বনরূপা বাজারের ব্যবসায়ীদের উচ্ছেদের পাঁয়তারা করছে মালিক পক্ষ

 

রাঙ্গামাটি প্রতিনিধি:

দোকান ও নির্দিষ্ট প্লটের অগ্রীম বায়নার টাকা নেওয়ার পরেও মালিকপক্ষ কোন চুক্তিপত্র না দিয়ে উল্টো ব্যবসায়ীদের উচ্ছেদের পাঁয়তার করছে বনরূপা মাছ ও কাঁচা বাজার ব্যবসায়ীদের। এ নিয়ে মালিক ও ব্যবসায়ীদের মাঝে দন্দ্ব দেখা দিয়েছে। মালিক বিল পরিশোধ না করায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করে দিলে এক দিনে ব্যবসায়ীদের ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৩ লক্ষ টাকা।

বাজারের মাছ ব্যবসায়ী মনি ত্রিপুরা জানিয়েছেন, তিনি সেখানে ২০/২৫ বছর যাবত একই জায়গায় ব্যবসা করে আসছেন। গত ছয় মাস ধরে মালিক পক্ষ বিভিন্ন ভাবে হয়রানি করছে এমন কি ভাড়াটিয়াদের কাছ থেকে বিদ্যুৎ বিল নেওয়ার পরও টাকা জমা না করার কারণে গত বৃহস্পতিবার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে বিদ্যুৎ বিভাগ।

মুরগী বিক্রেতা তুষার ও মিজান জানিয়েছেন বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছন্ন থাকায় সেদিন তুষার এর ২৭টি ও মিজানের ৪১টি মুরগি মারা যায়। এ ব্যবসায়ীদ্বয় আরো অভিযোগ করেছেন, জায়গার মালিকের কারণে তারা বিভিন্ন ভাবে হয়রানিও হচ্ছেন। কোন চুক্তিপত্র নেই। বাজারের কোন সংস্কার নেই। ব্যবসায়ীদের উচ্ছেদ করার জন্য নানাভাবে হয়রানি বা ষড়যন্ত্র করছে রাঙ্গামাটি শহরের প্রধান বানিজ্যিক প্রাণকেন্দ্র বনরূপা কাঁচাবাজারের মালিক মো. শাহ নেওয়াজ চৌধুরী ফারুক, এমন অভিযোগ করেন বাজারের ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ।

রাঙ্গামাটি শহরের প্রধান বানিজ্যিক প্রাণকেন্দ্র বনরূপা কাঁচাবাজার। এ বাজারের প্রায় ৭০ থেকে ৮০ জন ব্যবসায়ী আছে। কিন্তু দীর্ঘ দিন ব্যবসা করে আসলেও মালিকের সাথে ব্যবসায়ীদের কোন চুক্তিনামা নেই। মাছ ও কাচাঁবাজারের মালিক মো. শাহ নেওয়াজ চৌধুরী ফারুকের কাছে চুক্তিনামা না থাকলেও দোকানের  সালামী এবং প্রতিমাসে প্লট বরাদ্দ অনুযায়ী দোকান ভাড়া ভোগ করছেন বলে জানান ব্যবসায়ীরা।

গতকাল বনরূপাস্থ ফারুক মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. হারুন জানিয়েছেন, মার্কেটের জায়গার মালিক শাহনেওয়াজ চৌধুরী ফারুক দীর্ঘ ২৫/২৬ বছর আগে থেকে প্রায় বেশ কিছু ব্যবসায়ী জায়গার প্লট নিয়ে ব্যবসা করে আসছে। এর মধ্যে ব্যবসায়ীর সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ৭০ জনে। সেসময় ১০ হাজার টাকা করে প্লটের বায়নার টাকা দিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। কিন্তু শত তাগাদা দেওয়ার পরেও মালিক পক্ষ কোন প্রকার চুক্তিপত্র করেনি।

তিনি জায়গার উপর পাকা ভবন করার ওজুহাতে এবং ব্যবসায়ীদের সাথে পূর্ব কোন আলোচনা ছাড়াই উচ্ছেদের পাঁয়তারা করে আসছেন। তিনি আরো জানিয়েছেন, মাস শেষে সকল ব্যবসায়ীদের বিদ্যুৎ বিল মালিকের হাতে পরিশোধ করার পরও বিল জমা না করায় গত বৃহস্পবিার বিদ্যুৎ বিভাগ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিলে ফ্রিজে রাখা বড় বড় মাছ পঁচে যায় এবং তরিতরকারীও নষ্ট হয়ে যায়। এ ঘটনায় একদিনে ব্যবসায়ীদের প্রায় ৩ লক্ষ টাকা ক্ষতি গুনতে হয়েছে।

এদিকে ব্যবসায়ী এবং মালিকের দন্দ্বের কারণে স্থানীয় ক্রেতা সাধারণ পড়েছে বিপদে। ক্রেতা সাধারণকে বাজারে এসে পঁচা মাছ ও সব্জী কিনতে হচ্ছে। ক্ষতি পুষিয়ে নিতে নিজের অজান্তে পুলিশের এক পদস্থ কর্মকর্তাকেও পঁচা মাছ বিক্রি করে দিয়েছে এক মাছ ব্যবসায়ী।

শহরের বনরূপা বাজার একটি বৃহত্তম কাঁচা বাজার নামে পরিচিত। ক্রেতা সাধারণ লাভ ক্ষতির হিসাব না করলেও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রী ক্রয় করে জীবন ধারণ করছেন। এখানে ব্যবসায়ী এবং মালিক পক্ষ উভয় পক্ষকেই সাধারণ মানুষের স্বার্থ বিবেচনা করে ঝামেলা মিটিয়ে নিতে অনুরোধ জানিয়েছেন। অন্যথায় বাজার সংশ্লিষ্ট সাধারণ মানুষ এবং ব্যবসায়ী ও ক্রেতা বিক্রেতা প্রত্যেকেরই বড় ধরণেরর ক্ষতি সাধন হবে।

অপরদিকে বাজারের ব্যবসায়ীবৃন্দ ও জায়গার মালিক মো. শাহনেওয়াজ চৌধুরী ফারুক ইতিমধ্যে থানা, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও পৌর মেয়রের কাছে আবেদন জানালেও কর্তৃপক্ষ ব্যবসায়ীদের পক্ষে কথা বলায় তাঁদের কোন বিচার মানতে রাজি হননি জায়গার মালিক। ব্যবসায়ীদের একটাই দাবি প্লট মোতাবেক প্রদত্ত অগ্রীম টাকার চুক্তিপত্র করতে হবে প্রশাসন বাজারের নির্দিষ্ট স্থান না করে দেওয়া পর্যন্ত কোন ব্যবসায়ীকে এখান থেকে উচ্ছেদ করা যাবে না।

এবিষয়ে মো. শাহনেওয়াজ চৌধুরী ফারুক জানিয়েছেন, ব্যবসায়ীরা নিয়মিত বিদ্যুৎ বিল ও ভাড়া দিচ্ছেন না তাই গত ৬ মাস আগে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে নিজেই লিখিত আবেদন জানান। ফলে বিদ্যুৎ বিল বকেয়া ও আবেদনের কারনে গত বৃহস্পতিবার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। তিনি ব্যবসায়ীদের অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি আরো জানিয়েছেন মার্কেট সংস্কার করতে চাইলে ব্যবসায়ীদের কারণে তা করতে পারছেন না।

তার কেয়ার টেকার মো. সেলিম জানিয়েছেন, কিছু ব্যবসায়ীর বকেয়া আছে কিন্তু অধিকাংশই পরিশোধ করেছেন। ব্যবসায়ীরা স্ব উদ্যোগে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করতে চাইলে মো. শাহনেওয়াজ চৌধুরী ফারুক না দিলে প্রায় ৮০ হাজার টাকা বকেয়ার কারণে বৃহস্পতিবার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় বিদ্যুৎ বিভাগ।

এ বিষয়ে মেয়র আকবর হোসেন চৌধুরী জানিয়েছেন, মালিকের আন্তরিকতার অভাবে মার্কেট এর মালিক ও ব্যবসায়ীর মধ্যে সমস্যা দেখা দিয়েছে। তবে তিনি যে কোন উপায়ে বাজারের সমস্যা সমাধানে সহযোগীতা করবেন। এছাড়া বকেয়া বিদ্যুৎ বিল আগামী ১০ দিনের মধ্যে পরিশোধ করবেন ব্যবসায়ীরা কথা দিলে মেয়র নিজ উদ্যোগ নিয়েই বাজারে আপাতত বিদ্যুৎ সংযোগ চালু রেখেছেন।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন