পেকুয়ায় এস.আলম গ্রুপের জমি দখলে নিতে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, আহত ৬

pic-pekua-16-11-16
নিজস্ব প্রতিনিধি:
পেকুয়ার দক্ষিন মগনামা এলাকায় এস.আলম গ্রুপের মালিকানাধীন তিনশত একর জমি দখল নিতে দু’পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।

বুধবার সকালে মগনামা ইউনিয়নের কাজী মার্কেট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার খবর পেয়ে পেকুয়া থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। এতে উভয় পক্ষের ৬/১০ জন আহত হয়েছে। আহতরা হলেন একই এলাকার মোস্তাফিজুর রহমানের পুত্র জসিম উদ্দীন ও মোঃ আজিম, রশিদ আহমদের পুত্র ওবাইদ, মাহমুদুল হকের পুত্র সালাহ উদ্দীন, মো. মুন্সীর পুত্র আসাদ নূর, নুরুল হুদার পুত্র মো. আব্বাস। এদের মধ্যে আব্বাসের অবস্থা আশংকাজনক বলে জানা গেছে।

স্থানীয়রা জানান, এস আলম গ্রুপ থেকে বর্গা নেওয়া ৮০ একর জমির মধ্যে ইউপি চেয়ারম্যান ওয়াসিমের দখলে থাকা ১৫-১৬ একর জমি দখলে নিতে তৎপর হয়েছে মগনামা ইউনিয়ন আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমইউপি রশিদ আহমদসহ একটি পক্ষ। তারা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে গত তিনদিন ধরে এস.আলম গ্রুপের জমিতে শক্তির বলয় তৈরি করে। চাষিদের ভীতি ও আতংক ছড়াতে তারা প্রতিনিয়ত স্বদলবল নিয়ে মহড়া দেয়। এনিয়ে বুধবার সকালে রশিদ আহমদ পক্ষ শুদ্ধাখালী পাড়া অংশের জমি দখল করার চেষ্টা করলে লবণ চাষীরা বাধা দেয়। এ ঘটনার জের ধরে বেলা ১২টার দিকে ইউনিয়নের কাজী মার্কেট এলাকায় রশিদ আহমদের নেতৃত্বে একটি পক্ষ ও চাষীদের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। উভয়পক্ষ কাজী মার্কেটের দুই প্রান্তে অবস্থান নিয়ে ইট পাটকেল ছুড়তে থাকে এবং কয়েক দফা একে অপরকে ধাওয়া করে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে চাষিরা জানান, স্থানীয় এনাম, দিদার, আতিক, শফি, মামুন ও আনছারের নেতৃত্বে একটি পক্ষ মাঠ প্রস্তুতিতে তাদের বাধা প্রদান করছে। কিন্তু এসব জমি চেয়ারম্যান ওয়াসিমের কাছ থেকে অনেক আগে বর্গা নিয়েছি।

মগনামা ইউপি সদস্য জাইদুল হক জানান, আমি তাদেরকে অহেতুক শান্তি ভঙ্গ না করতে অনুরোধ জানিয়েছি। কিন্তু রশিদ আহমদের পক্ষ চাষীদের উপর হামলা চালায়। আমি ও এলাকার জন সাধারণ চাষিদের পক্ষে অবস্থান নিয়ে তাদের প্রতিহত করি।

এবিষয়ে জানতে মগনামা ইউনিয়ন আ’লীগের সাধারন সম্পাদক রশিদ আহমদ বলেন, চেয়ারম্যান ওয়াসিম আমাকে ৩২ একর জমি লবণ চাষের জন্য বর্গা দেওয়ার কথা ছিল। তা না দেওয়া আমার লোকজনের সাথে ওয়াসিমের লোকজনের কথা কাটাকাটি হয়। এর জের ধরেই আমার লোকজনের উপর তারা হামলা চালায়।

মগনামা ইউপির চেয়ারম্যান শরাফত উল্লাহ চৌধুরী ওয়াসিম জানায় জমির বিরোধ নিষ্পত্তি করতে এস.আলম গ্রুপ আমাদের নিয়ে বৈঠক করে। সেখানে কে কতটুকু জমি চাষাবাদ করবে তা নির্ধারন করা হয়েছে। এখন একটি পক্ষ চাঁদার জন্য জমিতে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছে। আমরা প্রশাসনকে বলেছি। আইন শৃংখলা রক্ষায় পুলিশ নিয়মিত টহল দিচ্ছে।

পেকুয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মনজুর কাদের মজুমদার ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, খবর শুনে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে এঘটনায় কেউ এখনো অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এস.আলম গ্রুপ সূত্রে জানা গেছে, কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপনের জন্য ২০১২ সালে মগনামা ইউনিয়নে তারা তিনশ একর জমি ক্রয় করে। সরকারের সাথে যৌথ অংশীদারীত্বে ওই বিদ্যুত উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপনের প্রক্রিয়া বর্তমানে চুড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। এসব জমিতে  চলতি মৌসুমে চিংড়ি উৎপাদন ও আগামী মৌসুমে লবন উৎপাদিত হচ্ছে। সম্প্রতি চলতি বছরের লবন মৌসুম শুর হতে যাচ্ছে। চাষিরা মাঠ প্রস্তুতির কাজও শুরু করেছে ইতিমধ্যে। এস.আলমু গ্রুপের এসব জমি স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শরাফত উল্লাহ চৌধুরী ওয়াসিম ও অপর দুই ব্যক্তি চলতি সনে লবন উৎপাদনের জন্য বর্গা নিয়েছেন। একইভাবে এসব জমি তারা বর্গা চাষিদের পুণঃ লাগিয়ত করেন।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন