পেকুয়ায় ইউপি নির্বাচনে নৌকার ভরাডুবি

fec-image

কক্সবাজারের পেকুয়ায় পাঁচ ইউপি নির্বাচনে এবার নৌকার ভরাডুবি হয়েছে। বহু কাঙ্ক্ষিত এ ইউপি নির্বাচনে ছয়টি ইউপির মধ্যে একটি ইউপিতে নৌকার বিজয় অপর আরেকটিতে নৌকার বিদ্রোহী প্রার্থীর বিজয় ছাড়াও আরেকটিতে স্থগিত এবং বাকী ইউপিগুলোতে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জয়জয়কার। তবে এবার এ সব ইউপিতে নৌকার ভরাডুবি হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করছেন প্রার্থীরা।

প্রার্থীদের অভিযোগ প্রশাসনের কারচুপির মাধ্যমে জালিয়াতি করে ফলাফল ঘোষণা করে। প্রশাসন স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সাথে আতাত করে কালো টাকার বিনিময়ে নৌকার বিজয়ের ফলাফল পাল্টিয়ে উল্টোভাবে স্বতন্ত্র প্রার্থীদেরকে বিজয়ী ঘোষণা করে। নীল নকশার নির্বাচন এবং প্রশাসনের সাজানো ফলাফল প্রত্যাখান করে উক্ত নির্বাচন বয়কট করার ঘোষণা দেন প্রার্থীরা। তারা পুনঃ গণনা করার দাবি করেন।

তবে রাজাখালী ইউপিতে নৌকার বিপুলে ভোটের ব্যবধানে বিজয় হয়েছেন নজরুল ইসলাম চৌধুরী বাবুল। তিনি নৌকা প্রতীক নিয়ে ৪২১১ ভোট পেয়েছেন। এই ইউপিতে বিপুল ভোটে নৌকার বিজয় হয়েছেন। এদিকে শীলখালী ইউপিতে নৌকার প্রার্থী কাজীউল ইনসান বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়। তিনি নৌকা প্রতীকে ১৮৪৬ ভোট পেয়েছেন। তারই প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী কামাল হোছাইন ২০৫৬ ভোট পেয়ে নৌকার প্রতীকের প্রার্থীকে পরাজিত করে তিনি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। কাজীউল ইনসান এ ইউপিতে একে একে তিনবার চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করে পরাজিত হন। একে একে দুই বার তিনি সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল হোছাইনের কাছে থেকে বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন শেষ পর্যন্ত স্বতন্ত্র প্রার্থী কামাল হোছাইনের কাছে পুনরায় পরাজিত হন। মগনামা ইউপিতে নৌকার প্রতীক নিয়ে নাজেম উদ্দিন ১৪৫ ভোট পেয়ে বিশাল ব্যবধানে স্বতন্ত্র প্রার্থী ইউনুস চৌধুরী (ঢুল) প্রতীকে ৫২৭০ ভোটে বিজয় লাভ করেন। নৌকার প্রার্থী পরিমান মত ভোট ও পেলেন না হারালেনও জামানত। উজানটিয়া ইউপিতে নৌকার প্রার্থী সাবেক চেয়ারম্যান এটিএম শহিদুল ইসলাম চৌধুরী সামান্য ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন। তিনি পেয়েছেন ২৪১১ ভোট। তার প্রতিন্দ্বন্দি নৌকার বিদ্রোহী প্রার্থী তোফাজ্জল করিম (স্বতন্ত্র) চশমা প্রতীকে ৩৬১২ ভোট পেয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। নৌকার প্রার্থীর অভিযোগ রিটানিং কর্মকর্তা উজানটিয়ার নৌকার বিদ্রোহী প্রার্থী তোফাজ্জল করিমের সাথে আতাত করে ভুয়া ব্যালেট পেপার দিয়ে জাল জালিয়াতির মাধ্যমে তাকে পরাজিত করেছেন। তারই উদাহরণ মধ্যম উজানটিয়া ভেলুয়ার পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সকালে ওই স্কুলে প্রধান শিক্ষক স্কুল পরিস্কার করতে গেলে স্কুলে যায় এস এম সির একজন সদস্য তিনি দেখেন স্কুলের আলমারিতে ব্যালেট পেপার। তিনি ওই ব্যালেট পেপার উদ্ধার করেন। বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হলে বেশ কয়েকজন পরাজিত মেম্বার প্রার্থীরা এসে ব্যালেট পেপার উদ্ধার করে। বিষয়টি সম্পর্কে স্থানীয় প্রশাসন ও গণমাধ্যম কর্মীরাও অবগত হয়।

এদিকে পেকুয়া সদর ইউপিতে নৌকা প্রতীক নিয়ে সাংবাদিক জহিরুল ইসলাম ৫৯৫৩ ভোট পেয়ে পরাজিত হন। তারই প্রতিন্দ্বন্দ্বি প্রার্থী (স্বতন্ত্র) উপজেলা বিএনপির আ্বায়ক এম বাহাদুর শাহ (চশমা) প্রতীকে ৮৩৩৭ ভোট পেয়ে বিজয় হন। নৌকা প্রতীকের প্রার্থীকে বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে পুনরায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। তবে পেকুয়ায় এবার ইভিএম পদ্ধতিতে প্রথম ভোট গ্রহণি করে। ইভিএম পদ্ধতিতে প্রথম পেকুয়ায় ভোট গ্রহণ হওয়ায় তা নিয়ে শঙ্কা থাকলেও শেষ পর্যন্ত নির্বাচন সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে।

তবে নৌকার প্রার্থী সাংবাদিক জহিরুল ইসলাম অভিযোগ করেন ইভিএম পদ্ধতিতে প্রশাসনের সাথে কারসাজি করে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে নৌকার ভোট কেটে নিয়ে ওই স্বতন্ত্র প্রার্থী চশমা প্রতীককে বিজয় করেছে। ইভিএম এ ভোট গননা করার সময় এজেন্টদেরকে কেন্দ্র থেকে আধা ঘণ্টা বের করে রাখে পরে আবার ঢুকায়। এমনকি বিভিন্ন কেন্দ্রে ইভিএম এ সমস্যা দেওয়ায় যথাযথ ভোট গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি।

তিনি আরো বলেন ইভিএম পদ্ধতির অজুহাত দেখিয়ে এলাকার লোকজন ইভিএম এ ভোট দিতে জানে না বলে ভোট কেন্দ্রে দায়িত্ব প্রাপ্ত সহকারী প্রিজাইডিং অফিসাররা চশমা প্রতীকে ভোট দেওয়ার জন্য উৎসাহ দেয় ভোটারদেরকে। এমনকি অনেক সময় তারা নিজেরাই বাটন চাপ দিয়ে ভোট দিয়ে দেয়। এদিকে সাংবাদিক জহিরুল ইসলাম কে নৌকা প্রতীক নিয়ে ভোট করলে উপজেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দলের শীর্ষ নেতাদের ভুমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠে। তাকে তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা সহযোগিতা করেছেন কিন্তু শীর্ষ নেতারা তার পাশে থাকলেও ভোট যুদ্ধে সহযোগিতা করেন নাই।

সাংবাদিক জহিরুল ইসলাম এর আগেও একে একে দুই বার পরাজিত হয়। এবার সর্বশেষ তিনি নৌকা প্রতীক নিয়ে চশমা প্রতীকের প্রার্থীর কাছ থেকে পরাজিত হন বিপুল ভোটের ব্যবধানে। তবে সাধারণ ভোটারদের অভিযোগ নৌকার প্রার্থীর কিছু ভুলের কারণেই পরাজিত হয়েছেন। তিনি নির্বাচন পরিচালনা করতে অভিজ্ঞ ব্যক্তি নিয়ে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন করেন নাই এবং ভিতরে ভিতরে দলীয় কোন্দল থাকায় পরাজিত হয়েছেন।

বারবাকিয়া ইউপিতে স্থগিত একটি ভোট কেন্দ্রের ফলাফল ছাড়ায় বিপুল ভোটের ব্যবধানে এগিয়ে আছেন জি এম আবুল কাসেম নৌকা প্রতীকে ৪৪২২ ভোট পেয়েছেন । তার প্রতিন্দ্বন্দ্বি প্রার্থী মাওলানা এ এইচ এম বদিউল আলম জিহাদি চশমা প্রতীকে ৪১০৮ ভােট পেয়েছেন। তবে একটি স্থগিত হওয়া ভোট কেন্দ্রে পুনরায় ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হলেই কে জয় হচ্ছেন তা বলা যেতেও।

এদিকে নৌকার ভরাডুবির নৈপুণ্যেতা খুঁজে বের করা জরুরি। তবে সাধারণ নেতাকর্মীদের অভিযোগ নৌকার ভরাডুবির পিছনে দায়ী স্থানীয় এমপি। তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের কে এমপি না হওয়ার আগে ঐক্য বদ্ধ করলেও এখন এমপি হওয়ার পর আস্তে আস্তে দলীয় নেতাকর্মীদেরকে দ্বিধা বিভক্ত করে পেলেন।

এ প্রসঙ্গে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাসেম বলেন পেকুয়ায় সদ্য অনুষ্ঠিত হওয়া ৬ ইউপি নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে রাজাখালী ইউপিতে নৌকার বিজয় হয়েছে। এছাড়াও বারবাকিয়া ইউপি নির্বাচন স্থগিত রয়েছে। আর বাকী ৪ টি ইউপিতে নৌকার প্রার্থীর পরাজয়ের কারণ খোঁজে পেলাম। পেকুয়া সদরে নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক পেকুয়া সদর থেকে ৩ বার নির্বাচিত চেয়ারম্যান এডভোকেট কামাল হোসেন তার পুত্র কে প্রার্থী করে তিনি সুকৌশলে পুত্রের পক্ষে ভোট চেয়েছেন যার কারণে নৌকার পরাজয় হয়। উজানটিয়া ইউপি নির্বাচনে নৌকার পরাজয় হওয়ার কারণ হচ্ছে নৌকার প্রার্থীর বিরোধিতা করে স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি তোফাজ্জল করিম প্রার্থী হয়। যার ফলে তাকে দল থেকে বহিষ্কার ও করা হয়। কিন্তু ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের অসহনীয় সহযোগিতার কারণে এ পরাজয়।

শীলখালী ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থীর জন্য ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের কাজ করার কথা থাকলেও সভাপতি ও সম্পাদক মেম্বারকে বিজয় করতে মরিয়া হওয়ায় চেয়ারম্যান পদে পরাজয় হয়। মগনামা ইউপিতে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী সিলেকশনে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ভুল সিদ্ধান্ত হওয়ায় এ পরাজয়।

তিনি আরো বলেন, যেহেতু নির্বাচনে এবার হারালেও আগামীতে এই আসন গুলো ফিরে পেতে প্রত্যেক ওয়ার্ড থেকে শুরু করে ইউনিয়ন কমিটিকে ঢেলে সাজানো হবে। আগামীতে ইনশাআল্লাহ সবার সহযোগিতায় হারিয়ে যাওয়া আসন গুলো পুনরুদ্ধার করা হবে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন