বান্দরবান ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুলের ছাত্রদেরকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন

নিজস্ব প্রতিবেদক, বান্দরবান:

বান্দরবান ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের ৯ম শ্রেণীর ৪ ছাত্রকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সোমবার(১০ ডিসেম্বর) গভীর রাতে ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের হোস্টেলে একই কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্ররা এ ঘটনা ঘটায়। নির্যাতিত ছাত্ররা হলো কলেজের ৯ম শ্রেণীর ছাত্র সাইদুল হাসান বিপু, অন্তর ধর, বায়েজিদ, মেহেদী হাসান হৃদয়, সাদনান রাজিম ইবান।

সূত্র জানায়, রবিবার সন্ধ্যায় দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র সাইদুল ইসলাম ইফতি মোবাইল ফোন হোস্টেলের ডেস্কে জমা দিয়ে ক্যান্টিনে নাস্তা করতে করতে যায়। নাস্তা করে ডেস্কে মোবাইল না পেয়ে তাদের আগে হোস্টেলে প্রবেশ করা সাইফুল হাসান বিপু, অন্তর ধর, বায়েজিদ, মেহেদী হাসান হৃদয়, সাদনান রাজিম ইবানকে মোবাইল ফোনের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করে। তারা মোবাইল ফোনের বিষয়ে কিছু জানে না এবং হোস্টেলের সিসি ক্যামেরা দেখে মোবাইল ফোন কে বা কারা নিয়েছে তা নিশ্চিত করার জন্য অনুরোধ করে। কিন্তু তাতে তারা সন্তুষ্ট না হয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে সোমবার গভীর রাতে দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র তামীমের নেতৃত্বে জিসফাকুল হায়দার, সাইদুল ইসলাম ইফতি এবং আকিল রাত ১২টার পর ৪০৪নং কক্ষে প্রবেশ করে সাইদুল হাসান বিপু, অন্তর ধর, বায়েজিদ, মেহেদী হাসান হৃদয়, সাদনান রাজিম ইবানকে গোল করে ফ্লোরে বসিয়ে বেল্ট ও রশি দিয়ে বেদম প্রহার করে। তাদের প্রহারে চিৎকারের আওয়াজ বাইরে যেন শুনতে না পায় তার জন্য তাদের মুখে কাপড় গুজে দেয়া হয়। রাত ১২ থেকে ৩টা পর্যন্ত মধ্যযুগীয় কায়দায় তাদের উপর নির্যাতন চালানো হয় এবং মারধর শেষে এ ঘটনা কাউকে না বলার জন্য হুমকি দেয়া তারা। পরে সাইদুল হাসান বিপু ঘটনার বিষয়ে তার পরিবারকে জানালে পরিবারের পক্ষ থেকে অধ্যক্ষকে জানানো হয়। অধ্যক্ষ অভিযুক্ত ৩ জনকে হোস্টেল থেকে বের করে দেয়। তবে এ ঘটনার পর থেকে অভিভাবকদের মধ্যে আতঙ্ক ও উদ্বিগ্ন বিরাজ করছে।

এদিকে ঘটনার বিষয় নিয়ে ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের হোস্টেলে  সুপার আশরাফ কবিরের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, এটি একটি অনাকাঙ্খিত ঘটনা। এ ব্যাপারে দু:খ প্রকাশ করছি এবং অভিযুক্ত ছাত্রদের হোষ্টেল থেকে বের করে হয়েছে। এ ধরনের ঘটনা যাতে ভবিষ্যতে আর না ঘটে সে দিকে আমরা সজাগ দৃষ্টি রাখব।

নির্যাতিত ছাত্র সাইফুল হাসান বিপুর অভিভাবক রিফাত আলাউদ্দিন জানান, আমরা ছেলে-মেয়েদের হোস্টেলে দিয়েছি তারা যাতে সেখানে নিরাপদে থেকে পড়াশুনা করতে পারে। কিন্তু এ ঘটনার পর আমরা খুবই মর্মাহত ও উদ্বিগ্ন। এদের শুধু হোস্টেল থেকে বের করে দেয়া নয়, দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির দাবি জানান। কর্তৃপক্ষ যদি দোষী ছাত্রদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা না নেয় তাহলে আমরা আইনের আশ্রয় নিতে বাধ্য হব।

ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ লেফটেন্যান্ট কর্নেল রেজাউল ইসলাম রেজা বলেন, ছাত্ররা একজন আরেকজনকে প্রহার করা কোনো ভাবেই কাম্য নয়। প্রাথমিক ভাবে দোষী ছাত্রদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি। তারা এইচ.এস.সি পরীক্ষার্থী হওয়ায় তাদেরকে প্রতিষ্ঠান থেকে বের করে দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। তবে ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের ঘটনা না ঘটে সে ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, বান্দরবান ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের মোবাইল ব্যবহার করা নিষেধ থাকলেও কতিপয় ছাত্র  গোপনে মোবাইল ব্যবহার করে আসছিল দীর্ঘদিন ধরে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন