পেকুয়ায় গভীর রাতে ম্যানটেক প্রপার্টিজ লিমিটেডের নিমার্ণধীন ভবনে আ’লীগের দু’গ্রুপের অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের তান্ডব: শতাধিক রাউন্ড গুলিবিনিময়: আহত-১

pic pekua 6-4-2014

নিজস্ব প্রতিনিধি,পেকুয়া:
পেকুয়া আলহাজ্ব কবির আহম্মদ চৌধুরীর বাজারে ম্যানটেক প্রপার্টিজ লিমিটেডের নিমার্ণধীন ভবনের জায়গা দখল – বেদখল নিয়ে উপজেলা আওয়ামীলীগের দুগ্রুপের মধ্যে শতাধিক রাউন্ড গুলি বিনিময়ের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় সন্ত্রাসীরা ওই ডেভলপার কৌম্পানীর দুটি নির্মিত অফিস, একটি বসতঘর, নির্মিত সীমানা প্রচীর ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেয়। এসময় সন্ত্রাসীরা ইউনিয়ন পরিষদের একজন নৈশ প্রহরীকে মারধর করে গুরুত্বর আহত করে। এতে এখনোও কোন গুলিবিদ্ধের খবর পাওয়া যায়নি।

ঘটনাটি ঘটছে গত ৫ এপ্রিল দিবাগত রাত আনুমানিক ১ টার দিকে। প্রত্যক্ষদর্শী ও ম্যানটেক প্রপার্টিজ লিঃ এর সূত্রে জানা যায়, পেকুয়া উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক  জাহাঙ্গীর আলম তার ব্যবসায়িক পার্টনার সরওয়ার জামান চৌধুরীকে নিয়ে পেকুয়ার আলহাজ্ব কবির আহমদ চৌধুরী বাজার সংলগ্ন এলাকায় পেকুয়া মৌজার বি.এস ৭৯২ খতিয়ানে ৬২৬, ৭৩৩, ৪৫৭ দলিল ও বিভিন্ন সময় রেজিস্ট্রী বায়না মূলে জাহাঙ্গীর আলম ও ১৬৮, ৩৬৮, ৩৭২নং দলিল মুলে ম্যানটেক ডেভলাপার কোম্পানির চেয়ারম্যান ছরওয়ার জামান চৌধুরী নামে বিভিন্ন ওয়ারিশ থেকে ২৪৮.১০ শতক জায়গা ক্রয় করে গত ৪/৫মাস আগে ম্যানটেক ডেভলাপমেন্ট প্রতিষ্ঠানের রিজেন্সী স্কোয়ারের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে একটি বহুতল বানিজ্যিক ভবন নির্মাণ কাজ আরম্ভ করেন। ওই ভবনের জন্য অফিস ও ক্রয়কৃত সম্পত্তির উপর সীমানা প্রাচীর নির্মাণ কাজ শেষ করে বহুতল ভবন নির্মানের কাজ আরম্ভ করে।

এদিকে সম্প্রতি ম্যানটেক প্রপার্টিজের খরিদা সম্পত্তির উপর লোলপ দৃষ্টি পড়ে উপজেলা আ’লীগের সাবেক সহসভাপতি এস এম গিয়াসউদ্দিন, পেকুয়া আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম, উপজেলা আ”লীগের সাবেক যুগ্নসম্পাদক ফরিদুল আলম, শীলখালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ওয়াহেদুর রহমান ওয়ারেচি ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মোঃ বারেক। তারা অঘোষিতভাবে জায়গার আধিপত্য নিতে গত কয়েকদিন ধরে ম্যানটেকের ভবন নির্মাণ নিয়ে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে। যা নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে দখল ও বেদখলকে কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছিল অনিশ্চিয়তা। পরে উভয় পক্ষকে নিয়ে প্রশাসন দুইপক্ষের স্বত্বের বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য বেশ কয়েক বার বৈঠক করে। বৈঠকে সালিশী প্রতিনিধিরা উভয় পক্ষের দলিলসহ জায়গার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র উপস্থাপনের জন্য বললে এতে ম্যানটেক প্রপার্টিজের পক্ষ থেকে খরিদা স্বত্বের দলিলাদি উপস্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু অপর পক্ষের দাবীদার ওই আওয়ামী লীগ নেতাদের পক্ষ থেকে দফায় দফায় বৈঠকে কোন ধরনের যৌক্তিক কাগজপত্র দেখাতে সক্ষম হননি।

এদিকে ম্যানটেক প্রপার্টিজের জায়গার উপর অবৈধ হস্তক্ষেপের বিষয়ে যুবলীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলম বাদী হয়ে পেকুয়া থানায় গত ১৯ মার্চ একটি সাধারণ ডায়েরী দায়ের করেন (যার নং৭৭৩)। তারপরও তারা দলবল নিয়ে ফের কাজে বাধা সৃষ্টি করে। যা নিয়ে ম্যানটেকের পক্ষ থেকে আইনগত সহয়তা পেতে গত ২৩ মার্চ কক্সবাজার জেলা প্রশাসক ও জেলা পুলিশ সুপার, ২৪ মার্চ ডি.আই.ও-১, জি-২, ডিজিএফআই কক্সবাজার বরাবর লিখিত আবেদন করেন। এ জের ধরে গতকাল রাতের আধারে ম্যানটেক প্রপার্টিজ গ্রুপের রিজেন্সী স্কোয়ার-এ নির্মানাধীন বহুতল ভবনে ভয়াবহ তান্ডব চালালেন আওয়ামী লীগ নেতাদের ভাড়া করা মুখোশ ও র‌্যাবের ড্রেস পরিহত অস্ত্রধারী ডাকাত ও সন্ত্রাসীরা।

এ সময় অস্ত্রধারীদের বেপরোয়া গুলিবর্ষণ ও তান্ডবে ঘুমন্ত ব্যবসায়ীদের মধ্যে ব্যাপক ভীতির সঞ্চার হয় তারা দিকবেদিক পালিয়ে যায়। এরপর বাজারে ব্যাপক লুটপাট চালায় সন্ত্রাসীরা। তাদের বেপরোয়া গুলিবর্ষণের সময় পেকুয়া থানা পুলিশের ভুমিকা ছিল রহস্যজনক ও নীরব দর্শকের মত। এ নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে চরম উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে এখন পরিস্থিতি থমথমে বিরাজ করছে।    

এ বিষয়ে উপজেলা যুবলীগের সাধারন সম্পাদক  ও ম্যানটেক প্রপার্টিজের পরিচালক জাহাঙ্গীর আলমের কাছ জানতে চাইলে তিনি জানান, প্রকৃত জায়গাটি খরিদ করে ম্যানটেক প্রপার্টিজ পেকুয়া বাজারে বহুতল ভবন নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু আ’লীগের গুটিকয়েক নেতা আমার কাজে অবৈধ হস্তক্ষেপ করছে। দলের স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে ওই ব্যক্তিরা রাতের আধারে ভাড়াটে অস্ত্রধারীদের পেকুয়া বাজারে জড়ো করে ম্যানটেকের ভবন নির্মাণ স্থানে তান্ডব চালিয়েছে। প্রচন্ড গুলির বিকট শব্দে পেকুয়ার আইন শৃংখলার চরম অবনতিসহ মানুষের মধ্যে চরমভাবে ভীতিকর পরিবেশ তৈরি করেছে তারা।

এ বিষয়ে জানতে পেকুয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সম্পাদক আবুল কাসেমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, যারা ওই জায়গার প্রকৃত মালিক তারাই অবৈধভাবে গড়ে ওটা ম্যানটেকের সীমানা প্রাচীর ভেঙ্গে দিয়েছে। তাতে আমাদের কোন সংশ্লিষ্টতা নাই। তারা সাধারণ জনগনের জায়গা জবরদখল করে দীর্ঘদিন ধরে পেকুয়াবাসীকে হয়রানি করে আসছে। তবে তিনি ওয়ারিশ পক্ষ থেকে আমোক্তনামা নেওয়ার কথা জানান।

এ সব বিষয়ে পেকুয়া থানার অফিসার্স ইনচার্জ হাবিবুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, রাতের আধারে কে বা কারা ওই ঘটনা ঘঠিয়েছে তা জানিনা। অভিযোগ পেলে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।    
 
 

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন