বান্দরবানে বিজিবির নির্মানাধীন সেক্টর হেড কোয়াটার্সে হামলা: ফিরে গেছে ঢাকা থেকে আগত মিডিয়া টিম

বিজিবি বান্দরবান
স্টাফ রির্পোটার:

অবশেষে বান্দরবান ছেড়েছে বিজিবি’র বান্দরবান সেক্টর হেড কোয়ার্টার্সের জমি নিয়ে রিপোর্ট করতে ঢাকা থেকে আগত মিডিয়া ও নাগরিক প্রতিনিধিদের সমন্বিত টিম। আজ সকাল ৯ টায় একটি মাইক্রো যোগে টিমটি ঢাকার উদ্দেশ্যে বান্দরবান ত্যাগ করে।

এদিকে টিমের কার্যক্রম নিয়ে বান্দরবান শহরে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে বান্দরবানের বাঙালী নেতারা একটি বিশেষ গোষ্ঠীর পৃষ্ঠপোষকতায় আগত একপেশে টিম বলে আখ্যা দিচ্ছে। স্থানীয় বাঙালী প্রতিনিধিদের সাথে কোনোরূপ বৈঠক না করে একতরফা উপজাতীয় প্রতিনিধিদের সাথে জাতীয় গণমাধ্যম টিমের বৈঠককে তারা ভালভাবে নিতে পারেনি। ফলে টিমের একতরফা কার্যক্রম শুরুর সাথে সাথে তারা বিক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠে। এতে স্থানীয় বাঙ্গালীদের মাঝে উত্তেজনা দেখা দেয়। পরে উত্তেজিত বাঙ্গালীরা কালাঘাটা বড়ুয়ার টেক এলাকায় রাস্তায় গাছের গুড়ি ফেলে ব্যারিকেড সৃষ্টি করে হামলাকারীদের উপর পাল্টা হামলা করার চেষ্টা চালায়। এসময় প্রায় ৪ঘন্টা যান চলাচল বন্ধ থাকে। পরে পুলিশ এসে ব্যারিকেড তুলে দিলে গাড়ী চলাচল শুরু হয়।

ফলোআপ

উল্লেখ্য, মিডিয়া টিমটি বান্দরবানে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি’র) নির্মাণাধীন সেক্টর সদর দপ্তর পরিদর্শনকালে সেখানে হামলা চালায় জনসংহতি সমিতি(জেএসএস)সহ পাহাড়ী নারী-পুরুষরা। হামলায় বিজিবির সুবেদারহস চারজন আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে আইন শৃংখলা বাহীনিসহ অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়ন করা হয়েছে। সোমবার উপজেলা সদরের খানসামা পাড়ায় এ ঘটনা ঘটে।

আইনশৃংখলা বাহিনী ও প্রত্যক্ষদর্শী সুত্র জানায়, জেএসএস নেতাকর্মীর নেতৃত্বে খানসামা পাড়া, ক্রাইখ্যং পাড়া ও পুনর্বাসন পাড়ার পাহাড়ী নারী-পুরুষ বিজিবির অধিগ্রহণকৃত জায়গায় দলবল নিয়ে প্রবেশ করতে গেলে বিজিবির সদস্যদের সাথে পাড়াবাসীর বাকবিতণ্ডা ও ধস্তাধস্তি হয়। উত্তেজিত জেএসএস নেতাকর্মীর নেতৃত্বে নারী-পুরুষরা নির্মানাধীন সেক্টরের শ্রমিক ও বিজিবি সদস্যদের উপর পরিকল্পিতভাবে তাদের উপর হামলা চালায়। তাদের হামলায় সুবেদার আবুল কালাম, নায়েক সুবেদার কাওছার, হাবিব, নায়েক সরওয়ার আহত হন। এসময় তারা উচ্চস্বরে বলতে থাকে যে কোন মূল্য বিজিবি সেক্টর বন্ধ করা হবে। খবর পেয়ে শহর থেকে অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনেন।

রাজীব মীরের নেতৃত্বে সাংবাদিক দলটি হামলা শেষে ক্রাইখ্যং পাড়ায় বৈঠক করে। বৈঠকে তারা সিধান্ত নেয় যে কোন মূল্য বিজিরি সেক্টর নির্মাণ কাজ বন্ধ করা হবে। পরে দলটি জেলা প্রশাসক কেএম তারিকুল ইসলামের সাথে বৈঠক করে।

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ(বিজিবি’র) বান্দরবান সেক্টর সদর দপ্তরের অপারেশন অফিসার মেজর হামিদুর রহমান জানান, সদর উপজেলার খানসামা পাড়ায় বিজিবির সেক্টর স্থাপনের জন্য ৩৪৮নং হ্লাপাইক্ষ্যং মৌজায় অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা লে: কর্নেল উকানথিন এর কাছ থেকে হোল্ডিং নং ৬০ ও ৮০ এর আন্দর মোট ২৭ একর ৮০শতক তৃতীয় শ্রেনীর জায়গা অধিগ্রহন করে জেলা প্রশাসন। এই জায়গায় সেক্টর সদর দপ্তর নির্মানে কাজ চলার সময় সোমবার সকালে স্থানীয় জেএসএস এর নেতাদের নেতৃত্বে বেশ কিছু উপজাতী নারী পুরুষ দপ্তরের ভেতরে গিয়ে কাজ বন্ধ রাখতে বলে বিজিবি সদস্য ও শ্রমিকদের উপর হামলা চালায়।

তিনি আরো জানান, এসময় হামলাকারীদের সাথে ঢাকা জগন্নাত বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক রাজিব মীরের নেতৃত্বে এক দল সাংবাদিক ছিল। হামলাকারীরা আর সাংবাদিকরা ছবি ও ভিডিও করছিল। পরে উপজাতীদের নিয়ে সাংবাদিক দলটি পাড়ায় একটি বৈঠক করেন। বৈঠকে সাংবাদিক নেতারা উপজাতীদের পরামর্শ দেয় যে কোন অবস্থাতেই যেন সেখানে বিজিবি সেক্টর সদর দপ্তর হতে না পারে। পরিকল্পিত ভাবে একটি মহল বিজিবি’র সেক্টর সদর দপ্তর নির্মানে বাধাগ্রস্ত করতে এই ঘটনা ঘটিয়েছে।

এদিকে এই ঘটনা জেলা সদরে ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় জনতাদের মাঝে উত্তেজনা দেখা দেয়। পরে উত্তেজিত জনতা কালাঘাটা শিশুতল এলাকায় রাস্তায় গাছের গুড়ি ফেলে ব্যারিকেট সৃষ্টি করে। এসময় প্রায় ৪ঘন্টা যান চলাচল বন্ধ থাকে। পরে পুলিশ এসে ব্যারিকেট তুলে দিলে গাড়ী চলাচল শুরু হয়।

ক্রাইখ্যং পাড়ার পাড়া প্রধান (কারবারী) সাইগ্য প্রু মার্মা জানান, বিজিবির সেক্টর কার্যালয় স্থাপন করা হলে পাড়ার লোকজন ভূমিহারা হয়ে যাবে। ২৫ বছর আগে ঐ এলাকায় আমাদের পাড়া ছিল। অধিগ্রহণকৃত ৩৫ একর জায়গার মধ্যে পাড়ার লোকজনদের প্রায় ৩০ একর জায়গা রয়েছে।

জেএসএস‘র সাধারণ সম্পাদক ক্যবামং মার্মা জানান, ভূমি নিয়ে এমনিতেই পাহাড়ে সমস্যা রয়েছে। তার উপর নতুন করে বিজিবির জন্য ভূমি অধিগ্রহণ করে সমস্যা আরও বাড়ানো হচ্ছে। বিজিবির সেক্টর কার্যালয় সেখান থেকে অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার দাবী জানান তিনি।

বিজিবির নির্মানাধীন ভূমির মালিক কর্ণেল খিং (অবঃ) এর ভাই বাতিং জানান, আমার ভাই ১৯৯৫ সনে দুই ব্যাক্তির কাছ থেকে প্রায় ৮ একর ভূমি ক্রয় করে। বাকী আরো ২৭ একর ভূমি বন্দোবস্তির জন্য জেলা প্রশাসকের নিকট আবেদন করা হয়েছে। ১৯ বছর যাবৎ এ ভূমিতে আমরা বনজ, ফলজ বাগান করে এসেছি।

অধ্যাপক রাজিব মীর বলেন, সরকার কোন পদ্বতিতে বিজিবির সেক্টর নির্মানের জন্য ভূমি বরাদ্দ দিয়েছে। বরাদ্দ প্রক্রিয়া সঠিক ছিলা কিনা, তাতে পাহাড়ী জনগোষ্ঠি ভূমি থেকে উচ্ছেদ হয়েছে কিনা, ভূমির ক্ষতি গ্রস্থ পরিবাদের কি পরিমান ক্ষতি পূরণ দিয়েছে তা খতিয়ে দেখতে আমরা এ এলাকা পরিদর্শনে এসেছি।

এ ব্যপারে বান্দরবান সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইমতিয়াজ আহাম্মদ জানান, জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে স্থানীয় কিছু উপজাতী নারী পুরুষ বিজিবি সেক্টর সদর দপ্তর নির্মাণ কাজে বাধা দিয়ে হামলা চালায়। পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে আছে বলে তিনি জানান।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন