“বন্যায় ১৫ হাজার ৮০০টি পরিবারের ৬৮ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছিলো। বন্যার পানিতে ডুবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সাড়ে ৩ হাজার বসত বাড়িঘর। নষ্ট হয়ে গেছে ৯ হাজার শত ৫হেক্টর ফসলি জমি। তাছাড়া বিভিন্ন জেলায়-উপজেলায় পাহাড় ধসে প্রাণ হারিয়েছে অন্তত ১০জন”

বন্যায় বিপর্যস্ত বান্দরবানে ভেসে উঠেছে ক্ষয়ক্ষতির চিত্র

fec-image

প্রশাসন হতে জেলায় ২ লাখ ৬০ হাজার লিটার বিশুদ্ধ খাবার পানি বিতরণ , ত্রান ১৬৮ মে. টন চাল ও ৬ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।এছাড়াও বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের হতে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রান সহায়তা প্রদানের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ২৪ লাখ টাকা, সেনাবাহিনীর পক্ষ হতে ৫৩ হাজার ৮০০ লি. বিশুদ্ধ খাবার পানি বিতরণ করা হয়।

টানা ছয়দিন বৃষ্টি শেষে নেমে গেছে বন্যার পানি। তবে এখনো বেশ কয়েকটি এলাকায় এখনো পানিবন্দি রয়েছে। জেলা শহরে বন্যের পানি নেমে যাওয়ার পর স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে ক্ষয়ক্ষতির চিত্র। ভয়াবহ এই বন্যায় নষ্ট হয়ে গেছে কয়েক হাজার ফসলি জমি, শিক্ষার্থীদের বইপত্র ও ভেঙ্গে পড়েছে কয়েক হাজার বাড়িঘরসহ সড়কপথ। এর ফলে বন্যায় কবলিত সাধারণ মানুষরা এখন বসবাস করছেন খোলা আকাশের নীচে। এমন ভয়াবহ পরিস্থিতি শেষে কিভাবে শুন্য থেকে ঘুরে দাঁড়াবে এই নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন এ জেলার সাধারণ মানুষ।

এদিকে বিভিন্ন স্থানে ধসে পড়েছে বড় বড় পাহাড়। যার ফলে সড়কগুলো এখন খানাখন্দে ভরা। ভারী বর্ষণের ফলে বন্ধ হয়ে গেছে বান্দরবান- রুমা ও থানচির যোগাযোগের ব্যবস্থাও। তাছাড়া কয়েকটি স্থানে সড়ক ধসে পড়াতে যাতায়াত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ভোগান্তি নিয়ে কয়েকমাইল হেটে পাড়ি দিচ্ছে সাধারণ মানুষ । শুধু তাই নয় যোগাযোগের বিছিন্ন ঘটনায় জুমের বিভিন্ন রকমের ফসল-আমসহ বাজারজাত করতে না পারায় বিপাকে পড়েছে কৃষকরা। ফসলি জমি চাষ করে যারা সংসার চালাচ্ছেন তারাও এখন খোলা আকাশের নীচে বসবাস করছেন। আর যারা জুম চাষ নিয়ে সারাবছরে খাদ্য উৎপাদন দিয়ে সংসার চলে তারাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে খাদ্য সংকটের চিন্তায় ভুগছেন। এমনকি বন্যায় বই পত্র ডুবে যাওয়াতেই সামনে এইচএসসি পরিক্ষা নিয়ে আশংকায় রয়েছে শিক্ষার্থীরাও।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বান্দরবানের সাঙ্গু নদী ঘেষে যেসব বসতঘর রয়েছে সেই ঘরগুলো এই বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। বৃষ্টির পানি নামার পর ভেঙ্গে গেছে কয়েকহাজার বাড়ি ঘর। এখনো কয়েকশত বাড়িতে চলছে পরিস্কারের কাজ। রুমা- থানচি সড়কের সড়কের উপরে পড়ে আছে পাহাড় ধসের পড়া মাটি। থানচি সড়কের চিম্বুক পোড়া পাড়া এলাকায় প্রায় ১০ একরের মতন ভেঙ্গে গেছে সড়ক ও নষ্ট হয়ে গেছে জুমের ফসল। রুমা সড়কেও একই চিত্র। ওয়াইজংশনের পর থেকে জামিনি পাড়া এলাকা পর্যন্ত ভেঙ্গে গেছে সড়ক পড়ে আছে রাস্তার উপর মাটি। তবে সড়কের যান চলাচল স্বাভাবিক করতে ২০ ইসিবি সেনাসদস্যরা মাটি সরাচ্ছেন ভারী যন্ত্র সাহায্যে। কবে নাগাদ যানচলাচল করতে পারবে সে ব্যাপারে এখনো নিশ্চিত করতে পারেনি সেনা সদস্যরা।

চিম্বুক ২০ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়ন ওয়ারেন্ট অফিসার রাহুল হাসান পার্থ বলেন, সড়ক যোগাযোগ সচল রাখতে সকাল থেকে সেনা সদস্যরা সড়কের মাটি সরিয়ে নিচ্ছেন চিম্বুক ওয়াইজংশন পর্যন্ত। এরপর থেকে সেনাবাহিনীর দুটি টিম রুমা- থানচি সড়কের মাটি অপসারণের কাজ করে যাচ্ছে। তবে থানচি সড়কের পোড়া পাড়া এলাকায় যে সড়কের ভেঙ্গে গেছে সেটি বিকল্প হিসেবে অন্যস্থানে পাহাড় মাটি কেটে সড়ক যোগাযোগের ব্যবস্থা করা হবে বলে জানান তিনি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বান্দরবান সদর, লামা, আলীকদম, রুমা, রোয়াংছড়ি ও থানচিসহ এ বন্যায় ডুবে গেছে কয়েক হাজার বাড়িঘর। ক্ষয়ক্ষতির পরিমান ছেড়ে গেছে দ্বিগুন । বান্দরবান-থানচি সড়কের বিদ্যমনি পাড়া ও দিংতে পাড়া মাঝামাঝি স্থানের সড়কে খন্ড খন্ড ভাঙ্গন ও পাহাড় ধসে সড়কে উপর গর্তের ঝর্ণার সৃষ্টি হয়েছে। শিলা ঝিরি এলাকার মেনরোয়া পাড়াসহ সড়কে বিভিন্ন স্থানের ছোট বড় খন্ড খন্ড ভাঙ্গনে গর্তে নালা পরিনত হয়ে গেছে। তাছাড়া ডাক বাংলো, নীলগিরি, মিলনছড়ি, জীবন নগর, কালা পাহাড়, শিলা ঝিরি, বিদ্যামনি পাড়া একই চিত্র। তবে রুমা সড়ক বন্ধ থাকলে নৌপথ দিয়ে যাতায়াত করছেন সাধারণ মানুষ। এদিকে পানি কমে যাওয়াতেই চট্টগ্রাম – কক্সবাজার ও ঢাকার দূরপাল্লার বাস চলাচলের স্বাভাবিক হয়েছে। তবে এই বন্যায় দুর্ভোগের সময় দেখা যায়নি, রেড ক্রিসেন্ট, স্কাউট ও রাজনৈতিক অঙ্গসংগঠনের কর্মীদের।

প্রশাসনের তথ্যনুযায়ী, চলতি বছরের টানা বৃষ্টিতে ১৫ হাজার ৮০০টি পরিবারের ৬৮ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছিলো। বন্যার পানিতে ডুবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সাড়ে ৩ হাজার বসত বাড়িঘর। নষ্ট হয়ে গেছে ৯ হাজার শত ৫হেক্টর ফসলি জমি। তাছাড়া বিভিন্ন জেলায় উপজেলায় পাহাড় ধসে প্রাণ হারিয়েছে অন্তত ১০জন। তাছাড়া প্রশাসন হতে জেলায় ২ লাখ ৬০ হাজার লিটার বিশুদ্ধ খাবার পানি বিতরণ , ত্রান ১৬৮ মে. টন চাল ও ৬ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

এছাড়াও বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের হতে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রান সহায়তা প্রদানের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ২৪ লাখ টাকা, সেনাবাহিনীর পক্ষ হতে ৫৩ হাজার ৮০০ লি. বিশুদ্ধ খাবার পানি বিতরণ করা হয়।

এদিকে ১৯৯৭, ২০১৯ সালে বান্দরবান জেলায় বন্যা হলেও চলতি বছরের মতন তেমন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। কিন্তু চলতি বছর ২০২৩ সালে যে বন্যার সৃষ্টি হয়েছে সেটি গেল বছরের রেকর্ডের মাত্রা ছাড়িয়েছে। দীর্ঘ ২৬ বছর পর এমন বন্যা পরিস্থিতি দেখে হতবাক জেলাবাসীরা।

বন্যায় কবলিত ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সাথে কথা বলে জানা গেছে, চলতি বছরে সাঙ্গু নদীর পানি বাড়ানো দেখে অবাক হয়েছেন তারা। এমন ভয়াবহ বন্যার রুপ নিবে এমনটি ছিল সকলের কল্পনার বাইরে। টানা বৃষ্টিতে অনেকেই বের করতে পারেনি ঘরের মূল্যবাদ জিনিসপত্র। আবার অনেক পানি বাড়বে না ভেবেই রেখে গেছে বাড়ি চালের উপর জিনিসপত্র । কিন্তু টানা বৃষ্টিতে রাতেই উজান থেকে নেমে আসা সাঙ্গু নদীর পানি বেড়ে যাওয়াতেই জেলা শহরে সরকারি অফিস, বাড়িঘর, পুলিশ বাংলোসহ সরকারি -বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ বান্দরবানের অর্ধেক শহর পানিতে তলিয়ে গেছে। নষ্ট হয়েছে গেছে কয়েক কোটি টাকার জিনিসপত্র ও বাড়িঘর।

এদিকে রুমা, থানচি,লামা, আলীকদম ও সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে কথা বলে জানা গেছে, চলতি বছরের টানা বৃষ্টিতে কয়েক হাজার গ্রাম তলিয়ে গেছে। নষ্ট হয়ে গেছে ঘরবাড়ি, ফসলি জমিসহ যোগাযোগের সড়কের ব্যবস্থা। সরেজমিনে পরিদর্শন করে সম্পূর্ন পরিস্থিতি সেনাবাহিনী ও জনপ্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন। যে কোন দুর্যোগে মোকাবেলা ও সহযোগিতার জন্য উপজেলা কন্ট্রোলরুম সাথে যোগাযোগ স্থাপনে আহব্বান জানিয়েছেন তারা।

বান্দরবান জেলা প্রশাসক শাহ্ মোজাহিদ উদ্দিন বলেন, চলতি বছরে বন্যের পানিতে কয়েক হাজার বাড়িঘর ও ফসলি জমি ডুবে গেছে। জেলা সদর চেয়ে লামা উপজেলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ঘরবাড়ি পাশপাশি রাস্তার ঘাট ভেঙ্গে গেছে। আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে দ্রুত প্রস্তুত করা হবে। আর ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ত্রাণ দেওয়া ও পুনর্বাসন করা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: ক্ষয়ক্ষতি, চিত্র, বন্যা
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন