিয়ে তাদের স্বাক্ষরে ছাত্রছাত্রীদের ভর্তি ফরম পূরণ রেজিষ্টার পূরণ এবং ছবি তুলে ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে ১২০ টাকা উত্তোলন করে। যা সম্পন্ন নিয়োগ বিধির পরিপন্থী।

এসব অভিযোগ নিয়ে একজন সচেতন ব্যক্তি হিসেবে রিদুয়ান নাজেরী উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তার বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এদিকে তিনি আরো অভিযোগ করেছেন গতকাল লোকদেখানো ভাবে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার আয়োজন করে। অভিযোগ কারীকে ইউএনও জানিয়েছিলেন নিয়োগ পরীক্ষা সচ্ছ হবে বলে আশা ব্যক্ত করেন। সুনিদিষ্ট কোন পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ না করার কারণে অনেক পরীক্ষার্থী আবেদন করার সুযোগ না পাওয়ায় টাকার মাধ্যমে পূর্বে যেসব শিক্ষক নির্বাচন করা হয়েছে তারাই পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে।

এ ব্যাপারে নিয়োগ কমিটির সভাপতি তপন কান্তি চৌধূরীর সাথে যোগাযোগ করার জন্য ওনার মোবাইল নং বার বার কল করলেও ফোন রিসিভ করেনি। এ ব্যাপারে সদস্য সচিব মাছুম বিল্লাহর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রথমে সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে কিছু জানি না বলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মীর শওকত হোসেন সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানিয়েছেন নিয়োগ পরীক্ষা স্বচ্ছ হয়েছে।  এ ব্যাপারে উপজেলা চেয়ারম্যান শাফায়েত আজিজ রাজু জানিয়েছেন, নিয়োগ পরীক্ষায় যারা যোগ্যতার ভিত্তিতে আসবে তাদের কে নিয়োগ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তারপরও যদি কেউ অনিয়ম করে থাকে তাহলে উপযুক্ত প্রমাণের ভিত্তিতে তাদের বিরুদ্ধে উধর্বতন কতৃপক্ষের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।  

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন