ফিলিস্তিন কীভাবে মুসলিম বিশ্বের হট ইস্যু হয়ে ওঠে?

fec-image

মুসলমানদের তৃতীয় পবিত্রতম স্থান ‘মসজিদুল আকসা’ অধ্যুষিত ফিলিস্তিনকে দখলে নেয়ার পর থেকেই এই তিক্ত ইতিহাসকে মুসলমানদের মন থেকে মুছে ফেলার চেষ্টা করে এসেছে দখলদার ইহুদিবাদীরা।

দখলকৃত ভূখণ্ডে চিরস্থায়ী হতে নৃশংসতম গণহত্যা ও জবরদখলের ইতিহাস ভুলিয়ে দিয়ে মুসলমানদের বোকা বানিয়ে অপরাধের দায় থেকে মুক্তি পেতে ইহুদিবাদী বা জায়নবাদীদের পায়তারা চলছিল সর্বত্র। কিন্তু ১৯৭৯ সালে ইরানের ইসলামি বিপ্লব তাদের এই ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দেয়। এ ক্ষেত্রে মূল ভূমিকা রাখেন ইসলামি বিপ্লবের রূপকার ইমাম খোমেনী (রহ.)।

এ প্রসঙ্গে ইমাম খোমেনী (রহ.)’র মেয়ে ড. জাহরা মুস্তাফাভি ফিলিস্তিনকে মুসলিম বিশ্বের প্রধান ইস্যুতে পরিণত করার ক্ষেত্রে ইমাম খোমেনীর ভূমিকা তুলে ধরেছেন। তিনি বলেছেন,’পবিত্র ইসলাম ধর্মে জিহাদ (আল্লাহর পথে সংগ্রাম) সবার জন্য অবশ্যপালনীয় কর্তব্য। নিজেকে দূরে রেখে অন্যের ওপর ন্যস্ত করার মতো কোনো দায়িত্ব এটি নয়। ইরানে ইসলামি বিপ্লবের আগে ৩০ বছর ধরে ফিলিস্তিনি সমাজ, মাতৃভূমি মুক্ত করার সংগ্রামের দায়িত্ব কিছু ফিলিস্তিনি সংগঠন ও আরব সরকারের ওপর ন্যস্ত করে রেখেছিল। অন্যেরা এই কাজটি করে দেবে বলে তারা অপেক্ষায় ছিল। কিন্তু মুসলিম বিশ্ব বিশেষ করে আরব দেশগুলো পশ্চিমাদের বৈষয়িক উন্নতি এবং সামরিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সক্ষমতা দেখে আত্মসমর্পণ করেছিল। দখলদার ইহুদিবাদী শাসকগোষ্ঠীর প্রতি পশ্চিমা দেশগুলোর ব্যাপক সমর্থন ও সহযোগিতার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে মুসলিম দেশগুলো হতাশায় নিমজ্জিত হয় এবং এই দখলদার ইসরাইলের বিরুদ্ধে সাফল্য ও বিজয়ের বিষয়টি কল্পনা করার শক্তিও হারিয়ে ফেলে। কিন্তু ইরানে ইসলামি বিপ্লবের পর এই হতাশাজনক অবস্থায় পরিবর্তন আসে। এই বিপ্লবের রূপকার ইমাম খোমেনী (রহ.) দ্রুততার সঙ্গে ফিলিস্তিন ইস্যুতে কিছু পদক্ষেপ নেন। ইরানে তখন দখলদার ইসরাইলের দূতাবাস ছিল। ইমাম খোমেনী ইসরাইলের দূতাবাস বন্ধ করে দিয়ে সেটাকে বিশ্বের প্রথম ফিলিস্তিন দূতাবাস হিসেবে ঘোষণা করেন। বিপ্লবের সফলতার প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি নতুন কৌশলগত শ্লোগান চালু করেন, আর তাহলো- ‘আজ ইরানে, আগামীতে ফিলিস্তিনে’। এর মধ্যদিয়ে ফিলিস্তিনিরা নিজেদের তিন যুগের ভুল বুঝতে পারেন। তারা বুঝতে পারেন জিহাদ করার ধর্মীয় দায়িত্ব অন্যের ওপর ন্যস্ত করে তারা ভুল করেছে, এর ফলে মাতৃভূমি মুক্তির বিষয়টি পিছিয়ে গেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ইমাম খোমেনী (রহ.) ইরানে ইসলামি শাসব ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার পর প্রথমেই পবিত্র রমজান মাসের শেষ শুক্রবারকে বিশ্ব কুদস দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন। এর মাধ্যমে তিনি ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড ও পবিত্র মসজিদুল আকসা ইস্যুকে মুসলমানদের ধর্মীয় জীবনধারার অংশে পরিণত করেন। এর ফলে মুসলিম সমাজ ফিলিস্তিনকে ভুলে যেতে পারেনি। ফিলিস্তিন ইস্যুতে ইমাম খোমেনীর আরেকটি পদক্ষেপ হলো, মুক্তিকামী আন্দোলনগুলোর সমর্থনে একটি ফোর্স গঠনের নির্দেশ। পরবর্তীতে এটিকে ‘ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর কুদস ফোর্স’ হিসেবে নামকরণ করা হয়। ফিলিস্তিনকে মুক্ত করা ও দখলদার ইসরাইলকে অস্তিত্বহীন করার সুনির্দ্দিষ্ট দায়িত্ব দিয়ে এই ফোর্সকে ইরানের সামরিক বাহিনীর অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এই দু’টি কাজের পাশাপাশি আরও কিছু রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক পদক্ষেপ ফিলিস্তিনকে মুসলিম বিশ্বের প্রধান ইস্যুতে পরিণত করে।’

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন